মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গুঞ্জন ও বিবিধ সমাচার
মাহমুদউল্লাহ - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল মাঠে নেমেছে আর একাদশ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়নি এমন সুখকর মুহূর্ত খুব কমই এসেছে। অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে। সব থেকে বড় কারণ ধারাবাহিকতা। ধারাবাহিক পারফর্ম করলে দলে কারো জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠানোর সুযোগ কি আর পাওয়া যাবে? যাই হোক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান টেস্টের একাদশ ঘিরেও নানা আলোচনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনাটা প্রাপ্যই বটে।
সমালোচনাটা আরো তীব্র হতো, যদি না ২২৫ রানে ৩ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে দলটা ২৭৬ -এ অল আউট না হতো। উইলিয়ামস-আরভিনবিহীন দলটা যে তবুও বাংলাদেশকে কাঁপিয়েই দিয়েছিল। হয়তো আরো খানিকটা সময় কাঁপাতে পারত, যদি না সাকিব আল হাসান দায়িত্ব হাতে তুলে নিত। উইকেটের সংখ্যা হিসাবে যদিও মিরাজ থেকে একটি পেছনে, তবে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্বটা দিয়েছেন সামনে থেকে। যমুনা টেলিভিশন তো নিউজও করেছে 'জিম্বাবুয়ের মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন সাকিব আল হাসান।'
সাকিব আল হাসান। বহির্বিশ্বে বাংলার পরিচয়। তাকে নিয়ে লিখতে গেলে শতাধিক গল্প লেখা যাবে, বলতে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুরোবে। সমর্থক বা সমালোচক সবাইকে একই সুতোয় আবদ্ধ করা এক ব্যক্তি তিনি, ৪৭ হাজার লাল-সবুজ বর্গমাইলের হাজারো রাত্রি জাগরণের উপলক্ষ তিনি। অসংখ্য উপমা দিলেও বুঝে আসবেনা তার মহত্ব। কারণ তিনি সূর্যের তীব্র প্রখর তাপদাহে ক্লান্ত দেহের পিপাসিত হৃদের এক পশলা বৃষ্টি। তা কিভাবে, বলব একদিন অন্য সময়ে।
বাংলার ক্রিকেটের এই সুপারস্টারের ব্যাট হাতে সময়টা খুব বাজে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে বিস্ময়কর পারফর্মের পর নিষেধাজ্ঞায় ব্যাট হাতে মরিচা ধরেছে। অনুশীলনের পর অনুশীলন আর কঠোর চেষ্টাতেও তা দূর হচ্ছে না। তবে বল হাতে সাকিব যে স্বাভাবিকই আছেন তা বুঝাতে জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে নেয়া ৪ উইকেটই যথেষ্ট। তবে নামটা যখন সাকিব আল হাসান, তখন শুধুই কি বল হাতে তৃপ্তি আসে? প্রার্থনা রইল মন ভরে, সাকিব ফিরুক স্বরূপে।
এক সময়কার শক্তিধর জিম্বাবুয়ে কালের পরিক্রমায় রাজনৈতিক অপব্যবহারে আজ দুর্বল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। প্রতিপক্ষ তাদের ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অর্জন বৃদ্ধি করতে। তবে সময়ে সময়ে নিজেদের জানান দিতে গর্জে ওঠে তারা। আক্রমণ করে বসে হঠাৎ করে। এই যেমন চলতি টেস্টের প্রথম দিনেই ১৩৬ রানেই বাংলাদেশের ৬টি উইকেট তুলে নিয়েছে৷ তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ-লিটন জুটি। লিটনের জন্য আফসোসই হয়, সুন্দর করুণ সমাপ্তি। আউট হয়েছেন ৯৫ রান করে। ফলে বেচারা রান করেন কিন্তু স্বীকৃতি জুটেনা।
তবে মাহমুদউল্লাহ অন্য ধাতুর। যিনি পুড়তে পুড়তে খাঁটি হয়েছেন। ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে দারুণ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। কি সাবলীল ব্যাটিংই না করেছেন। সুন্দর সন শট খেলেছেন। বুঝে শুনে এগিয়ে গেছেন। তার দারুণ ইনিংসটা শেষ হয়নি, কিন্তু দলীয় ইনিংস শেষ হওয়ায় ফিরতে হয়েছে অপরাজিত থেকে। অথচ ম্যাচের আগে কতো নাটক তাকে নিয়ে। ছিলেনই না টেস্ট দলে। তবে শেষ মুহূর্তে অজানা কারণে হঠাৎ অন্তর্ভুক্তি তার। তবে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন ৮ নাম্বারে।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যাকে বলা হয় বাংলার ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলার। সত্যিই তো তাই। সাকিব, তামিমকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, তার খানিকটাও কি হয় তাকে নিয়ে? হালের মিরাজ, তাসকিন থেকেও তো তিনি পিছিয়ে। তবে একটা দিকে তিনি এগিয়ে, তা হলো তাকে প্রশ্ন তোলা! হ্যাঁ, সিনিয়রদের মাঝে সব থেকে বেশি নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তো তারই উঠে। অথচ ইতিহাস বলে, বাংলার ক্রিকেটের সব বড় বড় জয়ের অন্যতম সেরা চরিত্র তিনি। সুখকর সব মুহূর্তের গোপন কারিগর তিনি। আড়াল থেকেই দিয়ে যান সাধ্যের সবটা। সময়ের সেরা পার্শ্ব চরিত্র বললেও ভুল হবেনা।
এই লেখাটা যখন লিখছি, তখন বাংলার ক্রিকেট নন্দনে গুঞ্জন উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে, সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে নাকি বিদায় বলতে চলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে এখনো অফিশিয়াল ঘোষণা আসেনি। দেখা যাক কী হয়...তবে প্রার্থনা রইল তার জন্য। যেখানেই থাকুন, যেভাবেই থাকুন আপনি থাকবেন হৃদয় গহীনে। নিঃসন্দেহে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সেরা সময়টাই কাটাচ্ছিলেন আপনি। আর গ্রেটরা সব সময় শেষের জন্য সেরা সময়টাই বেছে নেয়।
রিয়াদের অবসরের খবর এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে মিরাজের কীর্তিটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারের ৮ম বার পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয়বার। অভিনন্দন মিরাজ। অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। এখন বলি তাসকিনকে নিয়ে। ব্যাট হাতে যতটা দারুণ করেছেন বল হাতে বলতে ততটাই মলিন বলা চলে। পেয়েছেন মাত্র এক উইকেট। যদিও নিজেকে প্রমাণে আরো একটা ইনিংস পাবেন এই পেসার। আশা করি শ্রীলঙ্কা সিরিজের মতো কাঁপিয়ে দেবেন নিজ আগ্রাসনে। শুভকামনা রইলো বাকিদেরও জন্যে।