ঈমানের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ফেরাউন-কন্যার দাসী
ফেরাউনি আমল - প্রতীকী ছবি
ফেরাউন কন্যার চুল আঁচড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিল একজন মহিলা। কোনো একদিন ফেরাউন কন্যার চুল আঁচড়ানোর সময় সহসা চিরুণি তার হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল। তা উঠাতে গিয়ে আনমনে তার মুখ থেকে বের হয়ে পড়ল, বিসমিল্লাহ্। আল্লাহু আকবর।
এ কথায় ফেরাউনের কন্যার সন্দেহ হলে জিজ্ঞেস করল, ফেরাউন ছাড়াও কি তোমার কোনো আল্লাহ আছে নাকি? দাসী জবাবে বলল, ‘আমার আল্লাহ সেই যে ফেরাউনেরও আল্লাহ। শুধু ফেরাউন নয় সে আকাশ জমিনেরও আল্লাহ। তিনি একক তাঁর কোনো শরিক নেই। এ কথা শুনে রাগে ফেরাউনের কন্যা অগ্নিশর্মা হয়ে পিতার কাছে গিয়ে বলল, আব্বা আমার চুল বিন্যাসকারিণী বলে কি, আমার আল্লাহ সেই যে ফেরাউনেরও আল্লাহ, আসমান জমিনেরও আল্লাহ। তার কোনো শরিক নেই।
ফেরাউন বলল, এখনি তাকে হাজির করো।
সাথে সাথে তাকে হাজির করা হলো। সেও নির্ভয়ে হাজির হলো। আজ তার আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার ঈমানী পরীক্ষার দিন। এতে প্রাণ দিতে হলে দেবে। তারই ভালোবাসায় যদি জীবন দেওয়া যায় তবে তো সে জীবন ধন্য।
ফেরাউন জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো?
তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’।
ফেরাউন বলল, সে আল্লাহকে ছেড়ে এখনই আমার সামনে আমার আনুগত্য স্বীকার করো।
তিনি বললেন, না কিয়ামত পর্যন্তও তা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না।
নির্দেশ দেওয়া হলো তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলার। তৎক্ষণাৎ তাকে শুইয়ে তার হাতে ও পায়ে শিকল বাঁধা হলো। তারপর আল্লাহ ওয়ালাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য যে বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছু রাখা হতো তাও এনে তার উপর ছেড়ে দেওয়া হলো।
বলা হলো, এখনো সময় আছে তোমার আল্লাহকে ছাড়ো, নতুবা তোমাকে লাগাতার এ শাস্তি দেওা হবে।
তিনি বললেন, তুমি আমাকে যত পার শাস্তি দিয়ে দেখো আল্লাহ্ প্রতি ভালোবাসা এক বিন্দুও কমবে না, বরং বাড়বে।
ঈমানের অবস্থা এই রকম যে, যখন তার স্বাদ কোনো অন্তরে প্রবেশ করে তখন তা আর বের হয় না। হে ফেরাউন শুনে রাখো, তুমি যদি বছরের পর বছর আমাকে শাস্তি দিতে থাকো তবুও আমি আমার মহান প্রভুকে পরিত্যাগ করব না।
এই নেক মহিলার পাঁচটি সন্তান ছিল, যাদের একটি ছিল দুগ্ধপোষ্য। ফেরাউন তাকে উচিত শিক্ষা দিতে সন্তানদের তার মায়ের সামনে এনে প্রথমে বড় সন্তানকে গরম তেলের পাতিলে ফেলে দেয়।
তারপর বললো, ‘এখনো সুযোগ আছে নতুবা সব সন্তানকে হারাবে। তোমার দুগ্ধপোষ্য এই শিশুটিকেও হত্যা করা হবে। তিনি বললেন, তুমি যাই ইচ্ছা করো, তবুও আমি আমার আল্লাহকে ছাড়ব না।
এ কথা শুনে হুকুম দেয়া হলে পরপর চারটি শিশুকে গরম তেলের হাঁড়িতে ফেলে দেওয়া হলো। আর কিছুক্ষণ পরেই ভেসে উঠছিল তাদের হাড়গুলো। দুদ্ধপোষ্য শিশুসন্তানটি মায়ের বুকের উপর চড়ে দুধ পান করছিল। তাকেও টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে ধরল। এ অবস্থা দেখে মায়ের চোখে পানি আর ধরছিল না।
ছয় মাসের এই শিশুর মুখ থেকে কথা বের হলো, বলল, মা কেন কাঁদো? জান্নাত তোমার জন্য সুসজ্জিত করা হচ্ছে। মা জান্নাতে পৌঁছে আল্লাহর দিদার হাসিল হবে। এখনো কথা বলতে পারে না এমন শিশুর মুখ থেকে এ কথা শুনে মা অবাকই হলেন। ঈমান আরো মজবুত হলো।
জালিমরা শিশুটিকে হত্যা করল। এরপর তাকেও গরম তেলে ফেলা হলো। মা প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চির জান্নাতবাসিনী হলেন। তাফসিরে দুররে মানসুরে আছে, রাসূল সা: যখন মেরাজে যাচ্ছিলেন, বোরাক মিসরের কাছাকাছি এক ময়দানে পৌঁছল, তখন জান্নাতের খুশবু তিনি অনুভব করলেন।
বললেন, খুব সুন্দর সুঘ্রাণ পাচ্ছি, মনে হয় এটা জান্নাতের সুঘ্রাণ। জিবরাইল (আ:) বললেন, জান্নাত তো অনেক দূরে, মনে হয়, ফেরাউন কন্যার কেশ বিন্যাসকারিণী মহিলার কবর থেকে এ সুঘ্রাণ আসছে।
লেখক : সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: