গৃহযুদ্ধের শঙ্কা যেভাবে ভণ্ডুল করে দিচ্ছে তালেবান
তালেবান বাহিনী - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ কি অনিবার্য? জাতিসঙ্ঘ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, কাবুল সরকারে সেনা সদস্য প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার, সাথে রয়েছে বিমানবাহিনী। তালেবান সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সংখ্যা বলা হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার।অস্ত্র-শস্ত্রসহ সব দিক থেকেই আপাতদৃষ্টিতে কাবুল সরকার এগিয়ে আছে সন্দেহ নাই।
তারপরও গত ১ মে থেকে জুলাইয়ে ২ তারিখ পর্যন্ত ১০০ জেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে কাবুল সরকার, সাথে ভারী অস্ত্র-শস্ত্র খোয়া গেছে। এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩ জেলার নিয়ন্ত্রণ হারানোর রেকর্ড রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৭১টি জেলার মধ্যে ১৫০টির বেশি জেলা তালেবানের দখলে। কোনো কোনো সূত্রের মতে ৩ ভাগের ২ ভাগ আফগান ভূমি তালেবানের দখলে কেউ এটাকে অর্ধেক পর্যন্ত বলছে। নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাবুল প্রশাসনের সাথে জড়িতরাও দেশ ছাড়ছে। একাধিক মার্কিন সূত্র বলছে সৈন্য প্রত্যাহারে পর কাবুল সরকার বড়জোর ৬ মাস টিকে থাকতে পারে। এই অবস্থায় গানি সরকার সাধারণ মানুষের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে তালেবানের মোকাবেলা করার জন্য।
অভ্যন্তীণ বাস্তবতার আলোকে বলতে গেলে সৈন্য ও শক্তির বিচারে তালেবানের থেকে আফগান সেনাবাহিনী এগিয়ে থাকলেও একের পর এক জেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ১১ সেপ্টেম্বরে আগে তালেবান আরো বেশ কিছু অঞ্চল দখলে করে ফেলবে তা সহজেই অনুমেয়। বড় বড় শহর এবং জেলা শহরের বাইরে কাবুল সরকারের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। উত্তরে প্রাদেশিক কুন্দুজ শহরকে তালেবান কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে, প্রাদেশিক শহরটির যেকোনো সময় পতন হতে পারে। দেশের অধিকাংশ হাইওয়ে তালেবানের দখলে। তাজিকিস্তান সীমান্ত ইতিমধ্যে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রাজধানী কাবুলও দেশের অন্য সব জেলা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন।
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সব পক্ষই হোক তা তালেবানের শত্রু বা মিত্র তালেবানকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে বাস্তবতার কাছে নতি স্বীকার করেই।
পরিবর্তিত আফগানিস্তানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ভূমিকা
আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান মধ্য এশিয়ায়। যার উত্তরে উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান;
উত্তর-পশ্চিমে তুর্কমেনিস্তান। দক্ষিণ-পশ্চিমে জুড়ে রয়েছে ইরান। পূর্ব-দক্ষিণে পাকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে চীনের সাথে রয়েছে অল্প কিছু সীমান্ত। এখানে রাশিয়া-ভারত প্রাসঙ্গিক। দেশ দুটির সাথে সীমান্ত সংযোগ আফগানিস্তানের না থাকলেও তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বার্থ জড়িত রয়েছে আফগানিস্তানের বিভিন্ন বিষয়ে।
লক্ষ করে দেখা যায়, আফগানিস্তানের চারপাশে সব শক্তিশালী দেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তেমন ভালো নয়, এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত, ক্ষেত্র বিশেষ রয়েছে শত্রুতার। যেমন : চীন, ইরান, রাশিয়া।
মার্কিনিদের আফগানিস্তান ত্যাগে তারা সবাই একে তাদের কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখতেই পারে।
কারণ আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা ছিল বিশেষত চীন ও রাশিয়াকে নিয়ে, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আর একারণে কাবুল সরকারের কোনো বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক এসব দেশের সাথে নেই বললেই চলে। বিশেষ করে তালেবানের কূটনৈতিক তৎপরতায় কাবুল সরকার এক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।