সেই রহিম স্টার্লিং এখন ব্রিটিশদের মহানায়ক

অন্য এক দিগন্ত | Jul 02, 2021 08:15 am
রহিম স্টার্লিং

রহিম স্টার্লিং - ছবি : সংগৃহীত

 

বাথরুম ক্লিনার থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে। অদম্য ইচ্ছা যে হাজার বছরের বিপত্তি কাটিয়ে আজকের ফুটবলার স্টার্লিং হওয়া যায় তা তিনি প্রমাণ করেছেন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে ইংল্যান্ডের রহিম স্টার্লিং তার মা আর বোনের সাথে হোটেলের বাথরুম পরিষ্কার করতেন। তারপর তারা সকালের নাস্তা পেতেন। তিনি বলেছেন, আমরা যখন এই দেশটাতে এসেছিলাম তখন কিছুই ছিল না। স্কুল, হোটেলের বাথরুম, বিছানার চাদর পরিষ্কার করে মা আমাদের বড় করেছেন। সেই তিনিই এখন একটা নার্সিং হোমের ডিরেক্টর। আর তার ছেলে ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।

রহিম স্টার্লিং কখনো কল্পনাও করেননি যে তিনি একদিন ইংল্যান্ডের জাতীয় ফুটবল দলে খেলবেন বলে। কল্পনাহীন জীবন তার এত দূর এগিয়ে যাবে বলে। বড় হওয়ার গল্প হার মানাবে সিনেমাকেও। জীবন সংগ্রামের প্রতিটা পাতায় পরীক্ষা দিয়ে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার মানুষের বেঁচে থাকার অক্সিজেন'। যেন জীবন্ত দলিল। এই ফুটবলারদের জীবনের গল্প জানতেই তো ভালোবাসেন মানুষ। ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার জন্মেছিলেন জামাইকায়। যখন মাত্র দু বছর বয়স, গুন্ডাদের হাতে খুন হয়েছিলেন রহিমের বাবা শাকিল।

দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই চালাতে হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। মা ছোট রহিমকে দেশে আত্মীয়দের কাছে রেখে চলে এসেছিলেন ইংল্যান্ডে। জানতেন, বাবা হারানোর ছেলের ভবিষ্যৎ গড়তে গেলে জামাইকায় পড়ে থাকলে হবে না। স্কুলে বাবার নামের পাশে জায়গা খালি রাখতে হয়েছিল। মা ইংল্যান্ডের পাড়ি দেয়ার বছর খানেক পর রহিম এবং তার বোন চলে আসেন ইংল্যান্ডে। উত্তর লন্ডনে একটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জায়গায় থাকতে শুরু করেন। কিন্তু ফুটবল খেলার ইচ্ছে ছাড়তে পারেননি।

জামাইকায় সন্ধ্যা নামলে খেলতে পারতেন না বন্দুকবাজদের হুমকির জন্য। যখন তখন ছুটে আসত গুলি। লন্ডনে ওই সমস্যা ছিল না। যখন রহিমের ১৫ বছর বয়স থাকার জায়গা থেকে দেখতে পেতেন নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম। মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন, একদিন খেলতে হবে ওই মাঠেই। চোখে পড়ে গেলেন ভারন হাউস স্পেশাল স্কুলের শিক্ষক ক্রিস বেসচির। রহিমের অসাধারণ প্রতিভা তখনই চোখে পড়েছিল এই ব্রিটিশ ভদ্রলোকের।

মাত্র ১২ বছরের ছেলেটিকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সঠিকভাবে এগোলে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপানো সময়ের অপেক্ষা। আর নিজের লক্ষ্য থেকে সরে গেলে কোনো দিন মায়ের এবং বোনের জীবনে উন্নতি আনতে পারবেন না। বাথরুম পরিষ্কার করেই কাটাতে হবে জীবন। মেন্টর ক্রিসের কথা অমান্য করেননি রহিম। প্রথমে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স, কয়েক বছর পর লিভারপুল এবং তারপর রেকর্ড অর্থে সই করেন ম্যানচেস্টার সিটিতে।

এখন বাংলাদেশী মুত্রার হিসেবে মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেতন পান তিনি। মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ফেরারি থেকে শুরু করে তার গ্যারেজে রয়েছে ৮টি গাড়ি। নিজের মাকে উপহার দিয়েছেন আলাদা একটি বাড়ি। আত্মীয়দের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দিয়েছেন। বান্ধবী এবং দুই সন্তান নিয়ে এখন সুখী পরিবার তার। কিন্তু ছোটবেলার সংগ্রামের দিনগুলো চোখের সামনে ভাসে।

গলি থেকে রাজপথে উঠেও আজও সেই সাধারণ জীবনযাপনে বিশ্বাসী ইংল্যান্ডের তারকা ফুটবলার। এই ইউরো কাপে তিনটি ম্যাচেই গোল করেছেন। স্পর্শ করেছেন গ্যারি লিনেকরের রেকর্ড। জার্মান বধ করার পর ইংলিশ মিডিয়ায় তাকে নিয়ে প্রশংসার ছড়াছড়ি। একদিন যে দেশে সব হারিয়ে শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছিলেন, আজ সেই ইংল্যান্ডের মহানায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি। সত্যি ! বড় বিচিত্র ফুটবল।

সূত্র : নিউজ ১৮


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us