ওমর ফারুক ও পাহাড়ে ইসলাম
ওমর ফারুক ত্রিপুরা - ছবি সংগৃহীত
সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলায় ওমর ফারুক (৫৪) নামে মসজিদের এক উপজাতীয় ইমাম অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ হারালেন। ২০১৪ সালে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করেন। তার প্রচেষ্টায় ৩০টি অমুসলিম পরিবার ইসলামের পথে আসে। ওমর ফারুক প্রত্যন্ত এলাকায় টিনের একটি মসজিদ গড়ে তোলেন এবং নওমুসলিমদের নিয়ে নিয়মিত ওই মসজিদে ইমামতি করতেন। এবার এই হত্যাকাণ্ডে পাহাড়বাসী মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত নবদীক্ষিত পরিবারের মুসলিম সদস্যরা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ওমর ফারুক ও নবদীক্ষিত পরিবারের সদস্যদের হুমকি এবং তাদের ধর্মকর্ম সম্পাদনে বাধা দিয়ে আসছিল আগে থেকেই। ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী একটি মেসেজ দিয়ে গেল যে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে, ইসলামের দাওয়াতি তৎপরতা চালালে এবং মসজিদ নির্মাণ করলে এভাবে লাশ পড়বে। এখানে লক্ষ করার মতো, আর তা হলো মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং রাজধানীকেন্দ্রিক কথিত প্রগতিবাদী সুশীলসমাজ পার্বত্য চট্টগ্রামে পান থেকে চুন খসলে হইচই ফেলে দেন। টকশো করেন। নিবন্ধ লিখেন। মানববন্ধনে জড়ো হন। কিন্তু ওমর ফারুকের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে তাদের ইচ্ছাকৃত নীরবতা বেশ লক্ষণীয়। সাধারণ মানুষের মনে তাদের ভূমিকায় প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে।
নওমুসলিম ইমাম ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যার বিচার দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে এর বিচার দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডটি যদি অন্যভাবে হতো, যেমন কেউ যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করার পর খুন হতেন তাহলে প্রতিক্রিয়াটি হতো ভিন্ন। যারা এখন চুপ করে আছেন তারা তখন ঝাঁপিয়ে পড়তেন প্রতিবাদে। অপরাধীদের গ্রেফতার করার চেষ্টাও অনেক জোরদার হতো। মনে হচ্ছে, ওমর ফারুক মুসলমান হয়ে খুন হয়েছেন বলে সেটা হচ্ছে না। ইমাম হত্যাকাণ্ডের চেয়েও বড় সঙ্কট এটিই। অন্য ধর্মের মানুষের মতো প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে মুসলমানরাও যেকোনো ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকার অধিকারী। এটা বুঝতে চান না অনেকে।’
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার সমানে অব্যাহত রয়েছে এবং এতে কোনো বাধা নেই। মুসলমানরা যদি পাহাড়ে মানবসেবায় এগিয়ে আসে, ধর্মপ্রচার চালায় বা নবদীক্ষিত পরিবারের শিশুদের দ্বীনি তালিম দেয়ার প্রচেষ্টা চালায়, তখন হইচই পড়ে যায়। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হয়। তদুপরি এক শ্রেণীর মিডিয়া বিদ্বেষমূলক স্টোরি প্রকাশ করে। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি The Dhaka Tribune নিউজ পোর্টালে CHT : Forced Religious Conversion and Human Trafficking Threaten Indigenous Children শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপে। পুরো প্রতিবেদনটি একপেশে ও মনগড়া। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ২৬টি উপজেলার দুর্গম বা গহিন উপত্যকা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। তাদের মাসিক চাঁদা না দিয়ে কেউ কোনো ব্যবসা করতে পারে না। এক গ্রুপ নয়, কয়েক গ্রুপকে বখরা দিতে হয়। তাদের হাতে মানুষ জিম্মি। সন্ত্রাসীরা ‘সরকারের ভেতরে আরেক সরকার’ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট সঙ্ঘাতে একে অপরকে গুলি করে হত্যা করা সেখানে নৈমিত্তিক ঘটনা।
বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারার ক, খ, গ উপধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে- এ দেশে যে কেউ স্বেচ্ছায় ধর্মাবলম্বন, ধর্মচর্চা, ধর্মানুশীলন, ধর্মপ্রচার, ধর্মীয় উপাসনালয় স্থাপন করতে পারবেন। এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। সংবিধানের ভাষ্যমতে, যেকোনো ধর্মপ্রচার বা স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তন করতে আইনত কোনো বাধা নেই। তবে দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরণ ফৌজদারি অপরাধ। পার্বত্য চট্টগ্রামে মোট জনসংখ্যা ১৮ লাখের কাছাকাছি। সেখানে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ৫১ শতাংশ। অপর দিকে, বাঙালিদের অনুপাত ৪৯ শতাংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। পার্বত্য