সাদ্দাম হোসেন কেন ইরান আক্রমণ করেছিলেন?
সাদ্দাম হোসেন - ছবি : সংগৃহীত
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব হওয়ার পর ইরাকের একনায়ক সাদ্দাম হোসেন কোনো প্রকাশ্য ও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানে একচেটিয়া আক্রমণ পরিচালনার নির্দেশ দেন। ওই সময় ইরাকের সমরবিদ ও গোয়েন্দারা ধারণা করেছিল যে বিপ্লবীরা ইরানে শাহপন্থী হিসাবে চিহ্নিত করে শত শত সিনিয়র সামরিক অফিসারকে হত্যা করেছে, ইরানের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা ইসলামী ধাঁচের বিপ্লবের কারণে ইরান তখন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্নপ্রায়। তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে ইরানি বিপ্লবীদের হঠকারি সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে সে সময় ইরান শুধু সামরিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পড়েনি, প্রায় সব দেশ ইরানের নতুন সরকারকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে। এমনকি ইরান তার শিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাব ও কথিত ইসলামী বিপ্লব রফতানির লক্ষ্যে পার্শ্ববর্তী রাজা শাসিত সুন্নি আরব দেশগুলোয় গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে। সৌদি আরবে হজের সময় ইরানিরা মিছিলসহকারে বিক্ষোভ করলে সৌদি সরকারসহ অন্যান্য গালফ দেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একই সাথে ইরান সিরিয়ার শিয়া শাসকদের সাথে দ্রুত সম্পর্ক স্থাপন করে লেবাননে তার প্রভাব বলয় বিস্তারের উদ্যোগ নেয়। অনেক দেশ ভাবতে শুরু করে যে ইরান নিজ দেশে বিপ্লবের সুফল জনগণের দুয়ারে পৌঁছানোর পরিবর্তে শিয়াভিত্তিক ইসলামী বিপ্লব রফতানি করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে পৃথিবীতে প্রায় একই সময় আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে আফগানিস্তানে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানের বেলুচিস্তান হয়ে আরব সাগরে প্রবেশে শত বছরের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে।
স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন মনে করতে থাকেন যে ইরানকে আক্রমণ করে পর্যুদস্ত করার এটাই সময়। তখন ইরাকের সশস্ত্র বাহিনী ছিল আধুনিক সোভিয়েত সমরাস্ত্রে সজ্জিত। অন্য দিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ইরানের হাতে থাকা সব ন্যাটো ভার্সন সমরাস্ত্র ব্যাপকভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ে। যেহেতু ইরানের প্রায় সব অস্ত্রই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি তাই স্পেয়ার পার্টস, গোলাবারুদের অভাবে এসবের বেশিরভাগ পরিচালনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। সিনিয়র প্রায় তিন শ’ জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার ও কর্নেলের মৃত্যুদণ্ডের পর ইরানের সশস্ত্র বাহিনী হয়ে পড়ে বেশ দুর্বল। কমান্ড চ্যানেল ছিল অপরিপক্ব অফিসারদের হাতে। সাদ্দামের গোয়েন্দারা এমন ধারণা উপস্থাপন করেন যে যদি আটঘাট বেঁধে ওই অবস্থায় তীব্র আক্রমণ পরিচালনা করা যায় তাহলে ইরানের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। গোপনে রাজা শাসিত প্রতিবেশীরাও সাদ্দামকে এগিয়ে যাওয়ার সবুজসঙ্কেত দেন। ইরাক ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশৃঙ্খল ইরানের ওপর। দখল করে নেয় ব্যাপক এলাকা।
কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইরাকের সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয় ইরানের সাধারণ সৈনিকেরা ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। ন্যূনতম সেনা প্রশিক্ষণ নেয়া ইরানি যুবক, এমনকি যুবতীরা অকল্পনীয় বৈরী পরিবেশের সামনে রক সলিড প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইরাকের সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনীকে হতভম্ব করে দিয়ে তারা সব এলাকা থেকে ইরাকি সেনাদের শুধু হটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ইরাকের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ১৯৮২ সালের মাঝামাঝি এসে ইরাকের বাহিনী আক্রমণ তো দূরের কথা রক্ষণাত্মক অবস্থানেও নিজেদের সুরক্ষিত মনে করতে স্বস্তি পাচ্ছিল না।