হামাস গাজা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক। তিনি শনিবার এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে দ্যা জেরুসালেম পোস্ট। বিদেশে অবস্থারত হামাসের নীতি নির্ধারণী সংস্থার সহকারী প্রধান মুসা আবু মারজুক বলেন, ইসরাইলের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি করার মাধ্যমে গাজা পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাকে হামাস সমর্থন করে না।

আরাবি ২১ অনলাইন পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুসা আবু মারজুক বলেন, গত মাসে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকা পুনর্গঠন নিয়ে হামাস ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।

রামাল্লাভিত্তিক ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সরকার গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের দ্বায়িত্ব নিতে মরিয়া। এমনকি বিভিন্ন দেশ থেকে যে অর্থ আসছে তার দায়িত্ব নিতে চায় তারা। হামাস তার পক্ষ থেকে মিসর ও জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে যে গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এককভাবে কোনো দ্বায়িত্ব পাবে না। সকল ফিলিস্তিনি দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে তার অংশ হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

হেবরনের নিজার বানাতের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও হামাসের মধ্যে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সেনারা নিজার বানাতকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে অভিযেগ পাওয়া গেছে। নিজারকে গত বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেতাদের ব্যাপক দুর্নীতির সমালোচনা করায় ও এসব বিষয় নিয়ে কথা বলায় নিজার বানাতকে হত্যা করা হয়েছে বলে হামাসের নেতা ও কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন। হামাসের নেতা ও কর্মকর্তারা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান মোহাম্মদ স্তেয়েহকে পদত্যাগ করতে বলেন আর ইসরাইলের সাথে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সহযোগিতার সম্পর্ককেও বাতিল করতে বলেন।

হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক অভিযোগ করে বলেন, গাজা পুনর্গঠনের সমুদয় অর্থ তাদের কাছে দেয়ার দাবি তুলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ শহরের পুনর্গঠন কার্যক্রম ব্যাহত করছেন।

তিনি বলেন, আমরা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ওপর বিশ্বাস করতে পারছি না। কারণ, ভ্যাকসিন নিয়ে তারা ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের দুর্নীতি করেছে। তারা যে গাজা পুনর্গঠনের অর্থ নিয়েও দুর্নীতি করবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে?

তিনি আরো বলেন, হামাস গাজা পুনর্গঠনে প্রত্যেককে স্বাগতম জানায়। যারা কাতার, মিসর, কুয়েত, অন্যান্য দেশ, জাতিসঙ্ঘ ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে এ কার্যক্রমে অংশ নিতে চান তাদের স্বাগতম জানাচ্ছি। কারণ, হামাস গাজার ৭৫ শতাংশ শরণার্থী জনগণের দায়িত্ব নিয়েছে।

সূত্র : দ্যা জেরুসালেম পোস্ট

ইসরাইলি জেলে ৫৩ দিনের অনশনে আবু আতওয়ান

বেআইনিভাবে আটক হওয়ার প্রতিবাদে ইসরাইলি জেলে ৫৩ দিনের অনশনে আছেন গাদানফার আবু আতওয়ান। ইসরাইলি প্রশাসনের অবৈধ আটকাদেশের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে অনশন করায় তার স্বাস্থ্য দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রিজনার কমিশন।

ইসরাইলি কারাগারে আটক ফিলিস্তিনিদের নিয়ে কাজ করা ‘ফিলিস্তিন প্রিজনার কমিশন’ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক আদেশে বন্দী গাদানফার আবু আতওয়ান দীর্ঘ দিন ধরে অনশন করে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে যান এবং পরে ইসরাইলের একটি হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি কোমায় চলে যান। তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে।’

এদিকে আবু আতওয়ানের পরিবার জানিয়েছে যে তাদের সন্তান কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

দু’দিন আগে ইসরাইলের হাইকোর্ট জানিয়েছে, অনশন করা বন্ধ করলে আবু আতওয়ানের প্রশাসনিক আটকাদেশ স্থগিত করা হবে। কিন্তু, আবু আতওয়ান দাবি করেছেন প্রশাসনিক আটকাদেশ স্থগিত করার বদলে তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হোক।

মেডিকেল পরীক্ষায়ও দেখা গেছে যে প্রকৃতপক্ষেই আবু আতওয়ানের স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। একারণে ইসরাইলের সামরিক প্রসিকিউটার আদালতকে বলেছেন, ‘আবু আতওয়ানের প্রশাসনিক আটকাদেশ স্থগিত করা হোক।’

ইসরাইলি প্রশাসনের অবৈধ আটকাদেশে বন্দী ফিলিস্তিনিরা প্রায়ই অনশন ধর্মঘট করে থাকেন, যাতে করে তাদের এ অবৈধ আটকাদেশের সমাপ্তি হয়। এ ধরনের প্রশাসনিক আটকাদেশ কয়েক বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে।