ভারতীয়দের তালেবান ভীতির একটি কারণ

নজরুল ইসলাম টিপু | Jul 12, 2021 07:14 pm
ভারতের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীকে তালেবান ভালোভাবে নেয়নি

ভারতের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীকে তালেবান ভালোভাবে নেয়নি - ছবি : সংগৃহীত

 

২০০১ সালে তালিবানের পতনের পর পাশ্চাত্য বিশ্ব সাহায্যের বুলি আওড়িয়ে, আফগান সরকারের প্রতি খাদ্যদ্রব্যসহ নানাবিধ সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়ায়। লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায় করা, বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা এবং তাদের স্থলাভিষিক্ত এনজিওগুলোকে ত্রাণদাতা হিসেবে পরিচিত করা। বাংলাদেশের বিখ্যাত এনজিও ব্র্যাক ওই সুবাদেই আফগানে ঢোকার সুযোগ পায়। তাদের অনেক কর্মকর্তা সেখানে কর্মরত।

কৌতূহলের বিষয় হলো, অন্যরা খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে আফগানে হাজির হলেও, ভারতের সাহায্যসামগ্রী ছিল ভিন্ন ধরনের! তারা হাজির হয়েছিল হিন্দি সিনেমার হাজারো রেকর্ড নিয়ে! সাথে নিয়ে গিয়েছিল বিশাল আকৃতির টিভি স্ক্রিন। তখনকার দিনে পাতলা এলইডি টিভি সর্বসাধারণের জন্য বাজারে আসেনি। তবে পেটমোটা টিভির আকৃতি কমিয়ে এক বিশেষ ধরণের টিভি বাজারে এসেছিল, যার দাম ছিল আকাশচুম্বী। চারদিকে স্পিকার সেট করে, হোম থিয়েটার নামে এসব টিভি ধনীদের ঘরে ঠায় নেয়া শুরু করেছিল মাত্র।

ভারতের পক্ষ থেকে এমন উচ্চমানের টিভি সরবরাহ করা হয়েছিল গরীব আফগানদের জন্য! শহরের মোড়ে মোড়ে স্থাপিত বিশাল স্ক্রিনের এসব টিভিতে ভারতীয় সিনেমা চলত। আফগান ছেলেরা জটলা পাকিয়ে তন্ময় হয়ে সেসব দেখত! এর ফলে তারা হিন্দি ভাষাটিও মোটামুটি রপ্ত করে ফেলে! তালেবান শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলে, আফগান সংস্কৃতির সাথে মানানসই নয়, এমন ছবি গেলানোর সুযোগ ভারত মোটেও হাতছাড়া করেনি। এটাই ছিল ভারতে পক্ষ হতে উল্লেখযোগ্য অবদান।

পালিয়ে বেড়ানো তালেবান যোদ্ধারা এটা মোটেও বরদাশত করেনি এবং তখনকার প্রেক্ষাপটে তাদের করণীয় কিছু ছিল না। তবে তারা ভারতের এই সিনেমা কর্মকাণ্ডকে আফগান তরুণদের চরিত্র বরবাদ করার দীর্ঘমেয়াদি ফন্দি হিসেবে বিবেচনা করে। তাদের ধারণা ছিল, আফগানিস্তানের মানুষের হৃদয় থেকে ইসলাম ধর্মের প্রভাব কমাতে, সিনেমা কাণ্ড বিরাট ভূমিকা রাখবে। ভারতীয় থিংক ট্যাংক জেনে বুঝেই এমন কাজের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। ভারতের এই প্রচেষ্টা একেবারে ব্যর্থ হয়নি! এখন আফগানের যুবকেরাও ভারতীয় স্টাইলে হিরো সাজে, সিনেমা বানায়!

ভারত এসব কাজ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় থেকে। এখন ওই যুক্তরাষ্ট্রই আফগানিস্তান থেকে সরে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই তাদের বেশির ভাগ সৈন্য সরে গেছে। অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনীও সরে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাগরাম ঘাঁটি থেকে যেভাবে সরে গেল, সেটাকে অনেকে বলছে, তারা রাতের আঁধারে আফগান থেকে পালিয়ে গেছে। আর আমেরিকার এই পলায়নে বর্তমান পরিস্থিতি পুনরায় ব্যাপকভাবে তালেবানের পক্ষে যেতে শুরু করেছে। যেখানে তালেবান মোটামুটি শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করছে, সেখান থেকেই তড়িঘড়ি করে ভারতীয় কর্মকর্তারা পালিয়ে যাচ্ছে! অবস্থা এমন তারা নিজেদের জিনিষপত্র নিয়েও ফিরতে পারছে না। ঠিক আমেরিকার মতো করে, গতকাল কান্দাহারের ভারতীয় কনসুলেটের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রাতের আধারে সটকে পড়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে করে তারা দেশে ফিরে এসেছে।তারা বুঝে নিয়েছে যে তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে, তালেবান হয়ত তাদের ক্ষমা নাও করতে পারে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us