তুর্কি ড্রোন দিয়ে কী করবে পোল্যান্ডের সেনাবাহিনী?
তুর্কি ড্রোন - ছবি : সংগৃহীত
পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগনেভ রাউ বলেছেন, তুরস্কের মানবহীন আকাশ যান (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকাল - ইউএভি) বায়রাকতার টিবি২ ’প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কার্যকরী ও যুদ্ধ-পরীক্ষিত অস্ত্র’।
আনতালিয়া কূটনৈতিক সম্মেলন চলাকালে আনাদোলু সংস্থাকে দেয়া এক লিখিত সাক্ষাতকারে বলেন পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ’আমরা নিশ্চিত এই ড্রোন পোলিশ সেনাবাহিনীকে দক্ষ ও শক্তিশালী করবে এবং ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণ করবে।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘একই সাথে এই অস্ত্র চুক্তি আমাদের দুই দেশের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্ককে বাস্তব সহযোগিতায় পরিণত করার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
রাউ জোর দিয়ে বলেন, ইইউ বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করতে চলবে। রাউ উল্লেখ করেন, ইইউর সংহতকরণের প্রক্রিয়ায় সকল সদস্যের রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রয়োজনের দিকটি গুরুত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত।
’নিরাপত্তার দিক থেকে আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যকার সুদৃঢ় বন্ধনই আমাদের সংস্থার অন্যতম স্তম্ভ’, তিনি বলেন।
ইউর সম্প্রসারনের প্রসঙ্গে রাউ বলেন, পোল্যান্ড বিশ্বাস করে, শুধুমাত্র পশ্চিম বলকান দেশগুলো এবং তুরস্কের পূর্ণ সদস্য পদ লাভের মাধ্যমেই ইউরোপের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য সহযোগিতার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ নিশ্চিত হবে।
‘ইউরোপীয় সংহতকরণের বিষয়টি মহাদেশের সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত,’ তিনি বলেন।
’একই সাথে প্রার্থী দেশগুলোর এবং সম্ভাব্য প্রার্থী দেশগুলিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করাই ইউর জন্য সবচেয়ে ভালো পন্থা । সুতরাং পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণকে একটি কৌশলগত বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে,’ তিনি যোগ করেন।
পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ইইউ ও তুরস্কের জন্য একে অপরের নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল সহযোগী হওয়া প্রয়োজন; বিশেষ করে সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই , বাণিজ্য ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে ।
’ইইউর সদস্যপদ অর্জনের আলোচনায় চলমান জটিলতা থাকা সত্ত্বেও তুরস্কের প্রার্থিতার মর্যাদা রক্ষা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। ইইউর শর্ত অনুযায়ী আলোচনা চলতে থাকবে। আমরা তুরস্ককে কৌশলগত সহযোগী হিসাবে বিবেচনা করি এবং আমরা ইইউতে দেশটি অংশগ্রহণ আশা করি’, আনাদোলু সংস্থাকে বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে উত্তেজনা প্রশমনের ব্যাপারে প্রশংসা করে রাউ বলেন, ’আমরা আশা করি আলোচনার মাধ্যমে সব ধরনের বিবাদের মীমাংসা করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন: ’’আমরা আশা করি আসন্ন ইউরোপীয় পরিষদে ইইউ-তুরস্ক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালীকরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার হবে - বিশেষত শুল্কাঞ্চলের আধুনিকীকরণ, তুরস্কের শরণার্থীদের সাহায্য প্রদান এবং নাগরিকদের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। "
এর সাথে সাথে তিনি যোগ করেন যে ইইউ কর্তৃক যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা কেবলমাত্র ইইউ সদস্যদের গৃহীত পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে না, বরং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তুরস্কের ভূমিকার উপরও নির্ভর করবে।
এর পাশাপাশি রাউ বলেন, ২০২১ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেই দুদার সর্বশেষ তুরস্ক সফর দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ককে অন্য স্তরে নিয়ে গিয়েছিল।
’আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তুরস্ক ও পোল্যান্ড পরষ্পরের কৌশলগত সহযোগী। আমাদের দুই দেশেরই সামরিক গুরুত্ব রয়েছে এবং আমাদের সীমান্ত সুরক্ষার হুমকির মুখে রয়েছে’ তিনি বলেছিলেন।
তিনি আরো যোগ করেন, ’যখন আমরা একসাথে কাজ করি, তাহলে আমরা ইউরোপ-আটলান্টিক অঞ্চলের সুরক্ষা ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে, ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তকে সুরক্ষিত করতে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারব।’
উভয় দেশই জর্জিয়া এবং ইউক্রেনের সাথে ন্যাটোর সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করছে উল্লেখ করে রাউ আরও জানান : ’পোল্যান্ড এবং তুরস্ক আফগানিস্তান এবং ইরাকের ন্যাটো অভিযানে সেনা পাঠিয়েছে। আমরা তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সাথে লড়াইয়ের জন্য বৈশ্বিক জোটেরও সক্রিয় সদস্য।’
আনতালিয়া কূটনীতিক সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট বলে জানান রাউ। তিনি আরো বলেন, ’সম্মেলনটি কূটনৈতিক মতামত বিনিময়ের একটি নতুন মঞ্চ। বিশেষত কোভিড-১৯ অতিমারীর পরে এই ধরনের সম্মেলন অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’
রাউ জানান, সম্মেলন চলাকালে ’ট্র্যান্সআটল্যান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগ’ নামের এক সভায় অংশ নেবেন তিনি। তিনি বলেন, এই সভার আলোচ্য বিষয়বস্তু বিশ্বব্যাপী বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বিশেষত রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের ইউরোপ ভ্রমণ, জি-৭ অধিবেশন, ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন, মার্কিন-ইইউ শীর্ষ সম্মেলন এবং সব শেষে জেনেভায় বাইডেন-পুতিন বৈঠকের মত বিষয়গুলো।
পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ তুরস্কের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তিনি আরো যোগ করেন যে এই সম্মেলন তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার একটি দুর্দান্ত সুযোগ হবে।