বাইডেন কোন পথে?

মীযানুল করীম | Jun 26, 2021 05:28 pm
জো বাইডেন

জো বাইডেন - ছবি সংগৃহীত

 

বর্তমান বিশ্বের সেরা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যদিও চীন সে স্থান দখলের দিকে এগুচ্ছে। তবে এতে কিছু সময় লাগবে বলে মনে হয়। ‘বৃহত্তম বৃহৎশক্তি’ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত সারা পৃথিবীকে প্রভাবিত করে স্বাভাবিকভাবেই। এ দেশের প্রেসিডেন্ট বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাই এখনকার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেনের প্রতিটি পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের প্রতি দুনিয়ার দেশে দেশে মানুষের এত বেশি আগ্রহ। তিনি পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট; তবে এখন অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্পকেই অনুসরণ করছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

প্রথমেই আসে ফিলিস্তিন ইস্যুর কথা। এটা শুধু মুসলিম বিশ্বেই নয়; গোটা গ্রহের প্রধান সমস্যা দীর্ঘ দিন যাবত। এবার মে মাসে ইহুদিবাদী ইসরাইল ১১ দিন ধরে প্রচণ্ড আগ্রাসী হামলা, ধ্বংসতান্ডব চালিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজায়।

এতে বহুতল ভবন ধূলিসাৎ হওয়াসহ শতশত নিরীহ নর-নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে, আহত অসংখ্য। গাজার জনপদ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল মজলুম ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো, সেখানে বাইডেন ফোনে ইসরাইলি কট্টর প্রধানমন্ত্রী ও নৃশংস খুনি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অব্যাহত সমর্থনের জোরালো আশ্বাস দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’। তা হলে কি আগ্রাসন আর আত্মরক্ষা সমার্থক? শতাব্দী কাল ধরে নির্যাতিত ফিলিস্তিনি জনগণের কেন আত্মরক্ষা করার ন্যূনতম অধিকারটুকুও থাকবে না? বাইডেন যা বলেছেন, তা উগ্র ট্রাম্পের মুখে শোভা পায়। কিন্তু ট্রাম্পের গোঁড়া জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ বাইডেনের কণ্ঠে এসব কথা বেমানান।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবার গাজায় ইহুদিদের হামলা বন্ধ করার সপক্ষে ছিলেন না। নিজ দল, দেশবাসী ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জোর দাবি ও অব্যাহত চাপের মুখে তিনি অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছেন। তবে একই সময়ে, শত শত কোটি টাকার অস্ত্র ইসরাইলকে বিক্রি করার ঘোষণাও দিলেন। এ অস্ত্রশস্ত্র ইসরাইল রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে নিপীড়িত, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে। ইহুদিবাদের প্রতিভু, অপরাষ্ট্র ইসরাইল এবার সর্বাত্মক ও পরিকল্পিত আগ্রাসনে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে গাজার মিডিয়া টাওয়ার। এই ১৩ তলা অট্টালিকায় দফতর ছিল মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং কাতারের আল-জাজিরা টিভি চ্যানেলের। তবুও মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলকে জোরালো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অথচ তার উচিত ছিল অন্তত নিজ দেশের বিখ্যাত একটি গণমাধ্যমের প্রতি সহমর্মী হওয়া। অথচ বাইডেন প্রশাসনের প্রশ্রয়ে এপি কর্তৃপক্ষ তাদের একজন মহিলা সাংবাদিককে কর্মচ্যুত করেছেন ‘ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীলতার’ কথিত দায়ে। মোট কথা, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাইডেন হতাশ করেছেন আরবজাহান, বিশ্ব মুসলিম এবং বিশ্ববাসীকে। তিনি আবারো প্রমাণ করলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কেবল জন্মই দেয়নি; এর লালন পালনকারী প্রধান মুরব্বিও। উল্লেখ্য, নিয়মিত প্রতি বছর বিপুল মার্কিন সাহায্য পায় ইসরাইল। আমেরিকা জাতীয় স্বার্থের মত ইসরাইলকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে সাধ্যমতো।

ইরান ইস্যু মধ্যপ্রাচ্যের একটি খুব বড় সমস্যা। বাইডেনের পূর্বসূরি ট্রাম্প ২০১৮ সালে তেহরানের সাথে এর কয়েক বছর আগে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে তা থেকে বেরিয়ে আসেন। এটা তার পক্ষে অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, ইউনেস্কো, প্রভৃতি থেকেও। দুঃখের বিষয়, বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে গত ছয় মাসেও ইরান প্রশ্নে তেমন অগ্রগতি হয়নি। যদিও চলতি বছরের মধ্যে ইরান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হওয়ার কথা শোনা যায়, তা নিশ্চিত নয়। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা বলা যায় না। বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রাখে; কিন্তু এর দুশমন ইরানের সাথে আলোচনা করে পরোক্ষ। আমরা আশা করি, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতির স্বার্থে বাইডেন বাস্তবসম্মত ও সুচিন্তিত ব্যবস্থা নেবেন।

তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র। বাইডেন দীর্ঘদিন এর নেতা ও প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে কোনো আলাপ পর্যন্ত করেননি যা বিস্ময়কর। অথচ, তুরস্ক মার্কিন নেতৃত্বে গঠিত প্রতিরক্ষা জোট ‘ন্যাটোর একমাত্র মুসলিম সদস্য’। ইতোমধ্যেই তুরস্কের অটোম্যান আমলের কথিত আর্মেনীয় গণহত্যাকে স্বীকার করেছেন জো বাইডেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কের আরো অবনতি হয়েছে। এমনিতেই ২০১৬ সালের ব্যর্থ তুর্কি ক্যুতে মার্কিন সমর্থন এবং তুরস্ক কর্তৃক রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনাকে কেন্দ্র করে আঙ্কারার সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ভালো নয়।

আমেরিকার প্রধান প্রতিপক্ষ ও বৃহৎশক্তি চীনের সাথে ট্রাম্প আমলের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ আজো চলছেই। নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় এর সুরাহা এখনো অনিশ্চিত। প্রধানত চীনকে টার্গেট করে বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us