তালেবানকে আফগান ভবিষ্যৎ মনে করছে সবপক্ষ?
তালেবানকে আফগান ভবিষ্যৎ মনে করছে সবপক্ষ? - ছবি সংগৃহীত
আফগানিস্তানের সব স্টেকহোল্ডার কার্যত তালেবান আধিপত্য তথা দেশটির ভবিষ্যৎ তালেবান শাসনের বাস্তবতা মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু করেছে অনেক আগ থেকেই। রাশিয়া ও চীনের সাথেও তালেবানদের আনুষ্ঠানিক- অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ভারতও তালেবানের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে। কাতার ভিত্তিক নেগোসিয়েশন টিমের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এভাবে আফগানিস্তানভিত্তিক সব পক্ষ তালেবানকে পছন্দ করুক বা না করুক দেশটার বাস্তবতা বা ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে তাদের মেনে নিচ্ছে।
গত ৩ জুন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমার, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংইয়ি এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি তাদের চতুর্থ ত্রিপক্ষীয় সংলাপ করেছেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর এটি প্রথম উচ্চস্তরের বৈঠক। মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের বিষয়ে সরাসরি কোনো উল্লেখ সেখানে পাওয়া যায়নি তবে এটি সভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলের প্রেক্ষাপট স্থির করেছিল।
প্রথমত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের উন্নতি করতে ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের কারণে আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। চীনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত চলমান বিশাল অবকাঠামো ও বাণিজ্য প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সাফল্যের জন্য মধ্যএশিয়ায় শান্তি প্রয়োজন। আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তান উভয় দেশের সরকারের সাথে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই দেশগুলোর ব্যাপারে চীনের উৎসাহও যথেষ্ট।
দ্বিতীয়ত সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রক্রিয়ায় এই সরকারের সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদেশমন্ত্রীরা আফগানিস্তান এবং এর আশপাশের দেশগুলোতে তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টি বা পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলন (ইটিআইএম), আইএসআইএস এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে সম্মত হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর অপারেশনগুলি দুটি দেশের সীমান্ত এলাকায় পরিচালনা হলেও আফগানিস্তানের পাটিকা প্রদেশে এর ঘাঁটি অবস্থিত। চীন ইটিআইএম সম্পর্কে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানে তাদের কাজ রয়েছে যার বিস্তৃতি জিনজিয়াংয়ের উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। তালেবানরা এই ধরনের সংগঠনকে কোনো তৎপরতা চালাতে না দেয়ার অঙ্গীকার করেছে।
লিবারেল ব্যবস্থার কী হবে?
এখন প্রশ্ন হলো, ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতন ঘটানোর পর আমেরিকা ও তার মিত্ররা আফগানিস্তানে যে লিবারেল একটি ব্যবস্থা চালু করতে চেষ্টা করেছিল তার কী হবে। আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট কাবুল সরকার সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় না নিলেও যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আশরাফ গনির সরকার একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হওয়ার বিষয়টি তালেবান মেনে না নিলে তাদের তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতে আপসে কর্তৃত্ব হস্তান্তর করতে হবে অথবা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। এর মধ্যে রাজধানী কাবুল ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী ও শহর কেন্দ্র ছাড়া আশরাফ গনি সরকারের কার্যকর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সর্বশেষ প্রাদেশিক রাজধানী কুন্দুজের চারপাশে তালেবানরা চলে এসেছে। যেকোনো সময় এর পতন ঘটতে পারে। অন্তত ৫০টি জেলা তালেবানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এবং সেখানে তালেবান প্রশাসন কার্যকর রয়েছে। অন্য জেলাগুলোর শহর বহির্ভূত এলাকায় তালেবানরা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারি বাহিনীর মনোবল অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। তারা এতদিন যুদ্ধ করে আসছিল ন্যাটোর বিমান সহায়তার উপর ভিত্তি করে। এই সহায়তা বন্ধ হয়ে আসার সাথে সাথে তাদের ভূমি হারানো ক্রমেই বাড়ছে।