বিনা বিচারে ১৭ বছর বন্দিত্বের পর স্বাধীনতা অর্জন করলেন দুই ইয়েমেনি
বিনা বিচারে ১৭ বছর বন্দিত্বের পর স্বাধীনতা অর্জন করলেন দুই ইয়েমেনি - ছবি : সংগৃহীত
কিউবার গুয়ানতানামো উপসাগরে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটির বন্দীশিবিরে বিনা বিচারে গত ১৭ বছর বন্দী থাকার পর মুক্তি পেলেন দুই ইয়েমেনি নাগরিক। মার্কিন সরকারের প্রকাশিত নতুন নথিপত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের নথিতে দেখা যায়, গত ৮ জুন আলি আল-হাজ আল-শার্কাউই (৪৭) এবং আব্দ আল-সালাম আল-হিলাল (৪৯) অন্য দেশে বদলি করার অনুমতি দেয়া হয়।
‘নিয়মিত পর্যালোচনা বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এই কয়েদিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আর কোনো বড় ধরনের হুমকি বহন করে না। তাই যুদ্ধকালীন বন্দিত্বের আইন অনুসারে তাদের আর কয়েদ করে রাখার আর কোনো প্রয়োজন নেই,’ পেন্টাগনের প্রকাশিত নথিপত্রে দেখা যায়।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে য্দ্ধু’-এর অংশ হিসেবে ২০০২ সালে এই দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা হলে ওয়াশিংটন বিশ্বজুড়ে আল-কায়েদা সদস্যদের খুঁজে বের করার জন্য ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে য্দ্ধু’ শুরু করে। পরে ২০০৪ সালে তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠানো হয়।
নথিপত্রে দেখা যায়, শার্কাউইকে একজন উচ্চপদস্থ আল-কায়েদা সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, তিনি সংগঠনটির জন্য অর্থ পাচার ও সংগঠনটির প্রাক্তণ নেতা ওসামা বিন লাদেনের জন্য দেহরক্ষী সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করতেন।
নথিপত্রে আরো দেখা যায়, পাকিস্তানে সিআইএ কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি নির্যাতনেরও শিকার হন। গুয়ানতানামোর কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত সামরিক আদালতের পক্ষ থেকে তিনি কোনো অভিযোগের মুখোমুখি হননি।
মিসরীয় কর্তৃপক্ষ হিলালকে ২০০২ সালে কায়রোতে গ্রেপ্তার করে। একজন ইয়েমেনি সরকারি কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আল-কায়েদার কার্যকলাপে সহায়তার অভিযোগ করেছিলেন। পরে তাকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। হিলালও কখন কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগে অভিযুক্ত হননি।
পেন্টাগন পর্যালোচনা বোর্ড বলেছে, অতীতের কর্মকান্ডের বিবেচনায় এই দুই ব্যক্তিই ‘নিরাপত্তার জন্য কিছুটা হুমকি বহন করে’। এতে আরো বলা হয়, নজরদারি ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে হিলালের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকিহীন চলাফেরার বন্দোবস্ত করা হবে। পাশাপাশি শার্কাউইকে তৃতীয় কোন দেশে পাঠানো হবে যেখানে তাকে পুনর্বাসন করা হবে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বাইডেনকে গুয়ানতানামো বন্দীশিবিরে মানবধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গুয়ানতানামোতে এখনো কারারুদ্ধ থাকা ৪০ জন কয়েদির মধ্যে এই দুজন অন্যতম। ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণের পর থেকে এই কারাগারে বন্দীদের আটক রাখা শুরু হয় ।
এই মুহূর্তে গুয়ানতানামোতে শার্কাউই ও হিলালসহ আরো ১১ জন কয়েদিকে অন্যত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। তারা শুধু মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
মে মাসে বাইডেন প্রশাসন তিন বন্দীকে মুক্তি দিয়ে এমন সব দেশে পাঠিয়েছে, যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের চলাফেরার উপর শর্ত আরোপ করা হবে। এদের মধ্যে গুয়ানতানামোর বয়স্কতম বন্দী পাকিস্তানের ৭৩ বছর বয়সী সাইফুল্লাহ্ পারাচাও রয়েছেন।
এ বছরের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সামরিক কারাগার বন্ধ করার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দেন