মুভি রিভিউ : আস-সালামুআলাইকুম বেইজিং
আস-সালামুআলাইকুম বেইজিং - ছবি : সংগৃহীত
এক স্নিগ্ধ মধুর ভালোবাসার গল্প। সাথে আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া। যে কারো মন ছুঁয়ে যাবে নিঃসন্দেহে। বলছি ইন্দোনেশিয়ান লেখক আসমা নাদিয়ার লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত মুভি আসসালামুয়ালাইকুম বেইজিং-এর কথা ।
পরিচালক : গুন্টুর সোহরজন্তো
প্রযোজক : ইয়োন কে।
লেখক : আসমা নাদিয়া
মুক্তির তারিখ : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ব্যাপ্তি : ৯৫ মিনিট
ভাষা : ইন্দোনেশিয়া
আইএমডিবি রেটিং : ৭.২
যার কথা মনে হলেই অনুভূত হয় পবিত্রতা, স্নিগ্ধতা, ভালোলাগা তাকেই তো প্রিয় মানুষ বলা যায়। যার হাত ধরে পাড়ি দেয়া যায় সাত সাগর আর তের নদী। এহেইয়ের মতো প্রচণ্ড ভালোবাসাই তো পারে প্রিয় মানুষটি মূর্তিতে পরিণত হওয়ার পরও আশাহত না হয়ে ভালোবাসায় বুক ভাসাতে, বারবার ডেকেও উত্তরের পরিবর্তে প্রতিধ্বনি শুনে হতাশ না হয়ে বরং আশায় ভরপুর হতে। এহেই ভালোবাসার টানে আশিমার মূর্তির কাছে গিয়েছিল বারবার, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
আর সেই একই অনুভূতি দেখা যায় জংওয়েনের মাঝেও। তাই তো সে দেওয়ার মতো চলে না গিয়ে শেষ পর্যন্ত পাশে থেকেছে আসমার। চীনা জংওয়ানের এমন ভালোবাসা ইন্দোনেশিয়ার আসমাকে মৃত্যুর পথযাত্রী থেকে করেছে জীবনের পথযাত্রী, স্বপ্ন দেখিয়েছে বেঁচে থাকার।
মুভির কাহিনী
গল্পটা একটু ভিন্ন রকম। কারণ গল্প-উপন্যাস কিংবা মুভিই হোক- তাতে সামান্যই কোনো প্রাক্টিসিং মুসলমানের জীবনচিত্র দেখি। ব্যতিক্রম এই কারণেই যে- এতে গল্পটা ব্যাপ্ত হয়েছে সর্বদা দ্বীন পালনে তৎপর আসমাকে ঘিরে। সে তার বিয়ের আগে জানতে পারে তার হবু স্বামীর অন্য এক নারীর সাথে সম্পর্ক অনেক দূর গড়িয়েছে। যা তাকে ও তার পরিবারকে ভীষণভাবে পীড়া দেয়।
আর ওই বেদনা থেকে উত্তরণে তার পরিবার তাকে চীনের বেইজিংয়ে বান্ধবী সেকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে বান্ধবী তার জন্য একটা চাকরি ঠিক করে রাখে। আসমা সেখানে একটা গবেষণার কাজ করে। তার গবেষণার বিষয় ছিল চীনে মুসলিমদের জীবনধারা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আসমা তার ডকুমেন্টারির শিরোনাম দেয়- 'আসসালামুয়ালাইকুম বেইজিং।' ওই নামে মুভির নামকরণ।
কাজের জন্য আসমাকে ঘুরে বেড়াতে হয় বেইজিংয়ের পথে-ঘাটে। যেখান থেকে আমরা বেইজিংয়ের নানা ইতিহাস, স্থাপত্যকলা ও সেখানে থাকা মুসলিম স্থাপত্য ও মসজিদ এবং মুসলিমদের সম্পর্কে বেইজিংয়ের লোকদের অভিমত জানতে পারি। আসমার মতো আমরাও অবাক হয়ে যাই মুসলিমদের সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক মনোভাব দেখে। এবং বেইজিংয়ে ২.৫ লাখের মতো মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাসের কথা শুনে।
দর্শককে একে একে চীনের মহাপ্রাচীর, বেইজিংয়ের প্রাচীন মসজিদ, সূর্য ঘড়ি, টেম্পল অফ হেভেন, টেম্পল অফ আর্থ, সিল্ক রোড ইত্যাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আসমার ট্যুর গাইড জংওয়েন। সে তার গ্রাম ইউনানের এক ঐতিহাসিক চরিত্র আশিমার মূর্তির নামানুসারে আসমাকে আশিমা বলে ডাকত। আসমাকে ওই মূর্তিও দেখাতে চেয়েছিল জংওয়েন।
কিন্তু APS (Anti Phospholipid Syndrome) রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্দোনেশিয়া ফিরে আসায় তা সম্ভব হয়নি আসমার পক্ষে। এই সময়ে জংওয়েনের মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রথমে জংওয়েনকে দেখা যায় আল্লাহর উপর বিশ্বাস থাকলেও সে ধর্ম নিয়ে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু আসমার সংস্পর্শে এসে তার ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহ জাগে।
আর তাই আসমা যখন ইন্দোনেশিয়া চলে আসে তখন জংওয়েন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছ থেকে ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে জেনে নেয়। যার মধ্যে এক সাহাবী মুসাইব ইবনে উমাইরের দ্বীনের জন্য সবকিছু ত্যাগ তাকে মুগ্ধ করে। আর জংওয়েন শাহাদা পাঠ করে মুসলিম হয়। আর ইসলামই আসমা ও জংওয়েনকে একসূত্রে গেঁথে দেয়।
অনুভূতি :
ভালোবাসা হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া এক নেয়ামত স্বরূপ। দেওয়া আসমাকে ভালোবাসার কথা বললেও আসমার জীবনের ক্রান্তিকালে সে পাশে থাকেনি। আর জংওয়েন আসমাকে ভালোবেসে তার পাশে ছিল সবসময়। আসমার প্রতি মুগ্ধতা, আসমার নিজ ধর্মের প্রতি অবিচলতা জংওয়েনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে। জংওয়েনের চারিত্রিক দঢ়তাও বেশ প্রশংসনীয় এবং আসমার প্রতি তীব্র ভালোবাসা নাড়া দেয় দর্শকের হৃদয়ের গভীরে।
জংওয়েন এমন সময় আসমাকে বিয়ে করে যখন আসমা তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু জংওয়েন আসমাকে শুধু ইহলোকে নয় পরলোকেও সঙ্গ দিতে চেয়েছিল। আমার কাছে এই মুহূর্তকেই মুভির চুম্বকাশ মনে হয়েছে। যখন জংওয়েন বলে - তুমি কি আমার সাথে জান্নাতে যেতে চাও?'
দর্শক হৃদয়কে গভীরভাবে আন্দোলিত করে জন্ম,মৃত্যু আর বিয়েকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে আসমা ও জংওয়েনের জান্নাতের পথে অগ্রযাত্রা হয়ে উঠে মুভির মূল সুর। যা তৈরি করে অনাবিল স্নিগ্ধ এক অনুভূতি।