কাবুল দখল করবে না তালেবান?
আফগান তালেবান - ছবি : সংগৃহীত
তালেবান পরিকল্পনার রূপরেখা
১১ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার নিশ্চিত হবার পর তালিবান আগস্টে অন্তবর্তী ব্যবস্থার আলোচনায় লিখিত শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তালিবানের স্পষ্ট বক্তব্য আসার পর অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়ে আশঙ্কার কিছুটা অবসান ঘটছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ধরন কী হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু প্রকাশ করা না হলেও প্রাপ্ত আভাস অনুসারে সব দল মতকে সমন্বিত করে একটি জিরগা বা সংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব থাকবে তালিবানের পক্ষ থেকে। প্রস্তাব অনুসারে তালিবানের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী পূনর্গঠন করা হবে। তবে সরকারের উপর তালেবানের একক নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এমন একজন ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্র পরিচালনা পরিষদের প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হবে যিনি তালিবানের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও তাদের নিজস্ব কেউ হবেন না। জাতিগতভাবে সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকবে। প্রাদেশিক সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। চার বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পূনর্গঠন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার একটি সংবিধান ও কাঠামো ঠিক করবে অন্তবর্তী সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, তালিবান হিসেবে পরিচিত ‘ইসলামী অ্যামিরেটস অব আফগানিস্তান’ আগামী মাসে লিখিত প্রস্তাব আসার আগেই কাবুলের বাইরের প্রায় সব অঞ্চলের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। তালিবান রাজধানী কাবুলে কোনো অভিযান পরিচালনা করবে না। এর মধ্যে আফগানিস্তানের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ অঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে বলে চলে গেছে উল্লেখ করা হচ্ছে। বাকিগুলোও দ্রুত তালিবানের নিয়ন্ত্রণে আসছে। সর্বশেষ কান্দাহার দখলের জন্য তালেবানের অভিযানের মুখে সেখান থেকে ভারতীয় মিশনের সব কর্মকর্তাকে বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। সরকারি বাহিনী তালেবান যোদ্ধাদের হাতে অস্ত্র সমর্পণ করে ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে বাড়ি চলে যাবার ভিডিও প্রকাশ হচ্ছে একের পর এক।
রয়টার্সের এক রিপোর্টে বলা হয়, তালেবান আগামী আগস্টের গোড়ার দিকে আফগান সরকারকে একটি লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এক তালেবান মুখপাত্র এই বার্তা সংস্থাকে বলেছে যে, তারা বিদেশী বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে থাকার সাথে সাথে দেশের প্রধান ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছে। সমস্ত বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মূল আফগান ঘাঁটি বাগরাম খালি করায় আফগান সরকারি বাহিনীর মনোবল একবারেই ভেঙ্গে পড়েছে।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ রয়টার্সকে বলেছেন, 'আগামী দিনগুলিতে শান্তি আলোচনা এবং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে ... এবং তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই এটি হবে শান্তির পরিকল্পনা সম্পর্কে।'
আফগানিস্তানের শান্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিয়া আনোয়ারি আন্তঃ-আফগান আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছিলেন যে তালেবান রাষ্ট্রদূতরা এ প্রক্রিয়াটি প্রত্যক্ষভাবে শুরু করছে বলে তার সরকারের প্রতিনিধিরা ‘অত্যন্ত খুশি’।
২ ট্রিলিয়ন ডলার খরচে মুষিক প্রসব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে চারটি বিষয় ছিল, যার মধ্যে রয়েছে, সহিংসতা হ্রাস করা, বিদেশী সেনা প্রত্যাহার করা, আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করা এবং গ্যারান্টি দেয়া যে আফগানিস্তান আবারো উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়ে পরিণত হবে না।
এ চুক্তিটি দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তির প্রথম পদক্ষেপ যাতে দুই লক্ষের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু তা থেকে কী অর্জন হয়েছে তা কোনো হিসাবে মিলছে না।
যদিও বেশিরভাগ আফগান শান্তিপ্রক্রিয়াকে সমর্থন করছে, তবু আফগানিস্তানের আলোচনার সময় অনেক বিষয় কার্যকর করা বাকি রয়েছে, যেমন ক্ষমতা ভাগাভাগি, নিরস্ত্রীকরণ এবং তালেবান যোদ্ধাদের সমাজ পুনর্নির্মাণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নির্ধারণ এবং সংবিধান প্রণয়ন।