বাঁশখালীতে অর্গানিক আম চাষে চমক
নিজের বাগানের পরিপুষ্ট আম দেখাচ্ছেন কৃষিবিদ গোলাম মাওলা সিদ্দিকী - ছবি : নয়া দিগন্ত
পাহাড়ঘেরা ঘন সবুজ অরণ্য বেষ্টিত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এবার মিশ্র ফলবাগানে অর্গানিক উপায়ে আম চাষে চমক দেখালেন কৃষিবিদ গোলাম মাওলা ছিদ্দিকী। উপজেলার কালিপুরের জঙ্গল কালিপুরে পাহাড়ের পাদদেশে ৩০ একর জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এই মিশ্র ফলের বাগান। চলতি মৌসুমে ১০ লাখ টাকার আম বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন তিনি, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জাতের চার মেট্রিক টন আম বিক্রি করেছেন। আর বিক্রির অপেক্ষায় গাছে গাছে ঝুলছে আরো অন্তত ছয় মেট্রিক টন আম। আগামী সপ্তাহ থেকে অবশিষ্ট আম বিক্রি করা হবে বলে জানালেন তিনি।
২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন ফলের চারা বা কলম রোপণ শুরু করেন গোলাম মাওলা ছিদ্দিকী। ইতোমধ্যে আম্রপালি বারি-৩ ৪৫০টি, বারি-৪ ৫০০টি, বারি-৮ ১৫০টি, বাউ-১৪ (বেনানা) ১০০টি, হাইব্রিড (সুইটবেবি) ২৫০টি, মধুরানী (থাই জাতের) ৩০০টি, হাঁড়িভাঙ্গা ১০টি, পুনাই (ইন্ডিয়ান) ১০টিসহ বিভিন্ন জাতের দুই হাজার ২৫০টি আমের চারা রোপণ করেছেন। এ ছাড়া মাল্টা বারি-১ দুই হাজার ও কমলা ৫০টি (ইন্ডিয়ান), চায়না কমলা ৫০টি ও লিচু চারা ১০০টি রোপণ করেছেন। এ ছাড়া বেশ কিছু ঔষধি গাছের চারাও রোপণ করেন তিনি; এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধী গ্র্যাভিওলা অন্যতম।
কৃষিবিদ গোলাম মাওলা ছিদ্দিকীর মিশ্র ফলের বাগান দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক। তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে এসএসিপি, এনএটিপি-২ ছাড়াও লেবুজাতীয় ফলের সম্প্রসারণ গবেষণা ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দেশব্যাপী বিভিন্ন জাতের ফল চাষে বেশ সাড়া পড়েছে। রাসায়নিক সার ও কীটকনাশকবিহীন মিশ্র ফলবাগের উদ্যোক্তা কৃষিবিদ গোলাম মাওলা ছিদ্দিকী শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের ছাত্র। কর্মজীবন শুরু করেন ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করে শুরু করেন মিশ্র ফলবাগান গড়ে তোলার কাজ।
গোলাম মাওলা ছিদ্দিকী জানান, প্রাথমিকভাবে পাহাড়ি অঞ্চলের ৩০ একর জায়গাজুড়ে মিশ্র ফলবাগান গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ১৭ একর জায়গাতে এসব মিশ্র বাগান করেছেন। তিনি মানবস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে কোনো প্রকার ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে এই মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। প্রথমবারেই উচ্ছ্বসিত ফলনে খুশি তিনি। অপর দিকে মাল্টাগাছেও ফলন আসা শুরু করেছে। গত বছর তিনি প্রায় এক টনের উপরে মালটা বিক্রি করেছেন; এবারো তিনি দুই মেট্রিক টন মাল্টা বিক্রির আশা করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সালেক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে এসএসিপি, এনএটিপি-২ ছাড়াও লেবুজাতীয় ফলের সম্প্রসারণ গবেষণা ও মান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে দেশব্যাপী বিভিন্ন জাতের ফল চাষে বেশ সারা পড়েছে। ইতোমধ্যে বাঁশখালী উপজেলাতেই প্রায় ২০০ হেক্টরের উপরে বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এ উপজেলায় কৃষিবিদ গোলাম মাওলা সিদ্দিকী ছাড়াও ৬৫ জন উদ্যোক্তা ছোট-বড় ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন।