আফ্রিকা নিয়ে তুরস্কের ভাবনা
আফ্রিকায় তুরস্ক - ছবি : সংগৃহীত
তুরস্ক আফ্রিকা মহাদেশে রাজনৈতিক সমর্থন বাড়াতে চাইছে। তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করতে অনীহা দেখে হতাশ এরদোগান ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের প্রভাব বিস্তারের জন্য মাগরেব এবং আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলে তার দেশের কূটনীতিকে পুনর্বিন্যাস করেছেন। তুরস্কের সম্পৃক্ততা এভাবে সামনেও বাড়তে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তকে ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষত ঐতিহ্যগতভাবে ফরাসি প্রভাবের অধীনে থাকা এই অঞ্চলে তুরস্কের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্তুষ্ট নয় ফ্রান্স। মাঝে মধ্যে তার প্রকাশও লক্ষ করা যায়। তবে এ ব্যাপারে মানিয়ে নেয়া ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে হয়। ফ্রান্সের বিকল্প হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন, ইউরোপীয়দের মোকাবেলা এবং মুসলিম বিশ্বের একজন রক্ষাকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য আঙ্কারার আকাঙ্ক্ষাকে ঔপনিবেশিক শক্তির শোষণমূলক আচরণে ত্যক্ত বিরক্ত এক অঞ্চল স্বাগতই জানাচ্ছে।
মাগরেব অঞ্চলের দেশগুলোতে ইসলাম ও গণতন্ত্রের ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ তুরস্কের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করেছে। এই অঞ্চলের মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হলো আলজেরিয়া। গত ১২ জুন দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে আশাতীত সাফল্য লাভ করে ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্টের উত্তরাধিকার হিসোবে পরিচিত দুটি দল মুভমেন্ট অব সোসাইটি ফর পিস ও ন্যাশনাল কন্সট্রাকশন মুভমেন্ট। ৪০৭ আসনের সংসদে এ দুটি দল যথাক্রমে ৬৫ ও ৩৯টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের দুই শরিক ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল র্যালি পেয়েছে ৯৮ ও ৫৮ আসন। এ দুটি দল আসন হারিয়েছে ১০৫টি। অন্য দিকে ইসলামী দল দুটি ৭০টি আসন অতিরিক্ত পায়।
করোনা পরিস্থিতির কারণে আলজেরিয়ায় এবারের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোট হার ছিল কম। তবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নির্বাচনের ফলাফল এবং সামগ্রিকভাবে আলজেরিয়ার রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে আঞ্চলিক উন্নয়নের একটি যোগসূত্র রয়েছে। আলজেরীয় রাজনীতিকে সাবেক ‘ঔপনিবেশিক প্রভু’ ফ্রান্স নিয়ন্ত্রণ করতে থাকুক সেটি আলজেরীয়রা আর চাইছে না। ফলে আলজেরিয়ায় ফ্রান্সকে কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ সরকারের ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক নীতিপদক্ষেপেরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে আলজেরিয়ায়।
অতিসম্প্রতি ফ্রান্স থেকে ২৭ হাজার মেট্রিক টনের একটি গমের চালান আসে। গমের সাথে পাওয়া যায় দুটি শূকরের মৃতদেহ। এতে বিক্ষুব্ধ আলজেরীয় কর্তৃপক্ষ গমের জাহাজ ফিরিয়ে দিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। একই সাথে রাশিয়া থেকে গমের নতুন সরবরাহের জন্য আদেশ দেয়া হয়। এভাবেই ফ্রান্সের সাথে আলজেরিয়ার সম্পর্কের নানা ক্ষেত্রে নিম্নগামী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এই শূন্য স্থানটি পূরণ করছে তুরস্ক, রাশিয়া ও চীন। আলজেরিয়ার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তুরস্ক ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। জ্বালানি খাতেও দুই দেশ সহযোগিতার একাধিক চুক্তি করেছে। লিবিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অখণ্ডতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে দুই দেশ একযোগে কাজ করছে।