ন্যাটো নিয়ে কী করতে চান বাইডেন?

গৌতম দাস | Jun 24, 2021 04:17 pm
 জো বাইডেন

জো বাইডেন - ছবি সংগৃহীত

 

একালে বাইডেনের ভাবি যুদ্ধের খরচের সংস্থান না করে চীনকে যুদ্ধের হুমকি দেখানো এগুলোকে কী বলা যায়? এর মানে কি আমেরিকা-চীনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ নামে যে বিরোধ প্রকাশ্যে বাজারে হাজির আছে তা বাইডেন এখন যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান করতে চাইছেন? হ্যাঁ তাই। সেজন্যই এটাকে ছেলেমানুষি চিন্তা বলছি। কারণ, এক তো খরচের ব্যাপার আছে; সেটা ছাড়াও চীনের সাথে আমেরিকান বিরোধ মূলত হাতে থাকা উদ্বৃত্ত সম্পদ না থাকা থেকে উদ্ভূত বিরোধ- এমন বিরোধকে বাইডেন যুদ্ধে গিয়ে সেটাকে নিজের পক্ষে জিতে আনবেন কী করে?
ধরা যাক, যুদ্ধ একটা হলো আর আমেরিকা তাতে জিতেও গেল। কিন্তু তার পরে এতে কি আমেরিকার হাতে যথেষ্ট ‘সঞ্চিত উদ্বৃত্ত সম্পদ’ না থাকার সঙ্কট, সেটা এখন আছেও তা কেটে যাবে? বিপুল সম্পদটা আসবে কোথা থেকে? কিভাবে?

আসলে তখনও দুনিয়ায় সম্ভাব্য একমাত্র উদ্বৃত্ত সম্পদের উৎস দেশ হয়ে থাকবে এই চীনই। আর সেই চীনের কাছে হাত পেতে আমেরিকা তার জনগণকে খাওয়াবে, দুনিয়া রুল করবে- এমন কল্পনা এবসার্ড বলারও সুযোগ দেখি না। এজন্য বলেছি, সম্পদ থাকা না থাকার সঙ্কট যুদ্ধে জিতেও কেটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।

তাহলে অথর্ব ন্যাটোকে সামনে আনা কেন?
বাইডেন ন্যাটোকে সামনে রেখে হুমকিটা দিয়েছেন। ন্যাটোকে দিয়ে তিনি আর্টিকেল পাঁচ, চালু করার সামরিক ইঙ্গিত দিয়েছেন। আবার হাসির কথা হলো, চীন-রাশিয়া নাকি পারমাণবিক অস্ত্রে তাদের সমান হয়ে যাচ্ছে। এতে আমেরিকা হুমকি দেখছে। আচ্ছা খোদ পারমাণবিক অস্ত্রই যেখানে সবার জন্যই হুমকি সেটা যার হাতেই থাকুক; সেখানে ওরা আমার সমান হয়ে যাচ্ছে কেন এটা কী নাকিকান্নাময় যুদ্ধের অজুহাত তোলা নয়!

কিন্তু আসল কথাটা হলো, সেই ওবামা আমল থেকে, চাক হেগেল যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী (২০১৩-১৫) তখন থেকেই ন্যাটো যে একটা খরচের ডিব্বা, আর সেই খরচের সিংহভাগ (প্রায় ৯৫%) কেন আমেরিকা একা বইবে- এসব প্রশ্ন আর অজুহাত তুলে কি চাক হেগেল সেকালেই ইউরোপকে অপমান করে নাই? ট্রাম্পও তো একই প্রশ্ন তুলেছিলেন। আরো আগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, একালে ন্যাটো একটা অপ্রয়োজনীয় সংগঠন। আফগানিস্তানের পরে ন্যাটোর আর দুনিয়ায় কোনো ভূমিকা নাই- ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন সব ঘোষণা দেয় নাই কী? এমনকি তিনি ইউরোপে (জর্মানিতে) ও জাপানে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে এখনও আমেরিকান সৈন্যের সামরিক ব্যারাক মেনটেন করে যাওয়ার খরচ এবার থেকে ইউরোপকে দিতে হবে বলে ট্রাম্প দাবি করে নাই?

তাহলে সেসব প্রশ্নের সুদুত্তর কী? বাইডেনের কাছে এসব খরচের ব্যয়ভার প্রসঙ্গে সমাধান কী আছে? অর্থাৎ খরচ বইবার প্রশ্নে ন্যাটো এখন একটা পর্যদুস্ত সংগঠন হয়ে আছে! অথচ এসব নিয়ে কোনো কথা না বলে, এক দিনের ন্যাটো বৈঠকে গিয়ে চীনকে হুমকি দিয়ে এলেন বাইডেন! এটা কি তামাসা?

