কেমন হবে বেহেশতের খাবার
কেমন হবে বেহেশতের খাবার - ছবি : সংগৃহীত
অনেকের ধারণা বেহেশতবাসীদের খাবারের কোনো প্রয়োজনই হবে না। আবার কারো ভাবনায় বেহেশতের খাবার হবে মোস্ট আনফেমিলিয়ার, কেউ এখন পর্যন্ত ওইসব ফল ফসল সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই করতে পারে না। তারা মনে করে বেহেশতের খাবার হবে সব নতুন ধরনের, নতুন প্রজাতির, নাম ও বৈশিষ্ট্য দুনিয়া থেকে আলাদা। আসলে কি তাই?
আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই এ ভুলটা ভেঙে দিয়েছেন। না, সেগুলো দুনিয়ার ফলমূলের মতোই হবে যদিও তা স্বাদে ও বৈশিষ্ট্যে হবে অনন্য। নতুন প্রজাতির অপরিচিত ফল দেয়া হলে তারা ভড়কে যাবে। কিছু লোক বরং বেহেশতে আম, কাঁঠাল, লিচু, বেল, কলা দেখে মন্তব্য করে বসবে- বেহেশতে তো দুনিয়ার মতো ফলই দেয়া হলো। আল্লাহ সে কথা কুরআনে উদ্ধৃত করেছেন- আর হে নবী সা:, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদের এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোনো ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এত অবিকল সে ফলই যা আমরা এর আগেও লাভ করেছিলাম। বস্তুত তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিলী রমণীকুল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাকারা : ২৫)
দুনিয়ায় উত্তম খাবার বলতে আমরা বুঝি পোলাও, কোর্মা, বিরিয়ানি, তেহারি, রুটি-কাবাব, মুরগি মুসাল্লাম ইত্যাদি।
মেহমান আপ্যায়নে কোনো কোনো জেলায় তো নতুন মেহমানদের বিশেষ করে বেহাই বাড়ির লোকদের এসব খাবার না দিলে সম্পর্কই খারাপ হয়ে যায়। অন্তত নতুন বউকে কটু মন্তব্য হাদিয়া দেয়া অস্বাভাবিক নয়। বেহেশতের মেহমানদের চেয়ে দামি মেহমান আর কে? আল্লাহর কসম, কুরআনের কোথাও বেহেশতবাসীদের খাবারের তালিকায় এসব খাবার নেই। তবে কী আছে সেখানে? তাই শুনুন কুরআন থেকে।
বেহেশতের খাবার হবে পর্যাপ্ত পছন্দ মতো ফলমূল ও পাখির গোশত। মহান আল্লাহ বলেছেন, অর্থাৎ, তাদের পছন্দ মতো ফলমূল। আর তাদের পছন্দ মতো পাখির গোশত নিয়ে। (সূরা ওয়াক্বিআহ : ২০-২১)
আমি তাদেরকে ঢের দেবো ফলমূল এবং গোশত, যা তারা পছন্দ করে। (সূরা তুর : ২২)
দুনিয়াতে কষ্ট বরণ করে যে আমল তারা করত, তারই অসিলায় পাবে ইচ্ছামতো পান-ভোজনের ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাকো। (সূরা তুর : ১৯)
মহান আল্লাহ বলেন, রকমারি ফলের বৃক্ষে ফল ঝুলে থাকবে। যা সম্পূর্ণরূপে জান্নাতিদের আয়ত্তাধীন করা হবে। জান্নাতিরা বসে বা শয়ন করেও ফল তুলে খেতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন, সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে পুরু রেশমের আস্তরবিশিষ্ট বিছানায়, দুই বাগানের ফল হবে তাদের নিকটবর্তী। (সূরা রাহমান : ৫৪)
যার ফলরাশি ঝুলে থাকবে নাগালের মধ্যে। (সূরা হা-ক্বাহ : ২৩)
সন্নিহিত বৃক্ষছায়া তাদের উপর থাকবে এবং ওর ফলমূল সম্পূর্ণরূপে তাদের আয়ত্তাধীন করা হবে। (সূরা দাহর : ১৪)
জান্নাতে আছে খেজুর, বেদানা ও আরো অজানা শত রকমের ফল। কয়েকটির নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে ফলমূল খেজুর ও ডালিম। (সূরা রাহমান : ৬৮)
সেখানে থাকবে কুল (বরই), কাদি কাদি কলা। মহান আল্লাহ বলেন, আর ডান হাত-ওয়ালারা, কত ভাগ্যবান ডান হাত-ওয়ালারা! (যাদেরকে ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তারা থাকবে এক বাগানে) সেখানে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ। কাদি ভরা কলাগাছ। (সূরা ওয়াক্আিহঃ ২৭-২৯)
জান্নাতিরা থাকবে বাঞ্ছিত ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে। আল্লাহ বলবেন, নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে ছায়ায় এবং প্রস্রবণসমূহে এবং তাদের বাঞ্ছিত ফলমূলের মধ্যে। বলা হবে : তোমরা যা করতে তার বিনিময়ে তৃপ্তির সাথে পানাহার করো। (সূরা আল মুরসালাত : ৪১-৪৩)
খাবার শেষে একটু পানীয়ের ব্যবস্থা না হলে কেমন হয় ! জি, তাও থাকবে। তবে সেটা হবে পবিত্র ও মাদকতামুক্ত পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাদের ঘুরেফিরে পরিবেশন করা হবে স্বচ্ছ পানপাত্র। সুশুভ্র, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। তাতে মাথা ব্যথার উপাদান নেই এবং তারা তা পান করে মাতালও হবে না। (সূরা আস সাফফাত : ৪৫-৪৭)
বরং যে খাবার খেতে মনে বাসনা হবে, সেই খাবারই জান্নাতিরা জান্নাতে খেতে পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, সেখানে রয়েছে এমন সব কিছু, যা মন চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয়। সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। (সূরা যুখরুফ : ৭১)
মন যা চাইবে তাই সে খাবারের জন্য পাবে- এর মানে সেখানে মন বেহেশতবাসীদের জন্য নির্ধারিত খাবারই চাইবে। দুনিয়ার মতো মদ, শূকরের গোশত, সিগারেট তামাক সেখানে মিলবে না, মনও এত এত উত্তম খাবার রেখে পচা ও অপবিত্র কোনো খাবারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে না।
হে আল্লাহ ! আমাদের এমন আমল করার তৌফিক দিন যেন আমরা বেহেশতি এসব নিয়ামত প্রাপ্ত হই। আমিন।
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত এমডি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: