মমতা-বিজেপি নতুন বিরোধ তুঙ্গে
মুকুল রায় ও মমতা ব্যানার্জি - ছবি সংগৃহীত
সংসদের মতো বিধানসভাতেও পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যানের পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পাবলিক অ্যাকউন্টস কমিটি শুধু যে সরকারের অডিট রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তাই নয়, সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে, প্রশাসনের কর্তাদের ডেকে পাঠায়, জেরা করে, তাই তাদের রিপোর্টও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতান্ত্রিক প্রথা হলো, পিএসি চেয়ারম্যানের পদটা প্রধান বিরোধী দল পায়। কিন্তু এবার পশ্চিমবঙ্গে পিএসি চেয়ারম্যানের পদে মুকুল রায়কে বসাতে চাইছেন মমতা।
ঘটনা হলো, পিএসি চেয়ারম্যান যে বিরোধী দলের প্রার্থীকে দিতেই হবে তার কোনো মানে নেই। এক্ষেত্রে স্পিকারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। খাতায়-কলমে মুকুল রায় এখনো কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে জিতে আসা বিজেপি বিধায়ক। তিনি অবশ্য সম্প্রতি তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দিয়েও মুকুল রায় তার বিধায়ক পদে ইস্তফা দেননি। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়ার সময় তিনি অবশ্য রাজ্যসভা সংসদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন।
বিজেপি স্পিকারকে জানিয়েছে, মুকুল রায় দলত্যাগ বিরোধী আইন ভেঙেছেন। তাই তার বিধায়ক পদ খারিজ করা হোক। এখন স্পিকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। দলত্যাগবিরোধী আইনের ফাঁক প্রচুর। আইন অনুসারে এক তৃতীয়াংশ সদস্য মিলে দলত্যাগ করতে পারেন। না হলে তার সংসদসদস্যপদ বা বিধায়কপদ খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু অতীতে বিভিন্ন রাজ্যের স্পিকাররা এনিয়ে বিভিন্ন মনোভাব দেখিয়েছেন। এমনকী উত্তর প্রদেশের এক স্পিকার রায় দিয়েছিলেন, দলত্যাগ হলো চলমান একটি প্রক্রিয়া। কত দিনের মধ্যে স্পিকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আইনে তাও বলা নেই।
মুকুল রায়কে নিয়ে কবে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা স্পিকার ঠিক করবেন। আগামী ২ জুলাই থেকে বিধানসভার অধিবেশন বসছে। সেখানে মুকুল বিরোধী আসনেই বসবেন বলে সূত্র জানাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, পিএসি চেয়ারম্যানের পদে মুকুল রায়কেই সমর্থন করবে তৃণমূল। তিনি বলছেন, 'মুকুল তো বিজেপি-র বিধায়ক। বিনয় তামাংয়ের দল মুকুলকে সমর্থন করছে। আমরাও সমর্থন করব।' বস্তুত, তামাংয়ের দলের সমর্থনেই মুকুল পিএসি-র সদস্য হওয়ার আবেদন করেছিলেন। ফলে আইনের চোখে তৃণমূলের সদস্য মকুল বিধানসভায় বিজেপি-র সদস্য।
বিজেপি মোট ছয়জনের নাম পিএসি সদস্য হিসেবে দিয়েছে। তাতে অশোক লাহিড়ী, শুভেন্দু অধিকারীরা আছেন। দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা অশোক লাহিড়ীকে পিএসি-র চেয়ারম্যান হিসাবে চান। কিন্তু মমতা বলেছেন, 'স্পিকার নিয়ম মেনে সিদ্ধান্ত নেবেন।' মুকুল বনাম অশোক লাহিড়ীর লড়াই হলে কী হবে? মমতা বলছেন, ‘ভোটে জিতে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করব। ভোটাভুটি হলে হবে। ভোট হলে জিতব।'
লোকসভায় পিএসি-র চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী বলছেন, 'পিএসি-র চেয়ারম্যান কে হবেন, স্পিকার সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে বিরোধী দলকেই তা দেয়া উচিত।'
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, 'প্রথা তো সব জায়গয় ভাঙা হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকরীর বাবা, বর্ধমানের তৃণমূল এমপি তো বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের সদস্যপদ খারিজ করার আবেদন তৃণমূল করেছে। সেই ফয়সালা তো এখনো নেয়া হয়নি। ফলে বিজেপি যেখানে বেকায়দায় তারা সেখানে চিৎকার করছে। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে, কেন্দ্রে তারাও প্রথা ভাঙছে। অন্য দলগুলিও রাজ্যে ভাঙছে।'
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, 'ফাঁক-ফোকড় খুঁজে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি থেকে সকলেই সরে আসতে চাইছে। ক্রমশ, এটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তাতে ক্ষতি হবে গণতন্ত্রের।'
সূত্র : ডয়চে ভেলে