চট্টগ্রাম পুরো বাংলাদেশের আয়তনের এক দশমাংশ। কিন্তু জনসংখ্যা গোটা দেশের জনসংখ্যার ১ শতাংশ মাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি নৃগোষ্ঠীর অনেক সদস্য সরল, শান্তিপ্রিয় ও অতিথিপরায়ণ। বাংলাদেশের সমতলে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষা ও ব্যাংকিং সেক্টরসহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এসব নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা কর্মরত রয়েছেন। তারা রাষ্ট্র ও সমাজসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আমাদের বক্তব্য কেবল পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ওমর ফারুক হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো সময়ের দাবি।
স্মর্তব্য, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট কতিপয় বেসরকারি সেবাসংস্থা চিকিৎসা, সমাজ ও মানবতার সেবার আড়ালে মূলত পার্বত্য এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে ইউরোপীয় জীবনাচার ও দর্শনের দিকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। মুঘল আমলেই এদেশের প্রতি এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের দৃষ্টি পতিত হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে মিশনারিরা ভিনদেশী সংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মান্তরের যে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছেন, পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তার ক্রমবিকাশ সাফল্যের সাথে অব্যাহত থাকে। তাদের স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা-উপকরণ বিতরণ, হাসপাতাল স্থাপন, ঋণ প্রদান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, দারিদ্র্যবিমোচন, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি মুখরোচক কর্মসূচির আড়ালে রয়েছে এ দেশে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচার করার নীলনকশার বাস্তবায়ন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগ চাকমা ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ত্রিপুরা জাতি হিন্দু ধর্মের আর মিজো, বম ও খেয়াং খ্রিষ্টান। কিছু কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী’ (বাংলাপিডিয়া, পঞ্চম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৩৭১-২)।
বিদেশী তহবিলে পরিপুষ্ট ঝাঁকে ঝাঁকে এনজিও এখন তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয়। কিন্তু এতদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আর্ত-মানবতার সেবার নামে এসব এনজিওর বেশির ভাগই আসলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে। এ কাজে তাদের সাফল্য চোখধাঁধানো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ঢাকার একটি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে ধর্মান্তরিত করে খ্রিষ্টান বানানো হয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা- খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে বর্তমানে ১৯৪টি গির্জা রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় আছে ৭৩টি গির্জা। ১৯৯২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় চার হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিষ্টান হয়েছে। বান্দরবান জেলায় গির্জা আছে ১১৭টি। এখানে একই সময়ে খ্রিষ্টান হয়েছে ছয় হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবার। রাঙ্গামাটিতে চারটি চার্চ খ্রিষ্টান বানিয়েছে এক হাজার ৬৯০টি উপজাতীয় পরিবারকে। এগুলো ১০ বছর আগের হিসাব। এখন এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিষ্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই (এম এ নোমান, আমার দেশ, ১২ আগস্ট ২০১১)।
সীমান্তের ওপারে ‘সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত- আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, অরুণাচল পাহাড়ি অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান। ওইসব পাহাড়ি অঞ্চলসংলগ্ন বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায়ও ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে খ্রিষ্টানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে উঠেছে পাহাড়ের কোলঘেঁষে সুদৃশ্য গির্জা ও মিশনারি স্কুল।
