আবারো এসো ফিরে, বিশ্বকাপের সুর নিয়ে
আবারো এসো ফিরে, বিশ্বকাপের সুর নিয়ে - ছবি : সংগৃহীত
প্রেমিকার বিদায়ে ভালোবাসার ভাঙনে, প্রেম বিরহে প্রেমিক মন যেভাবে আনমনে ঠুকরে কেঁদে উঠে, আজ আমি যেন তারই অনুভূতি খুঁজে পাই বেদনাবিধুর এই হৃদে। তাতে রক্তক্ষরণ চলছে, মন ভেঙে খানখান হয়েছে। কালো মেঘ আঁধার করে যেন নেমে এসেছে আমার ঘরে। রাত কাটে নির্ঘুমে, বোবাকান্নায় অশ্রু ঝরে। সিক্ত চোখ ছুটে যায় ঘড়ির কাটায়, তাকে খুঁজে ফিরি টিভি পর্দায়। কিন্তু হায়! সে কোথায়?
এই তো সেদিন তুমি আনন্দের ফোয়ারা ছুটিয়ে এসেছিলে আমার এই এলোমেলো জীবনে। মাস খানেকের ব্যবধানে এই বছরেরই ১১ জুনে। রাতের ঘড়ির কাটা তখন একটার ঘরে, তুমি পা রেখেছিলে ইতালির রোমে। অতঃপর এই এক মাসে টুকরো টুকরো বর্ণালী মুহূর্তে আমার এই ছোট্ট হৃদয়ে তুমি গড়ে দিয়েছ এক বিশালকার স্মৃতি সম্ভার। চোখ বুজলেই তা যেন ভেসে বেড়াচ্ছে সম্মুখে, আহা... তোমাকে নিয়ে মেতেছিলাম কত খুনসুটিতে!
তোমাকে নিয়ে কত ভাবনা ছিল এই মনে। তোমার রূপের মুগ্ধতা নিয়ে কতো কথা বলেছি ঘরে-বাইরে। কতো চায়ের কাপে উঠে এসেছ তুমি, কত আড্ডায় তো তুমিই মধ্যমনি। কিবোর্ডের কলমে তোমাকে নিয়ে লিখেছি কত গল্প, ফুটিয়ে তুলেছি তোমার ইতিকথা। তবুও স্বার্থপরতা দেখিয়ে চলে গেলে আমাকে একা ফেলে। অবশ্য ভুলটা আমারই ছিল তোমাকে আপন ভেবে। তুমি তো যাওয়ারই ছিলে, যাওয়ার জন্যই এসেছিলে...
আমি তো বলে দিলাম আমার হৃদয়ের কথা, বলে তো দিলাম অনুভব করছি কতটা ব্যথা। কিন্তু আপনি, আপনার অবস্থা কী? মাস খানেকের উত্তেজনা শেষে ফুটবল উন্মাদনার বিদায়ে, আপনার মনে কি শূন্যতা আসেনি, বিষাদ ভর করেনি? একটি বারও কি তারে মিস করেননি? বিনিদ্র রাত্রিতে একবারও কি ভাবনায় আসেনি, মন বলে উঠেনি আফসোসের সুরে ‘যদি একটা ম্যাচ থাকতো আজকে রাত্রিতে'?
আপনার সমর্থিত দল সফল হলে অভিনন্দন। আর ব্যর্থতায় ডুবলে হতাশায় মুখ আঁধার করার কি প্রয়োজন? সফলতা আর ব্যর্থতা মিলেই তো এই জীবন। ব্যর্থতা না এলে সফলতার স্বাদ বুঝব কী করে? নইলে তো সফলতা মূল্য হারাবে। একই কাতারে একই অবস্থানে একই সাজে সফলতা আসলে জীবনে উন্নতি আসবে কী করে? তাছাড়া পরাজয় না থাকলে জয়ী হবেন কী করে? জয়ের জন্যেই তো পরাজয়ের প্রয়োজন। যদিও তা প্রতিপক্ষের।
আপনার প্রতিপক্ষ কে, তা জানতে দাঁড়িয়ে যান একটি আয়নার সম্মুখে। একটি ঘুষি তুলে দেখুন, দেখুন ফিরে আসে কিনা একই পথে। হ্যাঁ, তারই মতো আমরাই আমাদের প্রতিপক্ষ। আপনার সমর্থনের বিপরীতে যারা তারা যেমন আপনার প্রতিপক্ষ, তেমনি আপনিও কিন্তু তাদের প্রতিপক্ষ। সুতরাং আপনার মন খারাপে অন্য কেউ হাসবে, কিংবা তার মন খারাপে আপনার মুখে হাসি ফুঁটবে। এটাই জগতের অমোঘ নিয়ম। এটাই মানতে হবে, অন্যথায় এতো দলের ভেতরে একজন সেরা কিভাবে বের হবে? একজনকে শেষ হাসি হাসতে হলে যে বাকি সবার কাঁদতেই হবে। হোক তা একেবারে শুরুতে কিংবা রানার্সআপ নামেতে।
যাহোক, মাসজুড়ে ইউরো আর কোপার প্রখর উত্তাপে নিস্তেজ বিশ্ব যেন বিশ্ব যেন খুঁজে পেয়েছিল নিজেকে। কোপার হলুদ-নীলের দ্বৈরথ বাদে ইউরোর ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, বেলজিয়ামের মতো বড় দলগুলো মাঠে নেমেছিল একই সময়ে। অপেক্ষাকৃত ছোট দলগুলোর রূপকথা লেখার সংকল্পে বেশ আগ্রাসন নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়াও বেশ উদ্দীপনা এনে দিয়েছে করোনায় কম্পমান নিস্তব্ধ বিশ্বে। সাথে মেসি, রোনালদোর মতো বড় নামও জৌলুস ছড়াচ্ছিল মাসজুড়ে। করোনা সংক্রমণ রোধে কোপা আমেরিকা দর্শকহীন ধু-ধু মাঠে গড়ালেও, ইউরোতে সাধারণ দর্শকের প্রবেশাধিকার থাকায় সময়টা যেনো আরও বেশী রঙ ছড়াচ্ছিলো।
ধন্যবাদ ফুটবল। তুমি ছিলে বলেই গোটা বিশ্ব সব ভুলে তোমাতেই সুখ খুঁজেছে৷ করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে এতোটা উন্মাদনায় ভাসিয়ে সামান্য হলেও সুখানুভূতি দেয়ায় কৃতজ্ঞতা তোমার তরে। তুমি ছিলে আমার বিনিদ্র রাতের সঙ্গী। তাই তো তুমিহীন মনটা আনচান করে। আবারো এসো ফিরে, বিশ্বকাপের সুর নিয়ে। নিশ্চয়ই পৃথিবী তত দিনে সুস্থ হবে।