আফগানিস্তানে আমেরিকার সমস্যা

গৌতম দাস | Jun 27, 2021 06:06 pm
বাইডেন ও ট্রাম্প

বাইডেন ও ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত

 

দাবুদ মোরাদিয়ান একজন তাজিক বংশোদ্ভূত আফগান ও হেরাত প্রদেশের বাসিন্দা। তার নাম বাংলায় ঠিকমতো উচ্চারণ করলাম কি-না জানি না। কারণ এটা আফগানি এবং বিশেষ এথনিক নাম। তাই আগেই মাফ চেয়ে রাখলাম। একাডেমিকভাবে তিনি ইউকে মানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি। কাজ হিসেবে তিনি বর্তমান কাবুল সরকারের পররাষ্ট্র বিভাগের পরামর্শদাতা ও এক থিংকট্যাংকের আফগান শাখার ডিরেক্টর। তিনি সম্প্রতি এক প্রবন্ধ লিখেছেন, যা ছাপা হয়েছে ভারতের দ্য প্রিন্ট পত্রিকায়। শিরোনাম বাংলায় বললে হয়, ‘আফগানিস্তানের সাথে জড়িয়ে থাকবে কি থাকবে না তা ভারতের জন্য কোনো সহজ প্রশ্ন নয়’। কিন্তু এর চেয়ে বড় কথা, তার লেখার একটি বাক্য আবার এ রকম- ‘আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে পালিয়ে যাওয়া নয়াদিল্লির জন্য একটা পলিসি অপশন তো বটেই; ঠিক যেমন ১৯৬২ সালের মতো, চীনের সাথে যুদ্ধের পরে ভারত তিব্বতের লাসায় থাকা ভারতের কনস্যুলেট জেনারেল অফিস গুটিয়ে নিয়েছিল। ভারত অবশ্য ইতোমধ্যেই হেরাত ও জালালাবাদে ভারতের দুই আফগান কনস্যুলেট অফিস গুটিয়ে নিয়েছে।’

কিন্তু মজার কথা হলো, দ্য প্রিন্ট পত্রিকা লেখার সারাংশ হিসেবে এই প্রথম বাক্যটা- আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে চলে যাওয়া নয়াদিল্লির জন্য একটা পলিসি অপশন তো বটেই; ঠিক যেমন ১৯৬২ সালের মতো- এতটুকুই তুলে নিয়ে সেটে দিয়ে রেখেছে।

আমেরিকায় নাইন-ইলেভেন হামলার এক মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ আফগানিস্তানে সামরিক হামলা চালিয়ে দখল নিয়েছিলেন। সে সময়ই আমেরিকার বিদগ্ধজন আপত্তি তুলে বলেছিলেন, এটা অপ্রয়োজনীয় ও বাড়াবাড়ি। মশা মারতে কেউ কামান বের করলে তার উদ্দেশ্য খারাপ বলতেই হয়। কিন্তু আফগানিস্তানে সামরিক হামলা করে ফেলার পরে আমেরিকার জন্য এই হামলার পক্ষে বিশ্ব-জনমত জড়ো করা আর এই হামলাকে সমর্থক রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়ানোর ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ ছিল না। গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসিতে ভিন্ন কিছু করার আর সুযোগ ছিল না। সেই সূত্রে এশিয়ায় এক বড় জনসংখ্যার রাষ্ট্র ভারতের সমর্থন আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এখান থেকে ভারত নিজেকে এক ভিক্টিম বা ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি হিসেবে সাজিয়ে আমেরিকার কাছ থেকে সহানুভূতি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
আর এখান থেকেই কথিত জঙ্গিবাদ বা টেররিজমের ব্যাখ্যা ও যুদ্ধ প্রসঙ্গে ভারত-আমেরিকার এক ‘আনহোলি অ্যালায়েন্সের’ যাত্রা শুরু হয়েছিল যা এখন থেকে ক্রমশ অন্তত ভারতের বিরুদ্ধে তো যাবেই মনে হচ্ছে!

এতে ভারতের দিক থেকে ‘সবচেয়ে বড় মিথ্যা’ ফলে বড় দুর্বলতা ছিল, কংগ্রেসের ১৯৮৭ সালের ভারতীয় কাশ্মিরের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি। এই ব্যাপক কারচুপি থেকেই কাশ্মিরের রাজনীতি এরপর সশস্ত্র পথে রওনা দিয়েছিল বলে অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত আছে। এমনকি এ প্রসঙ্গে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গবেষণায় প্রাপ্ত অনেক রিপোর্টও পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়, “কোনো দেশের জনপ্রতিনিধিত্ব বা প্রতিনিধি নেতা নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার বিপদ কী, কেন এ কাজ করলে এরপর পরিস্থিতি সশস্ত্র রাজনীতির পথে চলে যায় এর ‘ক্লাসিক উদাহরণ হলো’ ১৯৮৭ সালের ২৩ মার্চের কাশ্মিরের নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি।’’ অর্থাৎ পাবলিককে তার কথা বলা বা তার মতামত প্রকাশের পথ বন্ধ করে দিলে, প্রকাশিত হতে না দিলে, নির্বাচিত হতে না দিলে- এর পরে একে সশস্ত্র পথে যেতে আহ্বান রাখলে সে সহজেই সে পথ সমর্থন করে এগোবেই।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us