অভ্যন্তরীণ বিতর্কও আছে গভীরে
তবে মনে হচ্ছে, ইউরোপের সবাই এখনও বোকা ধামাধরা নেতাদের দেশ হয়ে যায় নাই। তাই খোদ সিএনএন খবর দিচ্ছে কানাডা বাদে জি-৭ এর বাকি নেতাদের মধ্যে বাইডেনের চীনের প্রতি আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে অস্বস্তি ও আপত্তি দেখা দিয়েছে। গরম তর্ক-বিতর্কও হয়েছে। এতে সবচেয়ে বড় অস্বস্তি প্রকাশ করেছে ইতালি। এনিয়ে চীনা ব্যাখ্যা হলো, ইতালিই ইইউর প্রথম দেশ যে চীনের বেল্ট-রোডে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছে।

তবে সামগ্রিকভাবে বললে, চীনের বিরুদ্ধে কামান দাগানো যৌথ বিবৃতি ধরনের কাগজে চীনকে কী ভাষায় কতটা অভিযুক্ত করছে মূলত এই প্রশ্নেই ভিন্নতাগুলো দেখা দিয়েছে। স্বভাবতই সবচেয়ে শক্তভাষায় বাইডেন ওসব ড্রাফট দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু কেউই চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় ততটুকুতেই থাকতে চায়। যেমন জাপান টাইমস, যৌথ বিবৃতি ড্রাফট করতে গিয়ে বড় মতভেদের কথা তুলে ধরেছে। বিশেষ করে মানবাধিকার প্রসঙ্গে চীনকে কতটা সমালোচনা করা হবে সে বিষয়ে।

ওদিকে ভয়েস অব আমেরিকা লিখেছে, ইটালি জার্মানি আর ইইউ প্রতিনিধিকে দেখা গেছে, চীনের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিতে এরা অনিচ্ছুক। বরং সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মধ্যে থাকতে আগ্রহী। আবার এসব প্রশ্নে কানাডা, ফ্রান্স, ব্রিটেন আর আমেরিকা নিজে এভাবে এরা চারজন চার মাত্রায় চীনের বিরোধিতা করতে চায়। আর জাপান যে কোনদিকে অবস্থান নেবে তা সবচেয়ে অনিশ্চিত।

সিএনএন লিখছে, এক আমেরিকান ডিপ্লোম্যাট তাদেরকে জানিয়েছেন, বিশেষ করে ইতালি ও জার্মানি খুবই অস্বস্তিতে ছিল বিবৃতির ভাষা নিয়ে। যেন চীন এটাকে কোনভাবেই উসকানিমূলক হিসাবে না দেখে। চ্যান্সেলার মার্কেল তো বলেই বসেছিলেন যে, চীন আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বটে কিন্তু আবার অনেক ইস্যুতে আমাদের পার্টনারও তো বটে। ফরাসি নেতা ম্যাক্রোও যোগ করেছেন, জি-৭ কে তো ওই চীনের সাথেই আবার জলবায়ু, বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অন্যান্য অনেক ইস্যুতে ভিন্নমত থাকলেও একসাথে কাজ করতে হবে। তাই তিনি পরিষ্কার করে রাখার পক্ষে যে, তাদের জি-৭ কখনও চীনবিরোধী কোনো ক্লাব হতে পারে না।

সার কথায়, ভেতরে বড় মাত্রায় বাইডেন-বিরোধিতা বজায় আছে। তবে সবচেয়ে মজার অবস্থানে ইন্ডিয়া। ভারতের মিডিয়াই ভেতরের বিরোধের খবরগুলো সামনে এনেছে। যেমন ন্যাটো মিটিংয়ে এক সময় এমন উত্তপ্ত ভাষায় বাইডেনের সাথে ইউরোপীয়দের বিতর্ক শুরু হয়েছিল যে কমিউনিকেশন সুইচ অব করে রাখতে হয়েছিল যাতে বাইরে মিডিয়ার কাছে তা না পৌঁছায়। আবার আরেক ভারতীয় মিডিয়া খবর দিয়েছে, মানবাধিকার প্রসঙ্গে বিবৃতিতে কিছু অবস্থান প্রসঙ্গে খোদ ভারতেরই অস্বস্তি দেখা দিতেছে।

তবে অভ্যন্তরীণভাবে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির প্রশ্ন ছিল, উইঘুর বা ফোর্সড লেবার ইস্যুতে কতটা চাপ দিয়ে তা বলা হবে, এ নিয়ে বিতর্ক।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us