ল্যাজেগোবরে মোদি সরকার, ভারতের ২০ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি
ল্যাজেগোবরে মোদি সরকার, ভারতের ২০ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি - ছবি : সংগৃহীত
ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে ওই দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বাতিল হয়েছে চুক্তি। তার উপর ফ্রান্স থেকে আসছে একের পর এক ধাক্কা। ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে। রাফাল এয়ারক্র্যাফট কেনাবেচা নিয়ে কমিশন দেয়াসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দফতর। ওই অস্বস্তির প্রভাবে ভারতে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে রাফাল বিতর্ক।
তার মধ্যেই এবার ওই প্যারিস থেকে এসেছে নতুন সঙ্কটের বার্তা। নয়াদিল্লি সরকারের কাছে বকেয়া কর আদায়ে ব্রিটিশ সংস্থা তথা স্কটল্যান্ডের তেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কেয়ার্ন এনার্জিকে ফ্রান্সে ছড়িয়ে থাকা ভারতের ২০টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দিয়েছে প্যারিসের আদালত (ট্রাইব্যুনাল জুডিশিয়ারি দ্য প্যারিস)। ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সংস্থাটি নিজেদের টাকা উশুল করবে। কেয়ার্ন এনার্জির দাবি, ভারতের কাছে তাদের পাওনা মোট ১২ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। আদালতের নির্দেশমতো বুধবারই তারা ভারত সরকারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ, ওই সম্পত্তিগুলো আর নয়াদিল্লি বিক্রি করতে পারবে না। অর্থনৈতিক জগতের পরিভাষায় সেগুলো শুধু যে ‘ক্রোক’ করা হচ্ছে তা-ই নয়, ওই সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে হওয়া যাবতীয় লেনদেনও ভারত সরকারের জন্য ‘ফ্রিজ’ করে দেয়া হয়েছে।
সংস্থাটির বক্তব্য, গত বছর ডিসেম্বর মাসেই ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বিচারপতি টিম রায় দিয়েছিল যে কেয়ার্নের চুক্তিজনিত ক্ষতি ও কর সংক্রান্ত পাওনা সম্পূর্ণ মিটিয়ে দিতে হবে ভারতকে। কিন্তু, তা মেটানো হয়নি। ভারতে থাকা নিজেদের একটি সম্পত্তিকে সংযুক্ত করে এদেশে কেয়ার্ন ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে শাখা চালু করেছিল এই ব্রিটিশ সংস্থা। কিন্তু, পরে তার শেয়ারের অনেকটাই কিনে নেয় বেদান্ত নামক খনি সংক্রান্ত কোম্পানিটি। তার সদর দফতরও লন্ডন। এরপরই কেয়ার্ন থেকে বেদান্তে শেয়ার ট্রান্সফার নিয়ে শুরু হয় কর সংক্রান্ত জটিলতা।
ব্রিটিশ সংস্থাটির অভিযোগ, ব্রিটেন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা চুক্তির লঙ্ঘন করেছে নয়াদিল্লি সরকার। ফলে তাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কর বাবদও যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা ভারতকে মিটিয়ে দিতে হবে বলে দাবি করে কেয়ার্ন। সংস্থাটির বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয় ভারত। পাশাপাশি, কেয়ার্ন আমেরিকাতে পৃথক মামলা করে। কারণ, তাদের লক্ষ্য ছিল এয়ার ইন্ডিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারত সরকারের এই সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বেশি। এয়ার ইন্ডিয়ার সম্পত্তি বিক্রি করার অনুমতি পেলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ হবে বলেই মনে করছিল কেয়ার্ন। এই একই কারণে তারা প্যারিসেও মামলা করে। এবার প্যারিসের ট্রাইব্যুনাল ব্রিটিশ সংস্থাটিকে অধিকার দিয়েছে ফ্রান্সে থাকা ভারত সরকারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার। একই মামলা দায়ের করা হয়েছে আমেরিকা, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মরিশাসেও।
এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ভারত সরকারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে এরকম কোনো নোটিশ পাইনি। নোটিশ এলে আইনি প্রক্রিয়ায় জবাব দেয়া হবে এবং মোকাবিলা করা হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরো দাবি, ভারত সরকার ইতিমধ্যেই মার্চ মাসে একটি পৃথক আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক আদালতে।
অন্যদিকে, কেয়ার্ন কর্তৃপক্ষও নয়াদিল্লির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। ভারত সরকারও চায় বিষয়টি নির্বিবাদে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। এর আগে ভোডাফোনকে কেন্দ্র করে ঠিক একইরকম করজনিত জটিলতা তৈরি হয়েছিল।
সূত্র : বর্তমান