যুক্তরাষ্ট্রমুক্ত আফগানিস্তানে কী হবে চীন-ভারত-পাকিস্তানের ভূমিকা?
আফগানিস্তান ও প্রতিবেশীরা - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আশঙ্কা করছেন, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে এবঙ তাতে প্রতিবেশী দেশগুলো ইন্ধন দেবে। ্মন প্রেক্ষাপটে দেখা যাক আফগানিস্তানের সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে এসব দেশের সম্ভাব্য ভূমিকা কী হতে পারে।
পাকিস্তান : আপাতত পাকিস্তানের সাথে তালেবান দূরত্ব বজায় রাখার অন্যতম কারণ ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে পাকিস্তানের উপর যাতে তারা তালেবানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অংশ হয়ে কাবুল প্রশাসনের অবৈধ আবদার মেনে নিতে চাপ দেয়। সাথে তুরস্কের কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে মধ্যস্থতার গুরুদায়িত্বও পাকিস্তানের ঘারে। তাই বলে যে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরেছে এমনটা মনে করারও কারণ নেই। আফগানিস্তানের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা পাকিস্তানের অন্যতম লক্ষ্য। যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদ যে তালেবানের সাথে থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
রাশিয়া-চীন : রাশিয়া, চীনের অভিন্ন স্বার্থ জরিত তালেবানের সাথে তারা উভয়ই আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বিশেষ করে খনিজসম্পদ উত্তোলনে বিনিয়োগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতেই তালেবানকে সমর্থন করবে। আর যেহেতু আমেরিকা নিজেই কাবুল সরকারকে প্রত্যাখান করেছে, তাহলে চীন বা রাশিয়া কেন কাবুল সরকারের দায়িত্ব নিতে যাবে? তালেবানের সাথে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী বললেও অত্যুক্তি হবে না। চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্পের জন্য আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে তালেবানকে সমর্থন করবে। চীন যে বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন তা হলো পূর্ব তুর্কমেনিস্তান ইসলামিক পার্টিকে নিয়ে। এই বিষয়ে তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে- তা নিয়ে তাদের সংশয় আছে। কিন্তু তালেবান ইতিমধ্যেই চীনকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পেরেছে বলেই মনে হয়।
ইরান : ইরান-আমেরিকার সম্পর্ক কতটা উত্তপ্ত তা বলা নিষ্প্রয়োজন। তাই কাবুল সরকার ইরান থেকে মৌখিক আশ্বাস ছাড়া তেমন কিছুই আশা করতে পারে না।আর তালেবান যখন হাজারা শিয়াদের নিরাপত্তা বিষয়ে অঙ্গীকার বদ্ধ। এমনকি শূরা সদস্যদের মধ্যেও হাজারা শিয়া আলেমের অন্তর্ভুক্তির কথা শোনা যায়। তখন ইরান তালেবানের উপরই আস্থা রাখবে বলেই মনে হয়।
ভারত : তালেবানের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে এটা অনেক বড় প্রশ্ন? কারণ দেশটিতে ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ববাদের উত্থানে মুসলিম নিপীড়ন আগের সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কাশ্মিরের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। শুধু কি তাই? আফগানিস্তানেও তাদের অপকর্মের শেষ নেই। তাদের নিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়া গ্রুপও রয়েছে বলে মনে করা হয়। এছাড়া কাবুল সরকারের অন্যতম সহযোগী দেশ ভারত। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তারা তালেবানবিরোধী অবস্থান কিছুটা শিথিল করেছে। বিশেষত তালেবানের সাথে বৈরিতার কারণে তাদের যেমন অর্থনৈতিক বিরাট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি রয়েছে পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধির ভয়। তাই না চাইলেও তালেবানকে মেনে নিয়েছে ভারত। তালেবানের সাথে একাধিক বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এছাড়া মধ্য এশিয়ার অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোও তালেবানকে উপেক্ষা করতে পারবে না। কারণ এসব দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তা যেকোনো পক্ষ ক্ষমতায় আসুক তাতে তেমন কিছু যায় আসে না। তাই না চাইলেও বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে তাদের।
এখন প্রশ্ন হলো, অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আফগানিস্তানের উদ্ভূত অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কি গৃহযুদ্ধ বলা যাবে? আর যদি এরকম কিছু ভবিষ্যতে ঘটে তাহলে এরজন্য দায়ী কে?
আমাদের মনে রাখতে হবে '৯০-এর দশকের তালেবান আর আজকের তালেবানের শক্তি সামর্থ্য আর কূটনৈতিক দক্ষতা এক নয়।