সব দেশের সোনা মজুত রাখা হয় যে ব্যাংকে
সব দেশের সোনা মজুত রাখা হয় যে ব্যাংকে - ছবি সংগৃহীত
বলিউডের ‘ধুম’ কিংবা ওয়েবসিরিজ ‘মানি হেইস্ট’-এর চোরেদের কাছে এই ব্যাংক হলো স্বপ্ন। কারণ এই ব্যাংকে মজুত রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সোনা। বস্তুত সোনার সবচেয়ে বড় গুদাম ঘর বলা যায় একে।
মজুত সোনার পরিমাণ কত? সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। তবে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এত সোনা না কি এর আগে কোথাও একসাথে এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়নি কখনো।
ব্যাংকের নাম নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ। নিউ ইয়র্কের মূল শহুরে এলাকা ম্যানহাটনের অর্থনৈতিক জেলার মাঝামাঝি এর ঠিকানা। তবে সোনা রাখা হয় মাটির নিচে।
ভূপৃষ্ঠের নিচে মাটি, পাথর, বালির বিভিন্ন স্তর রয়েছে। সে রকম তিনটি স্তর পেরিয়ে চতুর্থ স্তর ‘বেডরক’-এ রাখা হয় সোনা। মাটির প্রায় ৮০ ফুট নিচে ব্যাংকের সোনা ভরা ‘সিন্দুক’।
অবশ্য নামেই সিন্দুক। আসলে এক একটি বিশাল আকারের ঘর। নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে এ রকম ১২২টি ঘর আছে।
এক একটি ঘরে থরে থরে সাজানো থাকে ঝকঝকে সব সোনার বাট। যার এক একটির ওজন ২৭ পাউন্ড। মানে ১২ কেজি ২৪৭ গ্রাম। দাম কম করে ১.৬ লক্ষ মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া কম আমানতকারীদের জন্য ছোট ভাঁড়ার ঘরও রয়েছে। তার নাম ‘লাইব্রেরি ভল্ট’।
ওজন এবং মানে প্রতিটি সোনার বাট ১০০ শতাংশ শুদ্ধ। শুদ্ধতার বিচার হয় ব্যাংকের নিজস্ব মাণদণ্ডে। প্রতিটি বাটের দেখভালের জন্যও রয়েছে বিশেষ প্রক্রিয়া।
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত সোনা খনি থেকে তোলা হয়েছে, তার ৫ শতাংশ এখন মজুত এই ব্যাঙ্কে। পরিমাণ কম করে আট হাজার টন।
তবে এই সোনার মালিক মুকেশ অম্বানী বা বিল গেটসের মতো কোনো কোটিপতি নন।
এই ব্যাংকের গ্রাহক মূলত বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক। অন্তত ১০০টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা মজুত আছে এই ব্যাংকে। এক একটি ঘর বরাদ্দ এক একটি দেশের জন্য।
অবশ্য এই ব্যাংকের গ্রাহক কারা বা কোন কোন ব্যাংক, তা জানার উপায় নেই। গ্রাহকদের নাম গোপন রাখে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ।
ফেডারেল রিজার্ভে সোনা রাখার কারণ অবশ্য এর সর্বজনগ্রহীতাও। যে হেতু বেশির ভাগ দেশই এই ব্যাংকে সোনা রাখে, তাই সোনা আদান প্রদানের জন্য বিশেষ পরিশ্রম বা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার দরকার পড়ে না। ঘর বদল করলেই চলে।
এই ব্যাংকে সোনা রাখার জন্য কোনো ভাড়া দিতে হয় না। তবে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে সোনা নিয়ে গেলে খরচ লাগে।
এক একটি সোনার বার সরানোর পরিষেবা দিতে ২ ডলার করে নেয় ব্যাংক।
এই ব্যাংকের নিরাপত্তা যে অত্যন্ত কড়া হবে সেটা অনুমান করাই যায়। রক্ষীদের নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ। টানা এক বছর ধরে চলে প্রশিক্ষণ। হ্যান্ডগান, শটগান এবং রাইফেল চালনায় দক্ষতার সার্টিফিকেটও লাগে।
দক্ষতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয় শ্যুটারদের। মার্কসম্যান, শার্পশ্যুটার এবং এক্সপার্টস।
এ ছাড়া ক্যামেরা, অ্যালার্ম, তালা তো রয়েছেই। যা নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল তো বটেই, কোনো একজনের পক্ষে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভবও নয়। কারণ নিষ্ক্রিয় করার সম্পূর্ণ পদ্ধতি জানা নেই কারো।
আর আছে ৯০ টনের একটি ইস্পাতের ঘুরন্ত সিলিন্ডার। সেই দরজা সিন্দুকের দরজার সাথে মুখোমুখি মিললে তবেই ঢোকা যায় সিন্দুকে।
গোটা প্রক্রিয়ায় সামান্য গোলমাল হলে ২৫ সেকেন্ডেরও কম সময়ে বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকে ঢোকা বা বার হওয়ার রাস্তা।
এই সব পেরিয়ে সোনার কাছাকাছি পৌঁছতে মোটামুটি একটা গোটা দিন লেগে যায়। তাই আমানতকারীরা খুব একটা ব্যাংকে আসেন না। এলেও অনেক আগে থেকে তার পরিকল্পনা করতে হয়।
অবশ্য আমানতকারীরা না এলেও পর্যটকরা ঘুরতে আসতে পারেন এই ব্যাংকে। তাদের জন্য নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের অবারিত দ্বার।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা