কালোমানিকের দাম উঠেছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা
কালামানিক - ছবি : নয়া দিগন্ত
আদর করে গরুর নাম দিয়েছে কালোমানিক। বর্তমানে গরুটির ওজন ৩০ মণ। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের আফাজ মিয়ার ছেলে চাