উকুনের ওষুধ দিয়ে করোনা চিকিৎসা!
উকুনের ওষুধ দিয়ে করোনা চিকিৎসা! - করোনা চিকিৎসায়
ব্রিটেনের বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় রোগীদের আইভারমেক্টিন দিতে শুরু করছে। বাড়িতে বসেই যেন করোনায় আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ হতে পারে সে জন্য এই ওষুধটির ট্রায়ালের (পরীক্ষা) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইভারমেক্টিন একটি অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ। ১৯৭০ সালে ওষুধটি আবিষ্কৃত হয়। বাংলাদেশে চিকিৎসকরা এই ওষুধটি ব্যবহার করেন, ‘মাথার উকুন মারার জন্য।’ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্রিটেনে এই ওষুধটির পরীক্ষা সবেমাত্র শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ইতোমধ্যে বিশ্বের ২০টি দেশ আইভারমেক্টিন ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে বেক্সিমকো ফার্মার আর্থিক সহযোগিতায় আইসিডিআরবি আইভারমেক্টিন নিয়ে সীমিত পরিসরে একটি গবেষণা করেছে। আইসিডিডিআরবি বলেছে, ‘করোনার বিরুদ্ধে ওষুধটি কার্যকর।’ এই ওষুধটি উকুনের বিরুদ্ধে ব্যবহার ছাড়াও স্ক্যাবিজ, রোসেজা বিরুদ্ধেও সমান কার্যকর। অক্সফোর্ডে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে, বাড়িতে বসেই যেন মানুষ করোনার চিকিৎসা পায় এবং একই সাথে করোনা সংক্রমণ ধীর করতে পারে অথবা সংক্রমণ রোধ করতে পারে’ এই সরকারি নীতির ওপর ভিত্তি করে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, আইভারমেক্টিন ব্যবহার করোনার ঝুঁকি অথবা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করবে।
ব্রিটেনের হেলথ ওয়াচডগ ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার এক্সিলেন্স’ (এনআইসিই) বলেছে, আইভারমেক্টিনকে গোল কৃমির (রাউন্ড ওয়ার্ম) চিকিৎসায় ব্যবহার করা উচিত। ব্রিটেনের ডেইলি মেইলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১১টি গবেষণার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ‘এই ওষুধটি করোনা আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে এবং আরোগ্য হওয়ার সময়কেও কমিয়ে আনতে পারে। তার মানে এই যে, ওষুধটি করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে, ‘আইভারমেক্টিন প্রয়োগের এই ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ের। একটি সুনির্দিষ্ট উপসংহারে আসতে হলে আরো ডেটা প্রয়োজন।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওষুধ গবেষণায় প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে জীবন রক্ষা করা। বর্তমানে বাড়িতে থেকেই করোনাভাইরাসের চিকিৎসার করার কোনো ওষুধ নেই। খুব মারাত্মকভাবে আক্রান্ত নয় এমন করোনা সংক্রমিতদের বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলা হচ্ছে এবং জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ও আইবোপ্রোফেন গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা হাসপাতালে ভিড় কমানোতে এই ওষুধটির ট্রায়াল করতে যাচ্ছেন।
ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরিতে (মেশিনে) গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আইভারমেক্টিন করোনা সংক্রমণ রোধ করতে পারে। কিছু ছোট ছোট গবেষণায় প্রমাণিত হয়, আইভারমেক্টিন করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভাইরাস লোড (ভাইরাসের সংখ্যা) কমিয়ে দিতে পারে এবং গবেষকেরা দেখিয়েছেন, রোগীর দেহে করোনার লক্ষ্মণ কতক্ষণ থাকে। তবে গবেষকেরা বলছেন, ‘দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায়’ এই ওষুধটির পক্ষে খুব কমই সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে। তা সত্ত্বেও গ্রিস, বুলগেরিয়া, স্লোভাকিয়াসহ ২০টি দেশ করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় আইভারমেক্টিন যুক্ত করেছে। ওষুধটির একটি পরীক্ষা ভারতেও হয়েছে এবং দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান করোনা আক্রান্তদের আইভারমেক্টিন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আইভারমেক্টিনের পরীক্ষা হয়েছে করোনার ওষুধ হিসেবে।
ব্রিটেনের এই ট্রায়ালের যুগ্ম প্রধান প্রফেসর ক্রিস বাটলার ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘আইভারমেক্টিন বিশ্বব্যাপী পাওয়া যায়। অন্য অনেক সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে এই ওষুধটি ব্যবহার হচ্ছে এবং এটা নিরাপদ। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া কিছু গবেষণায় নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন দেশে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।’