ব্রেন টিউমারে খাবার
ব্রেন টিউমারে খাবার - ছবি সংগৃহীত
ব্রেন টিউমারের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে বংশগতির প্রভাবে এর ঝুঁকি দেখা যায়। অতিরিক্ত রেডিয়েশনের মধ্যে যারা থাকে তাদের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহারকারীর মধ্যে ১টি সমীক্ষায় দেখা গেছে এই রোগের ঝুঁকি থাকে। কিছু কিছু রাসায়নিকের প্রভাবে এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সুস্থ্য-স্বাভাবিক জীবনযাপন। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা করে ব্রেন টিউমারসহ যেকোনো ক্যান্সার কোষ বা টিউমারের বৃদ্ধিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত কিটনাশক ব্যবহার করা খাদ্য, মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারে তৈরি খাদ্য ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
কৃত্রিম রঙ, কৃত্রিম চিনি, রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ ব্যবহারে তৈরি খাবার পরিহার করে চলতে হবে। পরিশোধিত খাবারের ব্যবহার কমাতে হবে। বলা হয় সাদা চাল, সাদা আটা, সাদা চিনির ব্যবহার কমাতে হবে। পরিশোধিত খাদ্যশস্য বিশেষ করে ময়দা সাদা করার জন্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা তা মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। লবণে জারিত গোশত, কলা, হটডগ, সালামি, সসেজ বহু মানুষের দৈনন্দিন খাবার। প্রক্রিয়াজাত গোশতে সোডিয়াম নাইট্রেটের মতো ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ থাকে। ধুঁমায়িত বা উচ্চ তাতে পোড়ানো গোশত নাইট্রেট বিক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রাইটে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং প্রক্রিয়াজাত গোশত ব্যবহার বর্জন করতে হবে। টিনজাত খাবারের (ক্যানফুড) ব্যবহার কমাতে হবে। প্লাস্টিক বোতল, প্লাস্টিক প্যাকেট, প্লাস্টিকের বক্সে রাখা খাবার ব্যবহার কমাতে হবে।
যতটা সম্ভব তাজা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ-ডিম, মাছ-গোশথ ও আঁশযুক্ত শস্যজাতীয় খাবারের মাধ্যমে সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে সুস্থ ও ভালো থাকা সম্ভব। এর সাথে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
* পুষ্টিবিদ
ডায়াবেটিসে কিডনি রোগ
অধ্যাপক শামীম আহমেদ
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি অন্যতম রোগ এবং এর কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ এর মধ্যে অন্যতম। ডায়াবেটিসের প্রভাবে শারীরিক যেকোনো অঙ্গ বা সিস্টেম আক্রান্ত হতে পারে। কিডনি রোগের ওপর প্রধানত ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি এবং কিডনি বা প্রসাব নালীতে সংক্রমণ অন্যতম।
ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি কী? কিডনি সম্পূর্ণভাবে বিকল বা অকেজো হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে উন্নত দেশে ডায়াবেটিসকে প্রধান এবং আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ইহাকে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় এই রোগের হার শতকরা ৪০-৫০ ভাগ এবং যারা ইনসুলিন নির্ভরশীল নন তাদের বেলায় শতকরা ১৫-২০ ভাগ। সাধারণত ইনসুলিন নির্ভরশীল ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই রোগের কারণে কিডনিতে প্রাথমিক বিপর্যয় শুরু হয় ৭-১০ বছরের মধ্যে, যখন কোনো উপসর্গই থাকে না শুধু প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এবং ১০-১৫ বছরের মধ্যে প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, তখন তাকে বলা নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম এবং এই সময়ে রোগীর শরীরে পানি আসা শুরু হয়। আর ১৫-২০ বছরের মধ্যে কিডনির কার্যক্রম হ্রাস পেতে থাকে। তখন একে ধীরগতিতে কিডনি ফেইলিউর বলা হয়।
