চীনকে যেভাবে ঠেকাতে চান বাইডেন

বাইডেন ও শি - ছবি সংগৃহীত
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ, বিআরআই মূলত চীনের বৈশ্বিক মহাপ্রকল্প যার উদ্দেশ্য ভূখণ্ডে ও সাগরে এশিয়া, আফ্রিকা, এমনকি ইউরোপে বাণিজ্য ও সহযোগিতা-সম্প্রীতি বাড়ানো। উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো, যোগাযোগ, অ্যানার্জি ও সুবিধাজনক বাজারব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। বিআরআই প্রকল্পে এগুলোর সমন্বয় করা হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, বিআরআই-এর কারণে আঞ্চলিক সম্পর্ক ও ‘ইকোনমিক গ্রোথ’ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শি জিংপিং ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্টে ভাষণে প্রথম এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
চীনের দুটি ব্যাংক, চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এখানে অন্য কারো চাঁদা নেই, তাই লভ্যাংশেও ভাগ নেই। অবশ্য অংশগ্রহণকারীরা চুক্তি অনুসারে লভ্যাংশ পাবে। সবচেয়ে বড় কথা নিজ দেশের অবকাঠামো বৃদ্ধি পাবে ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এরই মধ্যে বিআরআইতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে, বিশেষ করে এশিয়ায়, অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে নতুন গ্রোথরেট দেখা দিয়েছে।
বলতে হয়, অবকাঠামো উন্নয়নই এর লক্ষ্য। তাই দুই-তৃতীয়াংশ ফান্ড ব্যবহার হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নে, যেখানে জ্বালানি ও পরিবহন খাত উন্নত করার প্রকল্পগুলো রয়েছে। এতে বছরে ৫০-১০০ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। অক্টোবর ২০২০ সালে প্রকাশিত হিসাবে দেখা গেছে, ১৩৮টি দেশে, গত বছর পর্যন্ত প্রকল্পে ৪৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে এবং অদ্যাবধি ৭৯০টি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর আগে নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এই লেখকের ‘চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান’ নিবন্ধে উন্নয়নের কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বিআরআই পরিবহন প্রকল্পগুলো বাণিজ্য বিকাশে সহায়ক হচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হচ্ছে। কেননা কাঠামোগত উন্নয়নে পরিবহন খরচ কমছে। পাকিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো দ্রুত সুফল পেতে শুরু করেছে। সব প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে বিশ্ববাণিজ্য ১.৭ থেকে ৬.২ শতাংশ বাড়বে। এর ফলে বৈশ্বিক প্রকৃত আয় বাড়বে ০.৭ থেকে ২.৯ শতাংশ পর্যন্ত। বৈশ্বিকভাবে, বিআরআই ৮৭ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনবে এবং ৩৪ মিলিয়ন মধ্যআয়ের মানুষের দারিদ্র্যমোচন করবে।
চীনের এই উত্থান-উন্নয়ন বিশ্বকে প্রভাবিত করছে, প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। চীন পুরো সার্থক হলে পুরো বিশ্ব বেইজিংমুখী হবে। চীনা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সবাই ছুটবে। তখন পশ্চিমা সূর্য পূর্বদিগন্তে উদিত হবে ও বিশ্বব্যবস্থা চীনের অনুকূলে চলে যাবে। এ কারণে পশ্চিমারা শুধু শঙ্কিত নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভীতও। তারা যে কোনোভাবে চীনের আধিপত্য রোখার উপায় উপকরণ খুঁজছে।
বিকল্প হিসাবে চীনের বিরুদ্ধে ব্লুডটনেটওয়ার্ক বা বিডিএন ভাসানো হচ্ছে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সাথে নিয়ে বাইডেন প্রশাসন বৈশ্বিক বাজারের এই অবকাঠামো তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাদের ধারণা বিডিএন ভাসানো হলে চীনের বেল্ট ও রোডের অগ্রযাত্রায় ভাটা পড়বে এবং কোথাও কোথাও চীনকে গুটিয়ে নিতে হবে। এটি মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের উদ্ভাবন। বাইডেন প্রশাসন এখন ধারণাটি এগিয়ে নিতে এক্সিকিউটিভ কনসালট্যান্ট গ্রুপ প্রস্তুত করেছেন, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পুরো বিষয় দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে এবং ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। পরে জাপান ও আরো দেশ অর্থায়ন করবে সন্দেহ নেই। চৌকস কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। প্রাইভেট সেক্টরকেও বাজার ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, ফলে প্রাইভেট সেক্টরও এখানে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে। ব্লুডটনেটওয়ার্ককে বৈশ্বিক বাণিজ্যভিত্তিক প্রকল্প হিসাবে দাঁড় করিয়ে বিশ্ববাজারে চীনের প্রভাব বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। যেন চীন অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে এগিয়ে যেতে না পারে। প্রাথমিক প্রস্তুতিতে দেখা যাচ্ছে, ৯৬টি দেশের ১৫০ জন দক্ষ এক্সিকিউটিভকে জড়ো করা হবে এবং ১২ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনার টেবিলে আনা হবে। বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের টার্গেট করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে সিটি ও জেপিমর্গান এবং সরকারি সেক্টরে থাইল্যান্ড পেনশন ফান্ডের মতো প্রতিষ্ঠান।
