ইসরাইল কি আরেকটি যুদ্ধ চাচ্ছে?
ইসরাইলি বিমান - ছবি সংগৃহীত
ইসরাইলে অতিসক্রিয়তাবাদী ডানপন্থী নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছর শাসনের অবসান ঘটেছে অতি সম্প্রতি। সরকার গঠিত হয়েছে নেতানিয়াহুর এক সাবেক সহযোগী ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেতের নেতৃত্বে। সরকার গঠন করা দলের মধ্যে অতিডান, বাম, মধ্যপন্থী আর আরব-ইসরাইলি দলও রয়েছে। ভঙ্গুর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোটটি ক্ষমতায় এলেও এর পেছনে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন রয়েছে বলে মনে হয়। নাফতালি বেনেতের নীতি কৌশল কতটা নেতানিয়াহু থেকে আলাদা হবে এ মুহূর্তে সেটি কল্পনা করা কঠিন। তবে নেতানিয়াহু অধ্যায়ের সম্ভবত আপাতত অবসান ঘটেছে। নাফতালির ভূমিকা ইসরাইলের বৃহত্তর ডকট্রিনের অংশ হলেও কৌশলের বাস্তবায়নগত ভিন্নতা দেখা যেতে পারে নেতানিয়াহুর সাথে। তবে নাফতালির যুদ্ধবাজ পটভূমি রয়েছে।
আর ইসরাইলের রাজনৈতিক ঐতিহ্য হলো, সঙ্কটে পড়লে ফিলিস্তিনিদের ওপর নানা অজুহাতে হামলা চালানো। গাজার সাম্প্রতিক সামরিক হামলার বিষয়ে যুদ্ধবিরতি স্থায়ী রূপ পাবার আগেই নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শেখ জাররাহতে নতুন করে শুরু করা হয়েছে আরব উচ্ছেদ অভিযান। বায়তুল মোকাদ্দাসে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি বেলুন উড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে গাজায় নতুন করে বিমান হামলাও চালানো হয়েছে। পশ্চিম তীরে দুজন ফিলিস্তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। এসবের পেছনে যে গাজায় আরেক দফা হামলা চালানো, সেটি সম্ভবত এখন আর অস্পষ্ট নেই। নাফতালি মনে করছেন, নেতানিয়াহুর যুদ্ধ ব্যর্থতার পর গাজায় পুনর্গঠন শুরু হবার আগেই আবার হামলা চালিয়ে তার সরকারের শক্তিমত্তার জানান দিলে জাতীয়তাবাদী চেতনা তার পক্ষে থাকবে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ইসরাইলের আকাক্সক্ষা অনুসারে এগোবে বলে মনে হয় না। এই যুদ্ধে ইসরাইল সুস্পষ্ট পরাজয়ের সম্মুখীন হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আগের গাজা যুদ্ধে হামাস তার পুরো শক্তি প্রদর্শন করেনি। এবার ইসরাইল যেমন যুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারে ঠিক সেভাবে হামাসের পেছনে পাল্টা শক্তির মদদ বাড়তে পারে। আরেক দফা গাজা আক্রমণ হলে হিজবুল্লাহ, সিরিয়া এবং ইরান যেভাবেই হোক তার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে। মিসরের সিসি সরকার কাতার, তুরস্ক ও হামাসের সাথে বৈরিতা কমানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইরানের সাথেও যোগসূত্র তৈরির চেষ্টা করছে। মিসরে ব্রাদারহুডের ১২ জন নেতার সর্বোচ্চ আদালতে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখায় স্পষ্ট যে, দলটির সাথে এখনো সম্পর্ক নতুন করে যাত্রা শুরুর অবস্থায় যায়নি। তবে ফিলিস্তিনের সাথে নতুন সংঘর্ষে ইসরাইল তার গতানুগতিক মুসলিম মিত্রদেরও পাশে না পাবার সম্ভাবনাই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে কেবল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সূত্রের পূর্বাভাস অনুসারে, ইসরাইল চেষ্টা করবে আরেক দফা গাজায় অভিযান চালানোর অজুহাত সৃষ্টি করার। কিন্তু এ ধরনের কিছু সত্যি সত্যি নাফতালি বেনেত শুরু করলে আন্তর্জাতিক সমর্থন ইসরাইলের আরো কমে যেতে পারে। আর এই যুদ্ধে চীন-রাশিয়ার মতো শক্তিও যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
mrkmmb@gmail.com