উপসর্গ : প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির কোনো উপসর্গ থাকে না। উপসর্গ যখন দেখা যায় তত দিনে কিডনির অনেকটা ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রধান প্রধান উপসর্গগুলো হচ্ছে পায়ে পানি আসা এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া। তাদেরকে পরীক্ষা করে চোখের ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতার উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। সাধারণত ডায়াবেটিস হওয়ার ৫-১৫ বছর পরে এ ধরনের জটিলতা দেখা যায়। এই পর্যায়ে চিকিৎসায় খুব ভালো ফল লাভ সম্ভব হয় না। এ জন্যই প্রতিদিন এসব রোগীকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর পরেই প্রস্রাবে অ্যালবুমিন আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতি : প্রাথমিক পর্যায়ে শারীরিক পরীক্ষা করে উল্লেখযোগ্য কিছুই ধরা পড়ে না। তবে সময়ের তারতম্য হিসাবে ডায়াবেটিস রোগের জটিলতা, চোখের রেটিনোপ্যাথি বিভিন্ন প্রকার চর্ম ও স্নায়ু রোগের অবস্থান পরীক্ষা করে ধরা পড়ে। প্রতিটি ডায়াবেটিসের রোগীর সকালের প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন বা আমিষ, সুগার বা শর্করা আছে কি না তা দেখা উচিত। অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রস্রাবে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা ও কাষ্ট দেখা হয়। যদি প্রসাবে শ্বেত কণিকা পাওয়া যায়, প্রসাব কালাচারের মাধ্যমে জীবাণুজনিত ইনফেকশন আছে কি না তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাব পরীক্ষা করে কত পরিমাণ অ্যালবুমিন যাচ্ছে তা নির্ণয় করা হয়। ২৪ ঘণ্টায় অ্যালবুমিন ৩০০ মি:গ্রা: এর উপরে গেলেই ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি ভাবা হয়। প্রতিটি রোগীর রক্তের ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বনেট পরীক্ষা করে দেখা হয়। প্রস্রাবে যদি ৩০০ মি:গ্রা: এর ওপরে অ্যালবুমিন যায় এবং সাথে সাথে রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিটিনিন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে তখন কিডনি অকেজো হওয়ার প্রাথমিক পর্যায় ধরা হয়।
চিকিৎসা ব্যবস্থা : ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির চিকিৎসা নির্ভর করে ডায়াবেটিস দ্বারা কিডনি কতখানি আক্রান্ত হয়েছে তার ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস রোগীর নেফ্রোপ্যাথি ধরার সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার লক্ষণও দেখা যায়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে রোগীর ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আনা হয়। এর সাথে সাথে খাবারের তালিকা সঠিক আছে কি না তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হয়। প্রস্রাবে যদি অ্যালবুমিন নির্গত হয় তাহলে এসিই ইনহেবিটর জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। এসিই ইনহেবিটর জাতীয় ওষুধ কিডনির ছাকনির ওপর কাজ করে।
অ্যালবুমিন নির্গত হওয়ার পরিমাণকে কমিয়ে দেয়। রোগীর যদি এ পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ থাকে তাহলে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হয় এবং তা এসিই ইনহেবিটর দ্বারা করাই শ্রেয়। কিডনির কাজ বেশি লোপ পেয়ে গেল এসিই ইনহেবিটর জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এতে রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বাড়ায় যাহা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এই পর্যায়ে রোগীর খাবারে আমিষের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয় অর্থাৎ রক্তের ক্রিয়েটনিনের ওপর নির্ভর করে আমিষের পরিমাণ ০.৫-০-,৭৫ গ্রাম প্রতি কেজি শরীরের ওজনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। অনেক রোগীর ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার পর পা ও পেটে পানি আসে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে খাওয়ার পানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা ২৪ ঘণ্টায় এক লিটারের মধ্যে রাখা প্রয়োজন। পানি শরীর থেকে বের করার জন্য ফ্রুসেমাইড বা লুপ ডায়াবেটিস জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে এবং কিডনির কার্যকারিতা ও শরীরে পানির পরিমাণ অনুযায়ী ওষুদের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোগীর যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিফেডিপিন বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার বা মিথাইল ডোপ জাতীয় ওষুধ নিরাপদ। প্রস্রাবে জীবাণুজনিত ইনফেকশন বা শরীরে কোথাও ইনফেকশন হলেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সময়ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
লেখক : পরিচালক ও অধ্যাপক (অব:)
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট, ঢাকা