আফগানিস্তানে আমেরিকার দুই কৌশল ও চীনের অবস্থান
আফগানিস্তানে চীন-মার্কিন সমীকরণ - ছবি সংগৃহীত
আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা যাচ্ছে কী যাচ্ছে না- সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রত্যাহারের পরও ৬৫০ জন সৈন্য সেখানে থাকবে। বারগাম বিমান ঘাঁটিও আমেরিকা ছাড়বে না। এই ঘাঁটি চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
আমেরিকার কাছে এখন দুটি কৌশল বিবেচনায় রয়েছে। এক, আফগানিস্তান ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া। আর তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করুক। এর মাধ্যমে আফগানিস্তান কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে আফগানিস্তানের ভেতরে দিয়ে যাওয়া চীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। কিংবা তালেবান ক্ষমতায় এসে উইঘুর নির্যাতনকারী চীনের প্রকল্প বন্ধ করে দেবে। এতে চীনের ক্ষতি আমেরিকার লাভ। এটা একটা কৌশল।
দ্বিতীয় কৌশল হলো- আমেরিকা আফগানিস্তানের দুর্লভ ধাতু ও আফগানিস্তানের বারগাম এয়ার বেস ছেড়ে না যাওয়া। চীনকে টেক্কা দিতে আমেরিকার কাজে লাগাতে পারে এটি। এই দুই কৌশলই আমেরিকা বিবেচনা করছে।
এছাড়া আমেরিকা তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টিকে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে, যাদেরকে আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেবে। চীন এসব ব্যাপারে সাবধান করছে। তবে আমেরিকা যদি সত্যি এদের অর্থায়ন করে তাহলে চীনের জন্য তা হুমকি। চীন বড় হামলার সম্মুখীন হবে। আর ভারতের মিডিয়া বলছে, ভারতের উচিত তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টিকে সমর্থন করা। তো সব মিলিয়ে নানা হিসেব নিকেশ চলছে। তবে আমেরিকা তার এই কৌশলে কতটুকু সফল হয় তা দেখার। চীনও এই ব্যাপারে ভাবছে। সিরিয়ার ইদলিবে তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টিকে দেখা গেছে হিজবুল্লাহর সাথে৷ এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো চীন কী এদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে? এর উত্তর হলো- না। চীনের মতো শক্তিও এদের ধংস করতে পারবে না। আমেরিকা এদের ব্যবহার করে চীনকে টুকরো টুকরো করতে চায়। তা সফল হবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন আমেরিকা কী তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টিকে সমর্থন করবে? আর তুরস্কের আফগানিস্তানে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। আমেরিকা চাইলে অর্থের বিনিময়ে তুরস্কের সৈন্য থাকবে।
তালেবানও তুরস্কের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে জড়াবে না৷ তালেবান তুরস্কের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তিকে অসন্তুষ্ট করতে চাইবে না। আর সবার মনে রাখা উচিত তালেবানের ওপরও তুরস্কের কিছুটা প্রভাব রয়েছে। ভবিষ্যতে কী হবে তা নির্ভর করছে আমেরিকার সিদ্ধান্তের ওপর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্ট বলছে, আমেরিকা চলে যাওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে আফগান সরকারের পতন হবে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা হলো তালেবান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানের সকল এলাকা দখল করতে পারবে।
অন্যদিকে আমেরিকার মিডিয়াগুলো রিপোর্ট করছে চীন ও রাশিয়া মহাকাশ প্রযুক্তিতে আমেরিকার সমতুল্য হয়ে উঠছে? আমেরিকার একমাত্র লক্ষ্য হলো চীনকে ধ্বংস করা। তালেবান কী আমেরিকা চলে যাওয়ার পর চীনের ক্ষতি করে আমেরিকার ইচ্ছে পূরণ করবে?
লেখিকা : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুরস্ক।
তথ্যসূত্র
The Washington Post
The Wall Street Journal
The Global Times
VOA.