আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যাহারে পাকিস্তানের লাভ-ক্ষতি
ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মে থেকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই সব মার্কিন সেনা ফিরে যাবে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ সেনা কাবুল ছেড়েছে। সেনা প্রত্যাহার হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো বিশেষ করে পাকিস্তান বিপদাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আঞ্চলিক এই অবস্থানকে পাকিস্তান শান্তি ও স্থায়িত্বের জন্য ‘মারাত্মক স্তর’ মনে করছে। আফগানিস্তানের জন্যও এই স্তর আরো মারাত্মক হবে, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। পাকিস্তান এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে আফগানিস্তানে শান্তির জন্য নিজের দেশে অশান্তি ও বোমাবাজির খপ্পরে পড়ে চরম মূল্য দিয়েছে, যা এখনো চলমান। এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অর্থনৈতিক দুর্যোগ ঘাড়ে চেপে বসেছে।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের হিসাব মতে, ২০০২-২০১৬ সালে ১১৮ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু অর্থ দিয়েছে সর্বসাকুল্যে ১৪ বিলিয়ন যার কথা ট্রাম্প পই পই করে বলে পাকিস্তানের সব সাহায্য খাত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তান তখন আফগানিস্তানে সেনাদের রসদ সরবরাহের খরচ দাবি করে এবং যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ভারতের সাথে কাবুলের কোনো যোগাযোগের সড়ক নেই। এই জন্য ট্রাম্প রাগ করে বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানে ভারতের কাজ কী?’ অপরদিকে ইকনোমিক করিডোর মহাপ্রকল্পে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-চীন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হতে শুরু করেছে।
আসলেই সব সেনা ন্যাটো প্রত্যাহার হবে কি-না সেটি অবস্থার ওপর নির্ভর করছে। আফগান প্রেসিডেন্ট গনি বাইডেনের সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন! যারা বিদেশী সেনাদের সাথে এই দীর্ঘ সময় কাজ করেছে তারা এখন নিরাপত্তার অভাবজনিত ‘জ্বরে ভুগছে’। তালেবানরা যদি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলে তাহলে কি অবস্থার সৃষ্টি হবে তা শুধু কল্পনা করা যায়। যুক্তরাজ্য তিন হাজার আফগানকে সে দেশে নিয়ে যাবে। বাইডেন প্রশাসন আরো কিছু দেশ খুঁজছে যাতে আফগান সহযোগীদের সেখানে সরিয়ে নেয়া যায়। তালেবানরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে হুঁশিয়ার করেছে, যেকোনো সময় তারা রাজধানী কাবুল দখল করতে পারে। বাইডেন প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি কাবুল দখল করা হয় তবে ওয়াশিংটন সেটি মেনে নেবে না এবং পুরো সেনা প্রত্যাহার বিঘ্নিত হবে।
সেনা প্রত্যাহারে আফগানিস্তানে ক্ষমতার শূন্যতা আঞ্চলিক অশান্তির যেমন জন্ম দিতে পারে, তেমনি পাকিস্তানের জন্য অনেক সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে যেতে পারে। সঠিক পরিকল্পনা পুরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির সোনালি প্রভাত-আলোতে ঝকমকে হতে পারে।
বাইডেনের কাছে পুরনো পাকিস্তান আর নেই। অর্থের বিনিময়ে বিমান ঘাঁটি দিলে সেটি আফগানিস্তান, ইরান ও লাদাখ সীমান্তে চীনের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হতে পারে। ওই পরিস্থিতি ইমরান সরকারের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, ইমরান খান সেটি বুঝতে পেরেছেন। কাবুলের সাথে কাশ্মিরেও তিনি শান্তি চান। শান্তির জন্য সঠিক উদ্যোগ চাই। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতোই ইমরান খান মনে করেন, আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের এখন শুভলগ্ন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার