কাশ্মিরের সীমান্ত

ইকতেদার আহমেদ | Jun 28, 2021 05:00 pm
কাশ্মির

কাশ্মির - ছবি সংগৃহীত

 

কাশ্মিরের সাথে পৃথিবীর পাঁচটি বৃহৎ শক্তির অন্যতম চীনের সীমানা রয়েছে এবং এ সীমানা ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশব্যাপী বিস্তৃত। তাছাড়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উত্তর-পূর্ব দিকের একটি বড় অংশ এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উত্তর দিকের ক্ষুদ্র একটি অংশ চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রথমোক্ত অংশটি চীন কর্তৃক ভারত হতে যুদ্ধ বিজয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অপর দিকে শেষোক্ত অংশটি পাকিস্তান কর্তৃক চীনের বরাবরে সমঝোতার ভিত্তিতে সমর্পণ।

সাম্প্রতিক সময়ে চীন দেশটির জিনজিয়ান প্রদেশ থেকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির অভিমুখী কারাকোরাম মহাসড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নীতকরণ এবং বেলচিস্তানস্থ গোয়াদর গভীর সমুদ্রবন্দর অবধি এটির বিস্তৃতি, পাকিস্তানের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও গোয়াদর অবধি সম্প্রসারণ এবং গোয়াদর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ বিনিয়োগ চলমান রয়েছে। এ বিনিয়োগ যে চীনের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সফলতা বয়ে আনবে সে বিষয়ে সবাই ওয়াকিবহাল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বৈরিতায় পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা যে চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে সে বিবেচনায় যে কোনো বৈরিতায় চীনের অবস্থান যে পাকিস্তানের স্বপক্ষে হবে এটি কারো না বোঝার কথা নয়।

আর সে কারণে বর্তমানে কাশ্মিরকেন্দ্রিক ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কোনো যুদ্ধে প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহারে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমতাবস্থায় যে কোনো দেশ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে তা উভয় দেশের অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে এতদঅঞ্চলের জনমানুষের ব্যাপক জীবনহানি ঘটাবে। বিশ্ব এ ধরনের বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হোক এটি এতদঞ্চলের কতিপয় উগ্র জনমানুষ ছাড়া অন্য কারো কাম্য নয়।

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে যারা জনমানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এরা সবাই স্বাধীনতাকামী। অথচ ভারত এদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে সদা তৎপর। ভারতের কাশ্মিরের এসব স্বাধীনতাকামীদের সাথে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এবং ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে ছিল তাদের কোনো পার্থক্য নেই। কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যাচার ও নিষ্পেষণ এতই বর্বর ও নির্মম যে তা আজ বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। আর এ কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতস্থ কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র চারজনের আকস্মিক হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের কোনো বড় দেশ ভারতের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ভারত কখনো দেখা গেছে ধর্মীয় জাতিসত্তার প্রবক্তা আবার কখনো জাতিগত জাতিসত্তার প্রবক্তা। কাশ্মিরের ক্ষেত্রে উভয় অবস্থানের যে কোনোটির ভিত্তিতে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে গণভোট আয়োজনে তিনটি দেশের নিয়ন্ত্রণাধীন কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দেয়া হলে তা কাশ্মির সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের ভিত হিসেবে কাজ করবে এ বিশ্বাস এ উপমহাদেশের জনমানুষের মধ্যে গভীরভাবে গ্রথিত।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us