তুরুপের তাস হরমুজ প্রণালী
তুরুপের তাস হরমুজ প্রণালী - ছবি : সংগৃহীত
হরমুজ প্রণালী একটি সরু জলপথ যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগর পূর্বের ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ইরানকে পৃথক করেছে। ৩৪ কিমি দীর্ঘ এ প্রণালীটির দুটি লেন আছে দুই মাইল প্রশস্ত হয়ে।
পৃথিবীর পাঁচ ভাগে এক ভাগ জ্বালানি আসে এই হরমুজ প্রণালী থেকে, প্রতিদিন এক কোটি নব্বই লক্ষ ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়।
এটা খুব ভালোভাবে প্রমাণিত যে পারস্য উপসাগর থেকে হরমুজ প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো এলাকার বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইরান।
আমেরিকা ও ইরান সঙ্কট
মার্কিনিরা ইরান হামলা করবে করবে বলে, কিন্তু হামলা করছে না। কেন? আমেরিকা ও ইসরাইলের টিগারে যতই শক্তি থাকুক না কেন, ইরানের ওপর হামলা চালাতে এখনো তাদের হৃদকম্প দেখা যায়।
কারণ ইরান বলেছে, তাদের তেল রফতানিতে আমেরিকা যদি কোনো বাধা দেয় তাহলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে কোনো তেল রফতানি করা যাবে না। হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন বন্ধ করে দেবে।
হরমুজ প্রণালী অশান্ত হয়ে উঠলে পৃথিবীর জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে, যা আমেরিকা কখন প্রত্যাশা করে না।
হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত বেশির ভাগ তেল যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যায়। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ এশিয়াতে আসে। ফলে এসব দেশ বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপ, চীন, জাপান ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে এবং আমেরিকার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে।
সম্প্রতি মার্কিনরা ইরানের হুমকি হরমুজ প্রণালীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের ১১ দেশে (ইরান ছাড়া) ৩০টির বেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এতে ৭০ হাজার সৈন্য রয়েছে। তাছাড়া বাহারাইনে রয়েছে ৫ম নৌবহর।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট আবু মুসা দ্বীপ। হরমুজ প্রণালী প্রবেশপথে অবস্থিত এই আবু মুসা দ্বীপ। এই দ্বীপ যে শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম সে শক্তির পক্ষে এ অঞ্চলে রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করা সহজ হবে।
১৯৭১ সালে ইরান এটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার এই দ্বীপকে নিজেদের করে নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা নিয়মিত আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমায় নৌবহর দিয়ে মহড়া চালাচ্ছে। তাছাড়া ইরানের ওপর বিভিন্ন সময়ে আঞ্চলিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
এ থেকে বোঝা যায়, হরমুজ প্রণালী বিশ্বের দরবারে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজে পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশগুলো বুঝতে শিখে ফেলছে ইরানকে ছাড়া এই অঞ্চলে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা