চীন কি ইচ্ছা করে মুদ্রার মান করিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বেকায়দায় ফেলছে?
চীনা মুদ্রা - ছবি : সংগৃহীত
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এবারের এই বার্ষিকী যতটা না চীনের অভ্যন্তরীণ এর চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া বিদেশের এবং তা এমনকি চীনের বন্ধু-শত্রু, অথবা চীনের প্রতি ঈর্ষা-ধারী কিংবা কৌশলগত কারণে যারা পছন্দ বা উচ্ছ্বাস-প্রকাশকারী নির্বিশেষে সবার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
এসবের মধ্যে পশ্চিমের মিডিয়া রিপোর্ট আর তাতে প্রকাশিত মন্তব্য ও অ্যানালাইসিসে প্রতিক্রিয়াগুলো লক্ষণীয়। এসব লেখা এবারই প্রথম দেখা গেল, চীন যে নিজেকে এখনো কমিউনিস্ট বলে তা মেনেই নিয়েছে। আর এই ‘কমিউনিস্ট নামে রেখেই’ চীনের উঠে আসা সাফল্য বা চ্যালেঞ্জ পশ্চিমের সাথে বরাবর বা সমান প্রতিদ্বন্দ্বী যা পশ্চিমকে ছাড়িয়েও যেতে পারে, যেন তা মেনে নিচ্ছে। কোনো প্রশ্ন তোলেনি তারা। এমনকি চলতি একুশ শতকের শুরু থেকে প্রথম ১৫ বছরও আমরা দেখেছিলাম চীন পশ্চিমের সাথে কম্পাটেবল বা তুলনীয় নয় বলে আমেরিকা সরকারি আপত্তি তুলছে। তাদের দাবি, চীন নিজের ‘মুদ্রার মান’ কমিয়ে রেখেছে যদিও ২০০৮ সালের মন্দায় জাপান এক দীর্ঘ সময় ইয়েনের ‘মুদ্রার মান’ কমিয়ে রেখে চলেছিল। কিন্তু আমেরিকাকে আপত্তি তুলতে দেখা যায়নি।
এখানে আমাদের পাঠকের অনেকের কাছে মুদ্রার মান কমে যাওয়ার ব্যাপারটা পরিষ্কার নয় হয়তো। যেমন ভারতের জাতিবাদী রাজনীতির চোখে, ডলারের তুলনায় রুপির মান কমে যাওয়া দেশবিরোধী কাজ বা ঘটনা মনে করা হয়। অর্থাৎ ভারতের সরকার ও জনগণ সবার চোখেই এটা ভারত স্বার্থবিরোধী নেতিবাচক কাজ। কিন্তু এখানে আমরা দেখেছি আমেরিকা চীনকে অভিযুক্ত করছে যে, ইউয়ানের মুদ্রামান চীন ইচ্ছা করে কমিয়ে রেখেছে আর এটা অন্যায় কাজ বলে আমেরিকা দাবি করে যাচ্ছে। কেন?
কারণ এটা গ্লোবাল বাণিজ্যের যুগ। মানে এটা আর তথাকথিত জাতিবাদী উৎপাদন বা জাতিবাদী অর্থনীতির যুগ নয়। অর্থাৎ যখন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের দিকে তাকিয়ে উৎপাদনের চেয়ে রফতানির জন্য উৎপাদন অর্থনীতিই প্রধান তৎপরতা হয়ে ওঠেÑ সেটাই গ্লোবাল বাণিজ্যের যুগ। এক কথায়, দেশীয় ভোক্তার জন্য উৎপাদনের তুলনায় রফতানির জন্য উৎপাদন তুলনায় বেশি সুবিধা ও মনোযোগপ্রাপ্ত সেক্টর। আর এ ক্ষেত্রে মুদ্রা মান কম করে রাখা বা আপনাতেই কমে যাওয়া কখনো রফতানিকারক দেশের জন্য বেশি লাভ ও সুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে। কিভাবে?
মুদ্রা মান কমে যাওয়া মানে আগে বাংলাদেশ থেকে এক ডলারে (ধরা যাক) একটা শার্ট কিনে নিয়ে যাওয়া হলেও এখন দেড় ডলারে দুইটা পাওয়া যাবে- এরকম হয়েছে। এতে আমরা এখন কম মূল্য পেলেও এতে বিক্রি বেড়ে যাবে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ক্রেতারা কম দামের সুবিধা নিতে বাংলাদেশমুখী হবে। এতে বিক্রি বেশি হওয়াতে মুদ্রামান হারানোর লস কাভার হওয়ার পরও বেশি লাভ হতে পারে। অর্থাৎ সময়ে নিজ মুদ্রার মান কমা, এটা নিজের জন্যই ইতিবাচক হতে পারে।