ফুটবলের থ্রিলারেই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট
ফুটবলের থ্রিলারেই শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট - ছবি : সংগৃহীত
ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত বিশ্ব। কোপা-ইউরোর উন্মাদনার উত্তাল স্রোতে হাবুডুবু খাচ্ছে সবে। টান টান উত্তেজনার রোমাঞ্চে হিমশীতল সব মুহূর্তের স্বাদ পেতে গোটা বিশ্ব আজ পলকহীন তাকিয়ে ওয়েম্বল বা ব্রাজিলে। ফুটবলের এমন থ্রিলারে হয়তো অনেকেই ভুলতে বসেছে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল আজ মাঠে নামছে হারারেতে।
জিবে পানি আসা রসময় এমন সব ফুটবল উপভোগের পরে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট ম্যাচ পানসে লাগতেই পারে। কোভিড সমীকরণে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস আর ক্রেইগ আরভিন ছিটকে পড়ায় অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে বাঘেদের জন্য ম্যাচটা খুব সহজই হতে চলেছে। আর তাই তো ম্যাচের জয় পরাজয় ছাপিয়ে তামিম-মুশফিক খেলবেন কিনা, সেই ভাববাটাই বেশি ভাবতে হচ্ছে।
তবে ক্রিকেট চির অনিশ্চয়তার খেলা। যখন যা ইচ্ছে হতে পারে। পচা শামুকে পা কাঁটার ইতিহাস তো বাংলাদেশের সাথে বেশ পোক্তভাবেই জড়িয়ে আছে। তবুও অবস্থা বিবেচনায়, ইঞ্জুরির শঙ্কা মাথায় রেখে তামিম ইকবালকে টেষ্ট হতে বিশ্রাম দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মুশফিকে শঙ্কা থাকলে তাকেও বসানো যেতে পারে। তাতে তাদের জায়গায় তরুণ দুজনের সুযোগ হবে। যা নিঃসন্দেহে দেশের স্বার্থে ভালোই হবে।
ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ সাকিব আল হাসানের জন্য। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পরবর্তী সিরিজে সিরিজ সেরা হলেও ভেতর থেকে সেরাটা আসছিল না বোঝা যাচ্ছিল খালি চোখে। পরে ইঞ্জুরি আর আইপিএল মিলিয়ে বেশ খানিকটা সময় দেশের ক্রিকেট হতে বাইরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু যখন ফিরেছেন তখনো বেশ নিস্প্রভ। এতোটাই বাজে অবস্থা যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলছিলেন। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ পূর্ব প্রস্তুতি ম্যাচে পুরনো সাকিবের দেখা মিলেছে। ব্যাট হাতে সাবলীলতার সাথে বল হাতে ছন্দ মিলেছে। এমন সাকিবকেই তো সবাই খোঁজে।
এই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৭০ রান করলে সাকিবের টেস্ট রান সংখ্যা ৪ হাজারে পৌঁছুবে, আর টেস্ট ব্যাটিং গড়ও ৪০-এ উন্নীত হবে। আর ম্যাচে ৭০ রান করলেই সাকিব পৌঁছে যাবেন আরো এক অনন্য অর্জন, লিখবেন আরো একটি কীর্তি, উঠে যাবেন আরো এক ধাপ ওপরে, সবার শিখরে। সেটা হলো দ্রুত সময়ে ৪ হাজার রান আর ১৫০+ উইকেটের মাইলফলকে। এখন পর্যন্ত এই অর্জনে শীর্ষে থাকা কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার সোবার্সের লেগেছিল ৬৩ টেষ্ট। সাকিব আজকের ম্যাচে ৭০ করলে অর্জনটা পেয়ে যাবেন মোটে ৫৮টি সাদা পোশাকের ম্যাচে।
শুধু সাকিব নয়, সফরটা গুরুত্বপূর্ণ তরুণদের জন্যও। দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেকে গুছিয়ে আনার এক অপার সুযোগ এই ম্যাচটা। সাইফ, সাদমান, শান্তদের জন্য যেমন রানে ফেরার সুযোগ, তেমনি শরিফুল, তাসকিনদের বোলিংয়ের নিজেদের পরিপক্ব করে তোলার মোক্ষম সময়ও বটে। সেই সাথে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাবার উপকরণ পাওয়া যাবে আজকে থেকে শুরু হওয়া টেষ্টে।
এখন পর্যন্ত ১৭ টি টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। ৭ জয়ের বিপরীতে সমান ৭টি হার বাঘেদের অতীতে। বাকি তিন ম্যাচ ড্র। দুই দলের সাদা পোশাকের লড়াইয়ে সব থেকে বেশি রান বেন্ডন টেলরের (১০৬৬), দ্বিতীয় সর্বোচ্চও জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজার (৮৮৩)। অবশ্য পরের ১০ জনের ৮ জনই বাংলাদেশের। যেখানে সবার উপরে মুশফিকুর রহিম (৮৪৬)। বিপরীতে উইকেটের সেরা সংগ্রাহক তাইজুল ইসলাম, ৪১টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের সংগ্রহ ২৬ উইকেট। পরে জার্ভিসের ২৪-ই সেরা।
পরিসংখ্যান তো আর ম্যাচ জেতায় না। বা ক্রিকেট তো কখনো একই পথে চলে না। যেকোনো সময়ই পথ বদলায়, তাইতো সময়ে সময়ে চুনোপুঁটির কাছে রাঘববোয়ালও ধরা খায়। কিন্তু এবার যেন এমন না হয়, আছি সেই প্রার্থনায়। শুভ কামনা রইল বাঘেদের জন্য।