কাশ্মিরের কিছু তথ্য

ইকতেদার আহমেদ | Jun 28, 2021 05:02 pm
কাশ্মির

কাশ্মির - ছবি সংগৃহীত

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী গরু জবাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এমনকি রাজ্যটির বিধান সভার জনৈক মুসলিম সদস্য কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গরুর গোশত দিয়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকায় তিনি বিধান সভা অধিবেশন কক্ষে সহকর্মী হিন্দু সদস্য দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। ভারতবর্ষ বিভাজন পরবর্তী রাজ্যটির মুসলিম জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে অত্যাচার ও নিষ্পেষণের শিকার হওয়ার কারণে তারা ক্রমেই ভারতবিদ্বেষী হয়ে ওঠে। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে জাতিসঙ্ঘের গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী গণভোটের ব্যবস্থা করা হলে রাজ্যটির জনমানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে।

বর্তমানে স্বাধীনতার দাবিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের অভ্যন্তরে যে চারটি সংগঠন অধিক সক্রিয় এগুলো হলো লস্করে তৈয়বা; হিজবুল মুজাহিদীন, হরকাতুল মুজাহিদীন এবং জম্মু ও কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)। এ সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সদস্য রয়েছে এবং এরা স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের অভ্যন্তরে ভারতের সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছয় লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সেখানে বয়স ও নারীপুরুষ নির্বিশেষে মুসলিম জনগোষ্ঠী অত্যাচার, হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এদের হাতে রাজ্যের কোনো না কোনো অঞ্চলে প্রতিদিনই এক বা একাধিক হত্যাকা- ঘটছে।

কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে ভারতের সাথে পাকিস্তানের ১৯৪৭ ও ১৯৬৫ তে যে দু’টি যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ তে যে সীমিত যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এর কোনোটিই কোনো দেশের জন্য চূড়ান্ত বিজয় বয়ে আনেনি বরং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বিবাদের অবসান ঘটে। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে বৈরিতা এর মূলে রয়েছে কাশ্মির সমস্যা। কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে আধুনিক সমরাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত হওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতার কারণে উভয় দেশের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং উভয় দেশের জনমানুষ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা হতে মুক্ত হতে পারছে না।

ভারতের মতো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরেও দেশটির সেনাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির থেকে উদ্ভূত সিন্ধু, ঝিলম, চেনাব, সুতালজ, বিয়াস ও রাভি নামক ছয়টি নদী পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে। এ ছয়টি নদীর পানির হিস্যা নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে যে বিবাদ ছিল তা বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে সমাধা হয় এবং এর ফলে উত্তরের তিনটি নদী সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাবের পানির বৃহদংশ পাকিস্তান ভোগ করে আসছে; অন্যদিকে দক্ষিণের তিনটি নদী সুতালজ, বিয়াস ও রাভির পানির বৃহদংশ ভারত ভোগ করছে। উভয় দেশের জনমানুষের মধ্যে যারা শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বপক্ষে তাদের প্রশ্ন, পানির হিস্যার ব্যাপারে উভয় দেশ সমঝোতা অনুযায়ী চলতে পারলে অপর সব বিষয়ে সমঝোতা নয় কেন?

তাদের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে বিভাজিত ভারতবর্ষের ব্যাপকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত প্রদেশ কোন যুক্তিতে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর অন্তর্ভুক্তিকে যদি মেনে নেয়া হয় সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিচ্ছেদে জাতিগত জাতিসত্তা যদি মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ভারতের প্রত্যক্ষ সমর্থনের কারণে বাস্তব রূপ পেয়ে থাকে তাহলে জাতিগত জাতিসত্তার ভিত্তিতে জাতিসঙ্ঘের প্রস্তাব মতো গণভোট আয়োজনে কাশ্মিরের জনগণের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে বাধা কোথায়?


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us