মার্কিনিদের বিরুদ্ধে তালেবানের হুঁশিয়ারি
মার্কিনিদের বিরুদ্ধে তালেবানের হুঁশিয়ারি - ছবি সংগৃহীত
তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন আল-জাজিরাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘১১ সেপ্টেম্বরের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সেনা রাখে, তাহলে তালেবানও পাল্টা-ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কারণ, এ সময়ের মধ্যে মার্কিন সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা ছিল। শুক্রবার আল-জাজিরা এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন, মোটামুটি ৬৫০ মার্কিন সেনাদের একটি দল আফগানিস্তানে থেকে যাবে। সকল বিদেশী সেনা চলে যাবার পরও এসব সেনারা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সুরক্ষার জন্য আফগানিস্তানে থেকে যাবেন।
আফগানিস্তানে ২০ বছর ধরে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনাদের এখন দেশে ফিরিয়ে নিবে। কাতারে তালেবানের সাথে করা এক চুক্তির আওতায় এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। কাতারের রাজধানী দোহায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ চুক্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আফগান যুদ্ধই সবচেয়ে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ। এ দীর্ঘ যুদ্ধের অবসানেই ওই চুক্তিটি করা হয়েছে।
এপির ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় কাতারের রাজধানী দোহায় সুহাইল শাহিন আল-জাজিরার ওসামা বিন জাভেইদকে বলেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে মনে করা হবে যে তারা চুক্তি ভঙ্গ করছেন।
সুহাইল শাহিন বলেন, ‘আমরা দোহায় চুক্তি করেছি। ১৮ মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার পর আমরা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করি। ওই চুক্তি অনুসারে তারা রাজি হয়েছিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তারা আফগানিস্তান থেকে তাদের সকল সেনা, পরামর্শক ও ঠিকাদারদের প্রত্যাহার করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সকল সেনাদের ফিরিয়ে না নেয়, তাহলে আমি মনে করি এটা পরিষ্কারভাবে দোহা চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে। যদি তাদের সেনারা আফগানিস্তানে থাকে, তাহলে আমি এটাকে অব্যাহ দখদারিত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করব। এর মাধ্যমে তারা যেহেতু দোহা চুক্তিকে লঙ্ঘন করবে, তাই তালেবানেরও অধিকার আছে পাল্টা-ব্যবস্থা নেয়ার।’
এর মাধমে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে মার্কিন সেনারা যদি আফগানিস্তানে অবস্থান করে, তাহলে তালেবান তাদের আক্রমণ করবে।
সূত্র : আল-জাজিরা
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রস্থানের প্রাক্কালে বাইডেন-গনি বৈঠক
মার্কিন প্রেসিডেন জো বাইডেন শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাক্ষাতকালে আফগান নেতা আশরাফ গনিকে জোরালো সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রায় দুই দশকের যুদ্ধের পর মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার বিলম্ব করার তার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন। খবর এএফপি’র।
আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য তার বেঁধে দেয়া সময়সীমার তিন মাসেরও কম সময় আগে বাইডেন গনিকে বলেন, আফগানরা তাদের নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আর তিনি এমন এক সময় এ কথা বললেন যখন তারা তালেবানদের ক্রমবর্ধমান হামলা মোকাবিলা করছেন।
ওভাল অফিসে বাইডেন বলেন, সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও ‘যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে অংশীদারিত্ব শেষ হচ্ছে না।’
‘আমাদের সৈন্য আফগানিস্তান থেকে চলে এলেও দেশটির প্রতি আমাদের সমর্থন শেষ হচ্ছে না, বরং অব্যাহত থাকছে।’
তবুও বাইডেন আফগান প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আফগানরা তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তারা কি চায়।’
‘কাণ্ডজ্ঞানহীন সহিংসতা তাদেরকে থামিয়ে দিয়েছে। ব্যাপক উগ্রবাদী হামলার কারণে তাদের এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হবে।’
গনি ওয়াশিংটনে রয়েছেন। তার সাথে রয়েছেন তালেবানের সাথে কাবুলের শান্তি আলোচনা দেখভাল করা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ। তালেবান গ্রুপের সাম্প্রতিক অর্জন এবং তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে তারা যুক্তরাষ্ট্রর সফর করছেন।
বাইডেনের সাথে সাক্ষাতের পর গনি স্বীকার করেন, আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধের অবসানে বাইডেনের এপ্রিলের ঘোষণা থেকে তার সরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সূত্র : বাসস