হাসি-কান্নার মাঝে, তৃপ্তির ঢেঁকুরের খোঁজে..

আফফান উসামা | Jul 06, 2021 08:24 pm
হাসি-কান্নার মাঝে, তৃপ্তির ঢেঁকুরের খোঁজে..

হাসি-কান্নার মাঝে, তৃপ্তির ঢেঁকুরের খোঁজে.. - ছবি : সংগৃহীত

 

আর কয়েকটি ঘণ্টার অপেক্ষা মাত্র, অতঃপর দিনের শেষে নতুন দিনের আগমনে উত্তেজনার উত্তাল সাগরে ভাসবে গোটা বিশ্ব। বেজে ওঠবে দামামা। ধক্ ধ্ক বুকে পুরো বিশ্ব আজ তাকিয়ে থাকবে ওয়েম্বলি প্রাঙ্গণে। কারণ, ওখানে যে আজ ফুটবলের মহারণ। মুখোমুখি ইতালি-স্পেন। আপাত দৃষ্টিতে লড়াই শুধুই দুটি দেশের হলেও আদতে তা নয়, লড়াইটা শুধুই দুটি দেশে সীমাবদ্ধ নয়, বরং লড়াইটা দুটি আলাদা ঐতিহ্যের। লড়াইটা ইতালির ‘প্রেসিং’ ফুটবল বনাম স্পেনের ‘পাসিং' ফুটবলের। আর কিছু দিন আগে হলে বলা যেত- লড়াইটা মেসি বনাম রোনালদোর।

শেষ লাইনে অবাক হলেন, বিস্মিত মনে প্রশ্ন আসে ইতালি-স্পেনে মেসি-রোনালদো কিভাবে আসে? উত্তরটা মিলে যেত যদি মেসি এখনো বার্সালোনার থাকত। ফলে মেসি খেলতেন স্প্যানিশ লিগ লা লিগায়, বিপরীতে রোনালদোর অবস্থান ইতালির সিরি আয়। যাহোক যা হবার তা যখন হয়নি, তবে এসব সস্তা যুক্তি ফেলে চলুন আগে বাড়ি...

ইতালি-স্পেন- দুটো দলের কথা মাথায় এলে মনের অজান্তেই মন চলে যায় ২০১২ ইউরোর ফাইনালে, মানসপটে ভেসে উঠে সেই ম্যাচের টুকরো সব স্মৃতি। স্পেনের সাঁড়াশি আক্রমণে ৪-০ গোলে বিদ্ধস্ত হয় আজ্জুরিরা। সেদিন হতে আজ, অতীত হয়েছে ৯টি বছর, কালের বিবর্তনে প্রত্যহ নতুন সূর্যের আগমনে শুভ্র আলোয় মোহিত হয়েছে পৃথিবী। সময়ের চলার পথে জন্ম নিয়েছে সুখ-দুঃখের মিশেলে নানা ঘটনা। তবে ইতালির সাথে যা ঘটেছে, তা বড়ই বেদনাবিধুর নিঃসন্দেহে।

গত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে বুড়ো বুফনের ওই কান্না কে ভুলতে পারে? খুব করে চেয়েছিলেন আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু ভাগ্য বিধাতা বাধ সাধে। যে দলের জার্সিতে জ্বলজ্বল করছে বিশ্বজয়ের চার-চারটি স্মারক, ওই দলই গত বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি। অতিরক্ষণাত্মক ফুটবল, কোচের সাবধানী কিন্তু ছন্নছাড়া কৌশলই কাল হয়েছিল ইতালির জন্য। প্রশ্ন উঠেছিল 'ইতালি হারিয়ে যাবে না তো?

কিন্তু সময়ের সাথে নিজেদের পোড়া মাটির মতো শক্ত করে, শোককে শক্তি বানিয়ে রবার্তো মানচিনির অধীনে হঠাৎই বদলে গেছে ইতালি। দুঃস্বপ্নকে মাটিচাপা দিয়ে দুই বছরে ওরা যেন হারতেই ভুলে গেছে। আর সময়ের সাথে সাথে ফুটবলটাকে ওরা উপভোগ্য করে তুলছে, এমন আক্রমণাত্মক ধারাবাহিক ফুটবল আগে ক'জন দেখেছে? মানচিনির তত্ত্ব একটাই- জিততে হবে, গোল করতে হবে। ড্র বলতে শব্দ নেই তার অভিধানে। সুবাদে মিউনিখের হাইভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে এখন রেকর্ড টানা ৩২ ম্যাচে অপরাজিত আজ্জুরিরা। শুধু বেলজিয়ামই নয়, আসরে কোনো ম্যাচেই হার তো নয়ই ড্রও করেনি মানচিনি বাহিনী।

এত গেল তাদের কাহিনী- এবার স্পেন সম্পর্কেও কিছু বলি...