তবে এই প্রস্তুতির বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেরিখ গ্রসম্যান বলেন, ‘চীনের বেল্ট ও রোড ইনিসিয়েটিভকে একহাত নেয়া কোনো সোজা ব্যাপার নয়।’ বিআরআইতে চীন একাই সিদ্ধান্ত নেয় এবং অর্থের জোগান দেয়, অথচ বিপক্ষে শলাপরামর্শ, অর্থ জোগান, যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি অনেক স্তর রয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ কতটুকু সফল হবে বা আদৌ হবে কিনা তা এখনই বলার অবকাশ নেই। তাছাড়া বিডিএন কাজ শুরু করলে চীন চুপচাপ বসে থাকবে এমনও নয়। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ ম্যাথিও গুডম্যান, দানিয়েল রুন্ড এবং জনাথান হিলম্যান যুক্তি দেখান যে, যুক্তরাষ্ট্রের অপরিমেয় শক্তি রয়েছে, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার পেনশন ও ইন্স্যুরেন্স ফান্ড রয়েছে যা বেশি সময়ের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে। ব্লুডটনেটওয়ার্ক উচ্চপর্যায়ে সক্ষমতা, আস্থা ও বিশ্বাস আনবে এবং বিনিয়োগ হবে খুব তাড়াতাড়ি।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া ২০১৯ সালে ব্যাংককে ইন্দোপ্যাসিফিক ফোরামে প্রথম ব্লুডটনেটওয়ার্কের প্রসঙ্গ তোলে। ব্লুডট দিয়ে সবুজ পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে। যত বেশি ব্লুডট হবে তত বেশি বিশ্ব নিরাপদ ও উন্নত হবে, ধারণাটি অনেকটা এরকম। যুক্তরাষ্ট্র এতে ভারতকে নিতে চায়। ভারত একমাত্র কোয়াডের সদস্য যেটি ব্লুডটনেটওয়ার্কে নেই। চীনা অবকাঠামোর বিপরীতে ভারতও শক্ত অবস্থানে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বেল্ট ও রোড ফোরামে প্রবেশ করতে ভারত অস্বীকৃতি জানায়। গুডম্যান ও রুন্ডে মনে করেন যে, প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। তাছাড়া এখনই কিছু শুরু করা হচ্ছে না।
বিআরআই-এর তুলনায় ব্লুডটনেটওয়ার্ক বা বিডিএন নতুন। চীনের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা বিডিএনের জন্য কোনো ব্যাপার নয়। জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের চিন্তা থেকে ধারণা করা হয়েছিল এটি চীনের বিআরআইকে টক্কর দিতে পারবে। ২০১৮ সালে বিআরআই’র ট্রেড ভলিউম ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। চীনের এই অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কেন এই ক’বছর ওইসব দেশে অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করেনি তা বোঝা যাচ্ছে না। আমেরিকার অনেক সাধারণ মানুষ মনে করেন, আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও নারী স্বাধীনতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কাজ করছে! সঠিক বিষয় কি তা কাউকে এখন বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। বিডিএনকে জোরালোভাবে উপস্থাপনের জন্য আরো একটি দেশ দরকার সেটি ভারত। ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার জায়ান্ট বলা হয়। ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের বিডিএনে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। কেননা জি-৭ জোটের সব বল যেন চীনের বিরুদ্ধেই মাঠে গড়াচ্ছে। জি-৭ সম্মেলনে চীনবিরোধী ঘোষণা ও তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরপরই চীন ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাইওয়ানের অভ্যন্তরে ২৮টি জেটবিমান প্রবেশ করেছে, তবে আক্রমণ করেনি। লাদাখ সীমান্তে আবারও সেনা সমাবেশ করেছে মর্মে ভারতীয় মিডিয়া জানান দিয়েছে। এসব ঘটনায় কোয়াডের কোনো দেশ এখনো মন্তব্য করেনি বা হুঁশিয়ারি শুনায়নি।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জাফরিশাস বলেছেন, জি-৭ সম্মেলনে গ্লোবাল ইকোনমির আলোচনা নেই। কিছু দেশের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা বহুদিন ধরে চলে এলেও প্রাপ্তির থলেতে আশাব্যঞ্জক কিছু নেই। জো বাইডেন এপ্রিলে ৪০ জন বিশ্বনেতার সাথে অনলাইনে সভা করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা হয়েছে। দেড় মাসের মাথায় জি-৭-এ আবার আলোচনার টেবিলে তোলা হয়েছে! জি২০-এর আসরেও এর অনেক বিষয় আলোচিত হয়। জি-২০-র বিষয়গুলো জি-৭ সম্মেলনে আলোচনা কেন হবে তা অনেকের প্রশ্ন। সত্তরের দশক থেকে এসব দেশ বার্ষিক সভা সম্মেলন চালিয়ে আসছে। আশির দশকে এই দেশগুলো বিশ্ব জিডিপির ৫১ শতাংশ ধরে রেখেছে, তখন এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশে ৮.৮ শতাংশ জিডিপি। ২০২১ সালে জি-৭ দেশগুলো বিশ্ব জিডিপির ৩১ শতাংশ, এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো ৩২.৯ শতাংশে উন্নীত হয়। বিশ্লেষকরা এখন এগুলো নিয়ে হিসাব কষছেন।
