এত হীরা যে হীরা বৃষ্টি হয় এখানে!

হীরা - ছবি : সংগৃহীত
আমাদের সৌরজগতের অন্যতম গ্রহ নেপচুন। নেপচুন থেকে পৃথিবীর দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। যদি পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যকার দূরত্বকে ১ এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট ধরা হয়। তাহলে পৃথিবী থেকে নেপচুনের দূরত্ব হবে ৩০ এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিট। তাও বলি পৃথিবী ও নেপচুন যখন খুব কাছে আসে তখন নেপচুন ও পৃথিবীর দূরত্ব ৪৩০ কোটি কিলোমিটার বা ৪.৩ বিলিয়ন কিলোমিটার হয়। সূর্য থেকে খুব দূরে অবস্থিত হওয়ার কারণে নেপচুনের ১ বছর পৃথিবীর ১৬৫ বছরের সমান।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশ গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০০ কিলোমিটার। আর নেপচুনে তা ২০০০ কিলোমিটার। অর্থ্যাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগের চেয়ে ৫ গুণ বেশি গতি। নেপচুনের সেই ঘূর্ণিঝড়ের ওপর আরো একটি ঘূর্ণিঝড় সেই ঘূর্ণিঝড়ের ওপর আরও একটি ঘূর্ণিঝড়। কেমন হবে সেই ঘূর্ণিঝড়? এরকম একটি ঘূর্ণিঝড়ের ছবি তুলেছিলো ভয়েজার-২।
আপনি যদি নেপচুনে ঘূর্ণিঝড়ের ওপর ঘূর্ণিঝড়, সেই ঘূর্ণিঝড়ের ওপর আরও একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা জেনে যদি অবাক হন তাহলে আপনার জন্য আরো কিছু আছে যা জানলে আপনি আরো অবাক হবেন। নেপচুন সেই গ্রহ যাতে হীরার বৃষ্টি হয়। এটা সত্যি। নেপচুনে হীরার বৃষ্টি হয়। নেপচুনে কার্বন ও হাইড্রোজেন যৌগের অণু মুক্ত অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। তারপর অতিরিক্ত চাপে এরা কেলাসিত হয়ে হীরার টুকরোতে পরিণত হয়। তারপর বৃষ্টির মতো নেপচুনের গাঢ় ও গভীর বায়ুমণ্ডল থেকে নেপচুনের কেন্দ্রে পতিত হয়।
এই হীরার বৃষ্টির কতটা শুনে যতটাই লোভ হোক না আপনার আররো কিছু জানার বাকি আছে। আপনি ছোট বেলায় তো আলিফ লায়লার গল্পে দেখেছেন যে হীরার বাক্সের কাছে বা হীরা বা অন্য কোনো মূল্যবান সম্পদের পাশে একটি সাপ থাকে। যা সেই সম্পদকে রক্ষা করে। কিন্তু নেপচুনে এরকম কোনো সাপ নেই। পৃথিবীর সাপগুলোকে বীন বাজিয়ে বশ করাও যায়। নেপচুনে সাপ না থাকা সত্ত্বেও নেপচুনের হীরা আপনি পৃথিবীতে আনতে পারবে না। কারণ নেপচুনে সব সময় ঘূর্ণিঝড়ের ওপর ঘূর্ণিঝড় চলতে থাকে। আর নেপচুনের শীতল আবহাওয়ায় আমরা বাঁচতে পারব না। যদি কেউ সেখানে চলেও যায় তাও হীরা আনতে পারবে না। কারণ ধারালো হীরার বৃষ্টি সেখানেই তাঁর শরীরকে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। নেপচুন আল্লাহর এক অবসাধারণ সৃষ্টি। যেখানে প্রতি মূহুর্তে হীরার বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু না সেখানে কোন জীব আছে আর না কোন মানুষ সেখানে পৌঁছাতে পারবে।
আল্লাহর এই নিদর্শন যেন আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে যে আল্লাহর কাছে এই সম্পদ ও সৃষ্টিজগতের কোন মূল্য নেই। এতো মানুষকে পরীক্ষার উপকরণ মাত্র। মানুষ আল্লাহর বিধানকে আঁকড়ে ধরলে আল্লাহ আমাদের জন্য আকাশ থেকে ধন সম্পদসহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। নেপচুন সেই গ্রহ যেখানে আছে প্রচুর সম্পদ। কিন্তু না সেখানে কোন মানুষ যেতে পারবে। আর না কোনো জীব সেখানে জন্মাবে।
চলুন নেপচুন ছেড়ে সমানে যাওয়া যাক। মহাকাশযান ভয়েজার-২ ও নেপচুনকে ছেড়ে অনেক সামনে এগিয়ে গেছে। ভয়েজার-২ নেপচুনকে ছেড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ৫ ঘণ্টা পর ভয়েজার-২ নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ ট্রাইটনের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। ভয়েজার-২ ট্রাইটনের থেকে মাত্র ৪০ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কয়েক টুকরোয় ট্রাইটনের ছবি তুলেছিলো। যা পৃথিবীতে একটি ছবি হিসেবে রিসিভ করা হয়। নেপচুনের এই সুন্দর চাঁদ ট্রাইটন নেপচুনের মতোই ঠান্ডা। ট্রাইটনের তাপমাত্রা -২৩৫° সেলসিয়াস। মাইনাস ২৩৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা সত্ত্বেও ভয়েজার-২ ট্রাইটনের পৃষ্ঠ থেকে শনি ও ইউরেনাসের চাঁদের পৃষ্ঠের মতো পানির ফোয়ার বের হতে দেখেছিল। শনি ও ইউরেনাসের চাঁদের পৃষ্ঠের বরফের নিচে যেমন পানির বিশাল সমুদ্র রয়েছে। নেপচুনের চাঁদ ট্রাইটনের বরফ পৃষ্ঠের নিচেও সেরকম সমুদ্র থাকতে পারে। আপনি যদি ট্রাইটনের পৃষ্ঠের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলে আপনি দূরে সাদা আলোয় ঝলমলে ছোট সূর্যকে দেখতে পাবেন। আপনার বাম হাত বরাবর থাকবে নীল গ্রহ নেপচুন। আপনার ডান হাত বরাবর থাকবে কালো রংয়ের মহাকাশ। আর পায়ের নিচে থাকবে ঠান্ডা চাঁদ ট্রাইটন। ভয়েজার-২ তার যাত্রাপথে সর্বশেষ বৃহৎ ও ভারী বস্তু হিসেবে ট্রাইটনকে দেখেছিল।
এখনে পর্যন্ত তার যাত্রাপথে এতব ড় ও ভারী কোনো বস্তু বা গ্রহ বা উপগ্রহকে দেখেনি। ভয়েজার-২ এখন আমাদের সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে অনেক দূর চলে গেছে।