সাম্প্রতিক আঞ্চলিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, একদিন চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল দক্ষিণ সুদান ও ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের মতো জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে ‘স্বাধীনতা’ লাভ করতে পারে। গড়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের বুকে আরেকটি পৃথক দেশ। খ্রিষ্টান অধ্যুষিত ইউরোপীয় দাতাগোষ্ঠী ও এনজিওরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে টার্গেট করে সামনে এগোচ্ছে। প্রায় দু’বছর স্থগিত থাকার পর জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (টঘউচ) রাঙ্গামাটি, বিলাইছড়ি, বান্দরবান ও থানচি উপজেলায় ২০ লাখ মার্কিন ডলারের ‘কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন বিদেশী নাগরিককে (ব্রিটিশ ও ড্যানিশ) অপহরণের পর বিদেশী সংস্থাগুলো তাদের তৎপরতা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নয়নের নামে দেদার বৈদেশিক অর্থ দিয়ে নবদীক্ষিত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের কাজে লিপ্ত হয়েছে। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের প্ল্যানের অধীনে তারা ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান যুবকদের উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে পাঠায়। পরিস্থিতি এভাবে অব্যাহত থাকলে গোটা পার্বত্যাঞ্চলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সচ্ছল এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিপজ্জনক, খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে। এই পারের পাহাড়ি খ্রিষ্টানরা সীমান্তবর্তী ওই পারের পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত নবদীক্ষিত খ্রিষ্টানদের সাথে মিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন পরিচালনা করতে পারে। এই আশঙ্কা অমূলক নয়। এনজিও তথা বেসরকারি সংস্থাগুলো কোনো দেশের কোনো সরকারের বন্ধু নয়। এনজিওরা তাদের খ্রিষ্টান দাতাগোষ্ঠীর গোপন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করে থাকে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় ছয়টি রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বহুদিন যাবৎ এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুকৌশলে। সম্প্রতি ওইসব সংস্থার সাথে এতদঞ্চলের উগ্রপন্থী সংগঠনের সম্পর্ক থাকার খবর পাওয়ার পর ভারতীয় সিবিআই ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে ৮২০টি এনজিও সংস্থাকে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কালো তালিকাভুক্ত করে ওইসব রাজ্যের জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত এনজিওদের মধ্যে রয়েছে- ত্রিপুরায় ৬৯, মনিপূরের ১৯৭, আসামের ১৫১, নাগাল্যান্ডের ৭৮, সিকিমের দুটি ও মেঘালয়ে ৩২৩টি।
ভয়াবহ পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুসলমানদের দ্বীনের দাওয়াতি ও সেবার ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বাস্তব কর্মসূচি হাতে নিতে হবে যাতে খ্রিষ্টান মিশনারিদের কবল থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, উত্তরাধিকার, ঐতিহ্য ও লালিত কৃষ্টি রক্ষা করা যায়। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, আলেমসহ সর্বস্তরের মুসলমানের এই বিষয়ে সুচিন্তিত কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় ইসলামের দাওয়াতি তৎপরতা চালানোর জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। যেসব মানুষ ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুরনো ধর্ম ত্যাগ করেন, তারা নিজেদের পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন, বাসস্থান, শিক্ষা ও জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুচিন্তিত কর্মকৌশল ও মজবুত ফান্ড গড়ে তুলতে হবে। অনেক সময় ধর্মান্তরিত মুসলমানদের ভিক্ষা করতে দেখা যায়। এটা কেবল বেদনাদায়ক নয়, লজ্জাজনকও বটে।
এ মুহূর্তে কর্তব্য হলো বান্দরবানের শহীদ ওমর ফারুকের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং ৩০টি নবদীক্ষিত পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়া, শহীদ ওমর ফারুক প্রতিষ্ঠিত মসজিদকে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় বহুতল কমপ্লেক্সে পরিণত করা। মনে রাখা দরকার, হত্যা ও ভীতিপ্রদর্শন করে ইসলামের দাওয়াতি তৎপরতা বন্ধ করা যায়নি বরং বাধা পেলে বেগবান হয়েছে আরো। দায়ীদের পিছপা হলে চলবে না; সাহস সঞ্চয় করতে হবে। সন্ত্রাসীদের কাছে মাথানত করা যাবে না। পাহাড়ি মুসলমানদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার লক্ষ্যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com