ইউরোতে নিজেদের শুরুর ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ৮৫ ভাগ বল দখলে রেখেও কিনা পরিসমাপ্তি শূন্য-শূন্যতে। অবাক করা বিষয় হলো, এমন নৈপুণ্যেও এনরিকের শিষ্যরা ম্যাচের মতো মনও জয় করতে পারেনি, বিদঘুটে ফুটবলে সমর্থকরা সবে বিরক্ত, অতি ত্যক্ত। কেউ কেউ তো বলেও দিয়েছিল আগ বাড়িয়ে, বড় দুঃখ মনে ‘এই স্পেন শিরোপা স্বপ্ন কি করে দেখে?' পরের ম্যাচেও যখন এক-একে ড্র, তখন আক্ষেপ সবার মুখে, অভাব অনুভব হচ্ছিলো সাহস আর অভিজ্ঞতার। এককথায় একজন সার্জিও রামোসের। এমনি সময়ে অচেনা স্পেনে সমালোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই ম্যাজিক দেখালেন লুইস এনরিকে। স্লোভাকিয়ার সাথে জয় তুলে নিলেন ৫-০ ব্যবধানে।

ভাগ্য যে সবসময় সাহসীদেরই সঙ্গী হয়, তা প্রমাণে নক-আউট পর্বের স্পেনের ম্যাচটা উপেক্ষা বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে? লুইস এনরিকের শিষ্যরা আবারো চাইছে তাদের সোনালি দিন ফেরাতে। সর্বোচ্চ চতুর্থ শিরোপার পথে ভালোভাবেই আছে লা রোহা ফিউরি। যদিও এত এত গোল করেও রক্ষণকে অটুট রাখা ইতালির বিপক্ষে গোল করাটাই হবে সেমিফাইনালে তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। স্পানিশ ফুটবলার পেদ্রিণ তো ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছেন দল চ্যাম্পিয়ন হলে মাথা কামিয়ে ফেলবেন!

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, অতীতে ৩৪ বারের দেখায় ১২ বার জিতেছে স্পেন, ৯ বার ইতালি। বাকি ১৩ ম্যাচ হয়েছে ড্র। তবে আজ্জুরিদের চিন্তায় রাখবে স্পেনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক রেকর্ড। শেষ ১৪টি ম্যাচে মাত্র দুবার স্পেনকে হারিয়েছে আজ্জুরিরা। বিপরীতে হেরেছে পাঁচটি ম্যাচে। ৭ ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ইতালির রেকর্ড ঈর্ষণীয়। ইউরো কাপ ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে ৯ বার দু দল মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে চার ম্যাচ জিতেছে ইতালি। মাত্র একবারই তাদের হারিয়েছে স্পেন। চারটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এবারের সেমিফাইনাল ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলিয়ে দু'দলের দশম সাক্ষাৎ। বিশ্বের সেরা দুই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ইউরোপের আর কোনো দল এতবার একে অপরের মুখোমুখি হয়নি।

যাহোক, নির্ধারিত সময় শেষে একদলকে তো বিদায় নিতেই হবে। অশ্রুজলে বিদায় জানাতে হবে এবারের ইউরোকে। অপর দলও কাঁদবে হয়তো, তবে তা দুঃখের নয়, মানুষ যে অতি সুখেই বেশি কাঁদে। এখন অপেক্ষা, কার অশ্রুর ভাষা সুখানুভূতির আর কারো বা বেদনাবিধুর। তবে আমার চাওয়া, হয়তো আপনারও; জয়-পরাজয় ছাপিয়ে ম্যাচটা হয়ে উঠুক উপভোগ্য। ম্যাচ শেষে দুদলের হাসি-কান্নার ভিড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠুক আমাদের মনে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us