আমেরিকার সাথে তালেবানের বিরোধ
আমেরিকার সাথে তালেবানের বিরোধ - ছবি : সংগৃহীত
তালেবানের উত্থান নতুন সমীকরণ সামনে নিয়ে আসে সেই সাথে আল কায়েদার বৈশ্বিক জিহাদি তৎপরতা। আমেরিকার প্রতি খোলা চিঠি দেয় সংগঠনটি। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের আমন্ত্রণে আমেরিকান সেনা মধ্যপ্রাচ্য প্রবেশ করে। যা ছিল রাসূল সা.-এর করা নির্দেশের স্পষ্ট পরিপন্থী। সকল সৈন্য প্রত্যাহার করাসহ আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি। ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে সহায়তা করতে নিষেধ করার কথাও বলা হয়। তা না করলে মার্কিন স্বার্থে সামরিক হামলা চালানোর হুমকি দেয়া হয়।
এই সমস্ত প্রেক্ষাপটে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন তালেবানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তালেবান সরকার তাতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আমেরিকান কোনো কোম্পানিকে বিনিয়োগের নূন্যতম সুযোগ দিতেও তালেবান রাজি ছিল না। কারণ তালেবান আমেরিকাকে শুরু থেকেই সন্দেহের চোখে দেখত। এমনকি ইউনিকোল কোম্পানির গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে তালেবান সরকারের সাথে কোনো অবস্থাতেই সমঝোতায় পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে তালেবানকে সামরিক হামলার হুমকি পর্যন্ত দিতে থাকে আমেরিকা।
অনেকেই বলে থাকে, তালেবানের এমন আচরণের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক হামলার বাহানার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এর মধ্যেই ঘটে যায় ইতিহাসের দৃশ্যপট পরিবর্তনের অকল্পনীয় ৯/১১-এর টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনা। এর আগেও সুদান, কেনিয়া, তানজানিয়া, সোমালিয়াসহ অনেক দেশে মার্কিন দূতাবাসে এবং মার্কিন স্বার্থে হামলার ঘটনা ঘটে।
কিন্তু ৯/১১সহ সকল হামলা কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় হচ্ছে তা হয়ত সিআইএ অনুমান করতে পেরেছিল। কিন্তু তাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ ছিল না, যা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা রাষ্ট্রকে দায়ী করার জন্য যথেষ্ট ।
কিন্তু ৯/১১ হামলা তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। এটা ছিল প্রতাপশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গালে চপেটাঘাত করার সমান। কারণ তারাই বলে বেড়ায় যে তারা বিশ্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। যদিও এই নিরাপত্তার আওতায় কোনো মুসলিম ভুখণ্ড ছিল না। উল্টা মুসলিম ভূখণ্ডে দস্যুবৃত্তি চালাত সহযোগী পশ্চিমাদের সাথে নিয়ে।
আফ্রিকার খনিজসম্পদে ভরা মুসলিম দেশগুলোকে শোষণ করে আসছে স্বাধীনতা, সভ্যতার বুলি আউরিয়ে। ফিলিস্তিনে বুকে আগুন জ্বলছে প্রায় শতাব্দী ধরে, ইউরোপের মুসলিম ভুখণ্ডে মুসলমানদের রক্তে হলি খেলা শুরু করেছে নব্য ক্রুসেডাররা। অথচ শান্তি নিরাপত্তার ধব্জাধারী জাতিসঙ্ঘের কোনো হাঁকডাক চোখে পড়ত না।
এই দীর্ঘ প্রায় এক শ' বছরের মধ্যে মুসলিদের কোনো অর্জন চোখে পড়ে না। সামরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক আর না আছে জ্ঞানে বিজ্ঞানে। তাদের আষ্টেপৃষ্টে যেন বেঁধে রেখে বলা হচ্ছে তোমরা স্বাধীন। নিষ্ঠাবান মুসলিম নেতা, বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মীরা, কেউ রেহাই পায়নি মোসাদের প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় টার্গেট কিলিং থেকে। মুসলিমদের নেতৃত্বহীন করে রাখাই তাদের প্রধান এজেন্ডা। সেই সাথে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তাদের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা। এত সব অনাচার কোনো সচেতন মুসলিমের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। আর এই সমস্যাগুলো তাদের প্রণীত পুঁজিবাদী গণতন্ত্র কিংবা লিবারেল দর্শনের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েও সমাধান করা সম্ভব না।