মিশন আফগানিস্তান : কী করবেন এরদোগান?

মোঃ মেরাজ | Jun 24, 2021 07:38 am
এরদোগান

এরদোগান - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট আফগান ত্যাগের সময়সীমা চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল রেখেছে। যদিও ১ মে পর্যন্ত সময় নিয়ে তালেবানের সাথে চুক্তি হয়েছিল। সময়ীমা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, উল্লেখিত সময়সূচি ভারী যুদ্ধাস্ত্রসহ ন্যাটো জোটের পক্ষে আফগান ত্যাগের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ আমেরিকার নির্বাচন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা হারানো, নতুন প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণের পর একপ্রকার সংশয় সন্দেহের জন্ম নেয় বাইডেন তার পূর্বসূরির করা চুক্তি মেনে আফগান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবেন কিনা। আর ট্রাম্প প্রশাসনের করা চুক্তিতে আমেরিকার অর্জন বলে কিছু নাই। নেই কাবুলের আশরাফ গানি সরকারের মর্যাদা। তালেবান তাদের কোনো গ্রহণযোগ্য পক্ষ বলে মেনে নেয়নি।

আবার ২০ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও তালেবানের কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ পর্যন্ত আমেরিকা তৈরি করতে পারেনি, যারা আমেরিকার চলে যাওয়ার পর তাদের স্বার্থের ঠিকাদারি করবে।

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা করে যে তারা আফগান থেকে যেকোনো মূল্যে সেনা প্রত্যাহার করতে চায় এবং আফগানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। আর তাতে আফগানে যে পাওয়ার ভ্যাকুম তৈরি হয়ে যায়, তা পূরণ করার জন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।

আমেরিকা ইতিমধ্যেই তার মিত্র দেশগুলোকে আফগানের তাদের পুতুল সরকারকে লিজ (পৃষ্ঠপোশকাতা) দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে এবং নিজেও আশেপাশে কোনো দেশে সেনা ঘাঁটির জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তালেবানের উপর নজর দারি করতে পারে।

আমেরিকার এই তৎপরতায় তালেবানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তালেবান সরকার তার প্রতিবেশী সব দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক চায়। তাই তারা যেমন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না, তেমনি আফগান বিষয়ে তাদেরও উচিত একই নীতি মেনে চলা। নয়তো আমেরিকাকে তাদের উপর নজরদারি করতে কোনো দেশ সহযোগিতা করতে চাইলে আঞ্চলিক বিশৃঙ্খলার জন্য উক্ত দেশই দায়ী থাকবে।

আমেরিকাকে সামরিক ঘাঁটি দিতে এখনো কোনো দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানকে নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেলেও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মাদ কোরেশি এই বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তারা তাদের দেশে আমেরিকাকে কোনো সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারে জন্য অনুমতি দেবে না।

ইমরান খান গত কয়েক দিন আগে জানান, তার দেশ আমেরিকাকে সামরিক ঘাঁটির জন্য জায়গা দিলেও আমেরিকার পক্ষে এই যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়।
আর পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, ন্যাটো জোটকে তালেবানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগিতায় তার দেশ চড়া মূল্য দিয়েছে। গোটা পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছিল সীমান্ত এলাকায় প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়, প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয় তার দেশ। আর আমেরিকা সহায়তা দিয়েছে মাত্র ২০ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে আমেরিকার ছত্রছায়ায় ভারত যে বিলিয়ন ডলার আফগানে বিনিয়োগ করেছিল তা হুমকির মুখে। আমেরিকার অবশ্য ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছিল কাবুলের গানি সরকারকে সহযোগিতার। কিন্তু ভারত এই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টোটা করে। তারা তালেবানের সাথে যোগাযোগ শুরু করে দেনদরবার করছে তাদের সাথে কাজ করার জন্য। অথচ ইতিপূর্বে শান্তি চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল ভারত।

এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ দৃশ্যপটে হাজির সুলতান রজব তাইয়্যিপ এরদোগান। ঘোষণা এলো কাবুল এয়ারপোর্টের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী তার দেশ।

আমেরিকার ন্যাটো মিত্র তুরস্কের এই ঘোষণায় বাইডেন যারপরনাই খুশি হয়েছে বলে মনে হলেও ভিতরে চলছে কূটনৈতিক দরকষাকষি। তবে এ নিয়ে নাখোশ এরদোগান ভক্তরা। তারা চায় না এরদোগান তালেবানের বিরোধিতা করুন।

তালেবান তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলে রেখেছে, ন্যাটো মিত্র তুরস্ক গত ২০ বছর আফগানিস্তানের অবস্থান করছে। শান্তি চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে তাদেরও আফগান ভূমি ত্যাগ করতে হবে। কোনো বিদেশী সৈন্য আফগানে সহ্য করা হবে না। এর বিপরীতে তুরস্ক কিছু করতে চাইলে ন্যাটো মিত্র হিসেবে তুরস্কের বিরুদ্ধেই চুক্তিভঙ্গের কারণে তালেবান অফেন্সিভ শুরু করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে জি৭ সম্মেলনে তুরস্ক কাবুলের দায়িত্ব নেয়ার পক্ষে যেসব শর্ত আমেরিকাসহ ন্যাটোর কাছে উত্থাপন করেছে, তা অদ্ভুত রকম। আমেরিকার পক্ষে তা মেনে নেয়া একরকম অসম্ভব।

শর্তগুলো হলো-
১. তুরস্কের বিরুদ্ধে আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
২. রাশিয়ার মিসাইল এস-৪০০ নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবে না ন্যাটো জোট, আমেরিকা।
৩. এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্পে তুরস্ককে আবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. কাবুলে তুরস্কের সৈন্য থাকলেও সব খরচ লজিস্টিক সাপোর্টসহ সব কিছু ন্যাটোকে বহন করে হবে।
৫. এসব ক্ষেত্রে তারা পাকিস্তানকে সাথে রাখার বিষয়টিও বলছে।

এ বিষয়গুলো সমধান হওয়া এত সহজ না। তারপর তালেবান তুরস্ককে একপ্রকার হুমকি দিয়ে রেখেছে, কোনো প্রকার ছাড় তারা দেবে না। আর তুরস্ক কখনো তালেবানের সাথে যুদ্ধের ঝুঁকি নেবে না।

তাই শেষ পর্যন্ত সুলতান এরদোগানকে পাকিস্তানের মধ্যস্ততায় মীমাংসায় আসতেই হবে মনে হচ্ছে।

তুরস্ক মূলত মধ্য এশিয়ায় পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে প্রভাব বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা করছে এটা পরিষ্কার। তবে তালেবানের সাথে সংঘাতের মাধ্যমে তা কখনো সম্ভব হবে না। কারণ মধ্য এশিয়া তালেবনাকে পাস কাটিয়ে কোনো শক্তির পক্ষে প্রভাব বাড়ানো বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্ভব না, যতটা তাদের সাথে সহযোগিতার নীতিতে করা সম্ভব।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us