ইমরান খানই কি আমেরিকার ভরসা!

ইমরান খান জো বাইডেন - ছবি সংগৃহীত
এক্সিও ম্যাগাজিনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাক্ষাৎকার (যেটা বহুল প্রচার করা হয়েছে বাংলায়; প্রথম আলোতে অনুবাদও হয়েছে) এর কথা ধরি তবে, ইমরানই আমেরিকার শেষ ভরসা- এই মনে করে বাইডেন প্রশাসন তাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছে। কিন্তু ইমরান ততই শক্ত করে বলছেন, পাকিস্তানে আমেরিকার কোনো ঘাঁটি করতে তিনি দেবেন না। ওদিকে তালেবানেরাও আমেরিকার সবচেয়ে ছোট কোনো সামরিক স্থাপনাও আগেই নাকচ করে দিয়েছে। এর সোজা অর্থ আমেরিকা তাহলে কোথায় যাবে? তাহলে আলকায়েদা বা অন্যান্য ছোট বা বড় সশস্ত্র গ্রুপ যারা এতদিন আমেরিকান বোমা খেয়েও চুপ ছিল, চেপে থাকা এদের সাথে আমেরিকার যে সম্পর্ক ও ক্ষমতার ভারসাম্য এতদিন ছিল, এর কী হবে? সেটা তো আর আগের ভারসাম্যে থাকবে না। সব ঢলে পড়তে বাধ্য!
বাস্তবতা হলো, আমেরিকার সাথে আর কেউ নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধা দূরে থাক কোনো সম্পর্কই রাখতে চাইছে না। এটাই প্রমাণ করে, আমেরিকার গ্লোবাল নেতা বা পরাশক্তি থাকার দিন আজ কোথায় ঠেকেছে। অতএব এই আমেরিকার আড়ালে থেকে যে ভারত আমেরিকাকে সার্ভিস দিয়ে গত ২০ বছর মাখন খেয়ে গেছে, এর এখন কী হবে?
এ অবস্থায়, আফগান ইস্যুতে ভারত-আমেরিকার অবস্থান এখন যার যার নিজেকে বাঁচাও, নিজে বাঁচলে বাপের নাম! খুব সম্ভবত, আমেরিকার সাথে থাকলেই হয়তো ভারতের বিপদ বেশি বলে ভারতের রিডিং। দিন এখন ভারতের পক্ষে আর নয়! আবার তাহলে ভারত কি এখন একেবারেই সবদিক থেকে হাত গুটিয়ে নেবে, এই ইস্যুতে অন্তত আমেরিকা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? সেটা ভারত বাস্তবায়ন করতে পারলে হয়তো এখন বেঁচেই যেত! এ কথার মানে কী? এর বাস্তবায়নও ভারতের হাতে আর নেই, তাই কী? হ্যাঁ, ঠিক তাই। কেন?
ভারতের মানে, সুনির্দিষ্ট করে এটা মোদির জন্য একেবারে বিজেপি-আরএসএস গোষ্ঠী ও তার হিন্দুত্ববাদের পাপ। তার ৫ আগস্ট ২০১৯ সালের ওই ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মিরকে একেবারে গায়ের জোরের ভিত্তিতে মানে ‘আইনগতভাবে দখলদার’ হিসেবে পুরো কাশ্মিরই দখল করে ফেলেছিল। কারণ ওই দিন ভারতীয় সংসদে অমিত শাহ পাকিস্তান ও চীনের কাশ্মির অংশও ভারতের বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন হিন্দুত্ববাদের প্রবল জোশে। কাশ্মির আর ভারতের কোনো রাজ্যের মর্যাদাতেও নাই বলে ঘোষিত হয়ে আছে সেই থেকে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী মোদির কানে এখন পানি ঢুকেছে মনে হচ্ছে! তিনি টের পেয়েছেন আফগানিস্তান দখলের আগামী ২০তম বার্ষিকীতে আমেরিকা আফগান ছেড়ে একেবারে চলে গেলে, এর পরে সংশ্লিষ্ট যেসব গোপন ও সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতার সম্ভাবনা, এদের বিরুদ্ধে ভারত একেবারেই ডিফেন্সলেস। এটা আবার ভারতীয় কাশ্মিরকে বড় সশস্ত্রতার পথে যেতে উস্কে তুলতে পারে। মূল কারণ গত দুই বছরের মোদি সরকারের সাপ্রেশন!
তাহলে ভারতের দিক থেকে দাঁড়াল, এক দিকে সেই আমেরিকার আর মুরোদ নেই, আবার মোদি ইমরানের পাকিস্তানের সাথেও এতদিন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে, উল্টা বোমা হামলার নাটক করেছে চরমে। সরাসরি প্রচার করেছে ‘পাকিস্তান ঘৃণা’। ইমরানের পাকিস্তানের সাথে ন্যূনতম আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক করতে বা দেখাতে চায়নি। কারণ চরম মুসলমান বিরোধী ঘৃণা জাগানো- এটাই তো মোদির জন্য ভোটে হিন্দু ভোট মেরুকরণের একমাত্র কৌশল। কাজেই পাকিস্তানের সাহায্য চেয়ে একবার হাত বাড়িয়ে বসলে এরপর মোদির নির্বাচনে জেতার বয়ানের কী হবে?
অতএব ইতোমধ্যেই মোদি উল্টা রাস্তা ধরেছেন। তিনি নিজ কাশ্মিরের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন; তা প্রকাশিত হয়ে গেছে। তিনি পরিষ্কার করেই কাশ্মিরি রাজনীতিবিদদের সাথে একটা বৈঠক করে ফেলেছেন। কাশ্মির আবার রাজ্য স্ট্যাটাস ফেরত পেতে পারে মানে সারকথায় তিনি হয়তো আর কঠোর দমননীতি নয়, আবার নির্বাচনী জানালা খুলতে চাচ্ছেন যদি পোষায়, এমন ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছেন!
কিন্তু মূল কথা, ভারত আফগানিস্তান থেকে নিজেকে একেবারেই প্রত্যাহার করে নিলেই কি ভারতের কাশ্মির মোদির নিয়ন্ত্রণে থাকবে? সোজা জবাব হলো, এর ন্যূনতম নিশ্চয়তাটুকুও নেই। হিন্দুত্ববাদের এমনই মহিমা। ভারতের কাছে এখন শুধু বাইডেনের আমেরিকাই নয়, ক্রমশ খোদ হিন্দুত্ববাদই এক লায়াবিলিটি হয়ে উঠতে চাইছে যেন।
অতএব আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারতের জন্য কোনো অবস্থানই আশাপ্রদ নয়। সে কারণে সম্ভবত আফগানি অ্যাকাডেমিক মোরাদিয়ান এভাবে বলেছেন। ভারতের জন্য ন্যূনতম নিশ্চয়তাও কোথাও নেই। আবার ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্কও খুবই খারাপ মাত্রায়। ইরানকে চরম অপমানজনক অবস্থায় ফেলার পরে আমেরিকার কথা শোনা ভারত আর সম্পর্ক রাখতে চায় নাই, ছুড়ে ফেলেছে। আজ এখন ভারতেরই মুখ নেই যে, ইরানের সাথে আবার কথা বলে আফগান ইস্যুতে কিছু পরামর্শ নেয় অথবা ওই অঞ্চলে ভারতের কোথাও পা দেয়ার জায়গা অন্তত ফেরত পায়। মনে হচ্ছে, কূটনৈতিক সব ইস্যুতে মোদির এখন সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে হাজির হবে এতদিনের হিন্দুত্ববাদী পদক্ষেপগুলো!
ওদিকে আমেরিকা এখনো আশা করে আছে যে, অন্তত গোপন ঘাঁটি বা গোপন তৎপরতা চালানোর মতো জায়গা ইমরানের পাকিস্তান আমেরিকাকে দেবে!
সত্যি দুনিয়া বড়ই অদ্ভুত জায়গা! কখন যে কার দিন আসে। সে কারণেই সম্ভবত দুঃখের দিনের পরে সবাই বলে ওঠে- হামারা দিন ভি আয়েগা! সব জুলুম বে-ইনসাফের বিচারের দিন হয়ে যায় যেন সেটা!