কাশ্মির প্রসঙ্গে নেহরুর অপরাধের শেষ নেই
নেহরু - ছবি সংগৃহীত
কাশ্মির প্রসঙ্গে নেহরুর অপরাধের শেষ নেই। প্রধানতম অপরাধ, তিনি জাতিসঙ্ঘের রিকমেন্ডেশনে গণভোটের পথে যাননি। তবু চক্ষুলজ্জায় তিনি ভারতের কনস্টিটিউশনে ৩৭০ ধারা যুক্ত করে কাশ্মিরকে ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার রাজ্য’ হিসেবে ভারতের মধ্যে যুক্ত করে নেয়াটাকে জাস্টিফাই করতে চেয়েছিলেন; যদিও সেসব বিশেষ মর্যাদা কিছুদিন পরপর খুলে নেয়া হয়েছিল। তবু রাজ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাটা কোনোমতে টিকে ছিল। আর সেটাই ১৯৮৭ সালে শেষ করে দেয়াতেই কাশ্মির সশস্ত্র পথে চলে যায়। সরকারি হিসাবে কাশ্মিরের সশস্ত্র পথে যাত্রা জুলাই ১৯৮৮ সাল থেকে বলা হয়ে থাকে।
ভারতের ক্যারাভান ম্যাগাজিনকে ধরা হয় হাতেগোনা ‘নিরপেক্ষ ও পেশাদার জার্নালিজমের অন্যতম উদ্যোগ’ হিসেবে। গত ২০১৬ সালের তাদের প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই প্রসঙ্গগুলোই বিস্তারে তুলে এনে এক রিপোর্ট করা হয়েছিল। খুবই সংক্ষেপে বললে পেছনের সেই কাহিনী হলো- রাজীব গান্ধী ও ফারুক আবদুল্লাহর মধ্যে নাকি বন্ধুত্ব খুবই মারাত্মক সলিড ছিল। বাস্তবত ফারুক আবদুল্লাহর বাবা শেখ আবদুল্লাহ ছিলেন মূলত নেহরুর এক কাশ্মিরি প্রডাক্ট বলা যায়। কংগ্রেসের ‘নেহরুর কাশ্মিরি ভার্সন’। যে কাজ নেহরু নিজে করতে পারতেন না সেটা তিনি অনায়াসেই শেখ আবদুল্লাহকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারতেন, এতটাই অনুগত ছিলেন শেখ আবদুল্লøাহ। আসলে কাশ্মিরের রাজা হরি সিং ও তার প্রশাসনিক চিফ সেক্রেটারিকে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে নেহরুর হাতিয়ার হয়ে থাকতেন এই ফারুক আবদুল্লাহ। ফলে রাজীব গান্ধী ও ফারুক আবদুল্লাহর মধ্যকার ‘সলিড বন্ধুত্ব’ বুঝতে আমাদের কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু কতদূর এর সীমা? নির্বাচনে জবরদস্তি করে বন্ধুকেই জিতিয়ে এনে দেখাতেই হবে? বন্ধুত্ব কত গভীর? এতদূর?
‘ক্যারাভান’ বলছে ওই বন্ধুত্বের মাঝেই বাধা হয়ে এসে গিয়েছিলেন আরেক নেতা মুফতি সাঈদ যিনি আসলে ভারতীয় কাশ্মিরের কয়েকটা ইসলামী দলের অ্যালায়েন্সে গড়া এক দলের মূল নেতা, যে দলের নাম মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট। কারণ তিনি জিতে যাচ্ছিলেন ওই নির্বাচনে।
বর্তমান লেখার প্রসঙ্গ তো আফগানিস্তান সেখানে কাশ্মির প্রসঙ্গ এলো কোথা থেকে? উপরে কথা বলছিলাম ভারতের নিজেকে এক ভিক্টিম বা ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি হিসেবে সাজিয়ে বুশের ওয়্যার অন টেররের প্রোগ্রামে ঢুকে পড়া আর সহানুভূতি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়ার কথা। ১৯৮৭ সালের ওই নির্বাচনী কারচুপি যা থেকে পরে ১৯৮৮ সাল থেকে ভারতীয় কাশ্মিরের রাজনীতি সশস্ত্র পথে যাত্রা করেছিল, কংগ্রেস ও পরে বাজপেয়ীর বিজেপি নির্বাচনী কারচুপির ঘটনা লুকিয়ে এটাকেই কাশ্মিরের সশস্ত্রতা ‘সীমা পারকে আতঙ্কবাদ’ বলে পাল্টা মিথ্যা বয়ান খাড়া করেছিল; যাতে অর্থ হয়ে যায়, সীমা পার মানে পাকিস্তান থেকে বা পাকিস্তানি কাশ্মির থেকে আতঙ্কবাদ বা জঙ্গিদের আসার কারণেই ভারতের কাশ্মিরের সমস্যা শুরু হয়েছে।
আর সর্বশেষে আফগানিস্তানে বুশের দখলি হামলার পরে বুশ-বাজপেয়ী একমত হয়ে যান যে, তারা ‘একই সন্ত্রাসবাদের’ শিকার হয়েছেন। আসলে ভারত নাকি আগে থেকেই ইসলামী জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের শিকার (নির্বাচনী কারচুপি নয়)- এ কথাটি বুশের আমেরিকা স্বীকার করে নেয়ার বিনিময়েই ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল যে, আমেরিকাও ‘একই সন্ত্রাসবাদের’ শিকার। অতএব ওয়্যার অন টেরর-ই সবার উপরের সত্য এবং ভারত-আমেরিকা তাই দুজনে দুজনার। আর সেই থেকে উল্টা আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারতও বিরাট এক আমেরিকান পার্টনার হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
আবার আমেরিকার আফগানিস্তানে বোমা ফেলতে, হামলা চালাতে গেলে পাশের দেশে একটা সামরিক ঘাঁটি দরকার হয় তাই এ থেকে লঞ্চিং প্যাড হিসেবে পাকিস্তানকেই আমেরিকার দরকার। অতএব এই যুদ্ধে আমেরিকার পক্ষে পাকিস্তানকে শামিল থাকতেই বাধ্য করা হয়েছিল। নইলে পাকিস্তানকেই আমেরিকার বোমা হামলা খেয়ে পুরান প্রস্তর যুগে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে আমেরিকান উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে ফোনে হুমকি দিয়ে রাজি করিয়েছিলেন। সে কথা মোশাররফ ‘লাইন অন ফায়ার’ বইয়ে উল্লেখ করে রেখেছেন। আর এখান থেকেই আমেরিকা সবসময় উল্টা ভারতকে দিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলিয়ে গেছে যে, খোদ পাকিস্তানই এক সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র। অর্থাৎ ভারতকে অ্যামেরিকা ব্যবহার করেছে পাকিস্তানের উপর চাপ রাখতে।
দিন সবারই একদিন আসে! তাহলে এটা কি সেই বিশেষ মুহূর্ত? দিন বদলানোর দিন? দিন সবারই একদিন আসে! সেরকম? কেন এমন বলছি?