কাশ্মিরের জটিলতা
কাশ্মির - ছবি সংগৃহীত
কাশ্মিরের যে অংশটি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত এটি আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট- বালতিস্থান সমন্বয়ে গঠিত। এ অঞ্চলটির আয়তন ৮৫ হাজার ৭৯৩ বর্গকিলোমিটার যা জম্মু ও কাশ্মিরের মোট দুই লাখ ২২ হাজার ২৩৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৩৭ শতাংশ। কাশ্মিরের অন্তর্ভুক্ত লাদাখ অঞ্চলকে চীন বরাবর তিব্বতের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছিল। ব্রিটিশরা ভারত বিভাজনের সময় এ অঞ্চলসহ ভারতের পূর্বাঞ্চলের অরুণাচল প্রদেশকে ভারতভুক্ত দেখালেও চীন কখনো এ দুটি অঞ্চলের ওপর ভারতের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়নি। ১৯৬২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে যে সীমান্ত যুদ্ধ সংঘটিত হয় তাতে চীন লাদাখ অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার ভূমি নিজ দখলে নিয়ে এ অঞ্চলটিকে আকসাই চীন নামে অভিহিত করে। সে সময় অরুণাচল রাজ্যটিকেও চীন নিজ দখলে নিয়েছিল কিন্তু চীন কর্তৃক একতরফা যুদ্ধ বিরতিকালীন চীন অরুণাচলের দখল ত্যাগ করলেও আকসাই চীন দখল অব্যাহত রাখে।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ১৯৬৩ সালে সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান গিলগিট বালতিস্থানভুক্ত পাঁচ হাজার ১৮০ বর্গকিলোমিটার ভূমি চীনের বরাবরে ভারতের সাথে কাশ্মির বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়া সাপেক্ষে ছেড়ে দেয়। পাকিস্তানের ছেড়ে দেয়া এ অঞ্চলটি বর্তমানে চীনের জিনজিয়ান উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অংশ।
১৯৯৯ সালে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কারগিল সীমান্তে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আরেকটি সীমিত যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যসহ স্বাধীনতাকামী কাশ্মিরি অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। যুদ্ধবিরতি পরবর্তী উভয় দেশের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ফিরে যায়।
ভারত বিভাজনের সময় যে জম্মু ও কাশ্মির একটি অখণ্ড অঞ্চল ছিল এ অঞ্চলটির তৎকালীন মহারাজার জনমানুষের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে আজ ত্রিধাবিভক্ত হয়ে এর ৪৩, ৩৭ ও ২০ শতাংশ যথাক্রমে ভারত, পাকিস্তান ও চীনের নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে তিনটি দেশের অন্তর্ভুক্ত কাশ্মিরের জনমানুষের মধ্যে তিন ধরনের মতাবলম্বী রয়েছে। এর একটি বড় অংশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে চায়। এর চেয়ে অপেক্ষাকৃত একটি ছোট অংশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকতে চায় আর ভারতের অংশ হিসেবে থাকতে চায় এ সংখ্যাটি ক্রমহ্রাসমান। চীনের দখলবহির্ভূত অঞ্চলের জনমানুষ যেমন চীনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী নয় অনুরূপ চীনের দখলকৃত অংশের জনমানুষও যে চীনের দখলে থাকতে চায় সেটিও স্পষ্ট নয়।
আজাদ কাশ্মির এবং গিলগিট ও বালতিস্থানের অধিবাসীদের প্রায় শত ভাগই মুসলিম। আজাদ কাশ্মিরের অধিবাসীরা গুরজার, জাঠ, পাহাড়ি রাজপুত, সুধান, আব্বাসী ও আওয়ান সম্প্রদায়ভুক্ত। অপর দিকে গিলগিট ও বালতিস্থানের অধিবাসীরা ইয়াসকুন, সীন, মোঘল, ওয়াখি, গুযার, বালটি, কাশ্মিরি সদাত ও হুনজা সম্প্রদায়ভুক্ত। উভয় অঞ্চল স্বশাসিত এবং কোনোটি থেকেই পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সদস্য নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অঞ্চল দু’টি পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আসার পর পাকিস্তান সরকার উভয় অঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে উভয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যেমন শিক্ষার প্রসার ঘটেছে এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। উভয় অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে স্বাধীনভাবে থাকার চেয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকার সংখ্যাই অধিক। উভয় অঞ্চলের জনগণের পক্ষ হতে একাধিকবার পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠলেও এর দ্বারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জনগণের স্বাধীনতার দাবি ক্ষুণœ হবে সে বিবেচনায় পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অগ্রসর হয়নি।