সমালোচকরা বলেন, জি-৭ একটি অপ্রয়োজনীয় জোট। জোটের নেতারা তাদের ওয়াদার গুরুত্ব দেয় না, গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখলেও সেগুলো মূলত প্রতীকী। সমস্যার কথা বলেন, কিন্তু সমাধান দেন না। তারা বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের জোর দেন, এবারের সম্মেলনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জি-৭ জোটের আরেক অর্থহীন তরী-জলবায়ু পরিবর্তন। এবারের সম্মেলনে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বনমুক্ত করা, উন্নত দেশগুলো যেন এ বিষয়ে ভালোভাবে কাজ করে তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোনো আর্থিক পরিকল্পনা না টেনে উন্নত দেশগুলোকে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বলা হয়েছে। ২০০৯ সালে যে আর্থিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা এখনো পূর্ণতা পায়নি, অথচ আবেদন-আবদারের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
তারা জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার এই খাতে সরবরাহ করবেন। ধনী দেশগুলো নিজেদের দেয়া ডেডলাইন ২০২০ সাল নিজেরা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। জি-৭ পড়ালেখার বিষয়েও জোর দিয়েছে। গরিব দেশগুলোতে হাজার-লাখ শিশু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত অর্থের অভাবে। ইউনিসেফ গত বছর হিসাব দেখিয়েছে যে, গরিব দেশগুলোতে প্রতি বছর ৫০৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন শিক্ষা খাতে অভাব দূর করতে। এ সহায়তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত দিতে হবে। দেশগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন বাদ দিলে প্রতি বছর ১৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এবারের জি-৭ বলেছে, ‘আরো ৪০ মিলিয়ন মেয়েকে বিদ্যালয়মুখী করতে হবে। কমপক্ষে প্রতি বছর ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের জন্য ব্যয় করতে হবে।’ জি-৭ এর প্রতিশ্রুতির সাথে ইউনিসেফের তথ্যের কি কোনো সম্পর্ক আছে? গত ২২ জুলাই মিডিয়ায় তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে যে, ২০২০ সালে যুদ্ধের কারণে বিশ্বে দুই হাজার ৭০০ শিশু নিহত হয়। অথচ ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব পশ্চিমাদেরই হিসাব নিকাশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশে দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধে নিহত শিশুর হিসাব না হয় নাই বললাম। এখন খুৎপীড়িত ইয়েমেনি শিশুদের কথা কোনো ফোরামে উঠছে না, পড়ালেখার তো কথাই নেই।
এখন বিশ্বের সামনে বড় সমস্যা কোভিড মহামারী প্রতিরোধ, কার্বন নিঃসরণ বন্ধ, অ্যানার্জি সিস্টেমের পরিবর্তন, শিশুদের লেখাপড়া নিশ্চিত করা, উদ্বাস্তু সঙ্কট নিরসন, এসডিজির পূরণ। অথচ বৈশ্বিক ইস্যুতে ‘সন্ত্রাসদমন’কে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এর সাথে বিশেষ গোষ্ঠীকে জড়ানো হচ্ছে। অথচ ইহুদিদের সন্ত্রাস এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেখা যায়, ইসরাইলি স্বার্থ রক্ষার জন্য জি-৭ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোই বেশি তৎপর। জি-সেভেন জোটের নেতাদের সতর্ক করে চীন বলেছে, কিছু দেশ সারা পৃথিবীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে, সেই যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের যে পরিকল্পনার ব্যাপারে একমত হয়েছে জি-৭, জার্মানির অ্যাঞ্জেলো মের্কেল তার বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘জি-৭ এই তহবিল ছাড় করার মতো অবস্থায় এখনো আসেনি।’ অর্থাৎ শুরুতেই মতবিরোধ! বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে চীনের উত্থান ঠেকাতে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে এখনই সক্রিয় হতে হবে। এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। জি-৭ এবারের সম্মেলনে বিল্ডব্যাক অ্যা বেটার ওয়ার্ল্ড বা ই৩ডপ্রকল্প নিয়েছে, যা হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রয়োজন অনুসারে ৪০ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করে উন্নত দেশের সাথে পার্থক্য দূরীকরণের এক মহাযজ্ঞ। এটি জি-৭ জোটের একটি অভিলাষী প্রকল্প যা এই বছর ভাসানো হলো। জো বাইডেন বলেন, ই৩ড প্রকল্প চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের চেয়ে উচ্চমানের হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার