বাইডেন-পুতিনের বৈঠকে কে লাভবান?
বাইডেন ও পুতিন - ছবি সংগৃহীত
সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনাবলির একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক। দুই নেতার মধ্যে হওয়া এই শীর্ষ বৈঠকের দৃশ্যমান ফল দুটি। একটি হলো দুই দেশের রাষ্ট্রদূতদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া আর দ্বিতীয়টি হলো কৌশলগত অস্ত্র সীমিতকরণ আলোচনা স্টার্ট-৩ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সমঝোতা। বাইডেনের মূল অ্যাজেন্ডা ছিল চীনের সাথে রাশিয়ার কৌশলগত মৈত্রীর মধ্যে ব্যবধান তৈরি করা। এর কারণে জেনেভার বিমানে ওঠার আগে বাইডেন মন্তব্য করেছিলেন ‘চীন রাশিয়ার উত্থানকে দমন করতে মরিয়া হয়ে ঊঠেছে।’ আর পুতিনের সাথে শীর্ষ বৈঠক শেষ করার কয়েক দিন পরেই বিরোধী নেতা নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগের ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর আরো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেনের সাম্প্রতিক একাধিক কৌশলগত শীর্ষ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের বিরুদ্ধে এক মৈত্রী বলয় গঠন। আর চীনা মিত্রদের যথাসম্ভব বেইজিং থেকে দূরে সরানো। ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে তুরস্কের সাথে পূর্ণ বোঝাপড়া হয়েছে এমন কোনো আলামত নেই। জার্মানি আর ফ্রান্স চীনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে না নামার আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। আসিয়ানের সদস্যদের সাথে দক্ষিণ চায়না সাগর ও মিয়ানমার ইস্যুতে একটি মৈত্রী বলয় তৈরি করতে চাইছেন বাইডেন। এক্ষেত্রেও দৃশ্যমান সাফল্য এখনো পর্যন্ত নেই। ভারত কোয়াডে থাকলেও সব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে নেই।
এভাবে চীনকে চেপে ধরার উদ্যোগ আয়োজনের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে দুইভাবে পড়ছে। প্রথমত, চীন আমেরিকার সাথে প্রত্যক্ষ সঙ্ঘাতের আগে একটি ছায়া সঙ্ঘাতে দেশটিকে ব্যস্ত করার মধ্যে তার স্বার্থ দেখতে পাচ্ছে। এ কারণে ইরানের সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে বেইজিং। আবার তার বিপরীত শক্তি সৌদি আরব ও মিত্রদের সাথেও সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। বেইজিং তুরস্কের সাথেও সম্পর্ক ক্রমাগতভাবেই বাড়াচ্ছে। সেই সাথে ইসরাইল বিরোধিতার ব্যাপারে ধীরে ধীরে সরব হচ্ছে।
ইসরাইল গাজায় আরেক দফা যুদ্ধে জড়ানোর ঘটনা ঘটলে এর সাথে হিজবুল্লাহর মাধ্যমে হোক অথবা সরাসরি জড়িয়ে যেতে পারে ইরান। আর ইরানের পেছনে সরাসরি চলে আসতে পারে চীনও। এমনকি কিছুটা দূরত্ব রেখে হলেও এখানে আমেরিকার কৌশলগত মিত্র হিসাবে ইসরাইলবিরোধী জোটের পেছনে সমর্থন দিতে পারে রাশিয়াও।
সার্বিকভাবে আরেকটি যুদ্ধের ব্যাপারে ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সুবিধা লাভের জন্য হয়তো জুয়া খেলায় নামতে চাইতে পারেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাফতালি। আর সে বিষয়ে ওয়াশিংটন সমর্থন দিলে আরেকটি ইসরাইল-গাজা পূর্ণ যুদ্ধ শুরু হতে পারে। আর পুনর্গঠন কাজ শুরু হবার আগেই আরেক দফা ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসতে পারে সঙ্কীর্ণ এই উপত্যকায়। তবে যুদ্ধটি মধ্যপ্রাচ্যের দুর্দমনীয় ইমেজের এই দেশটির বড়ভাবেই পতন সময়ের সূচনা করতে পারে।
mrkmmb@gmail.com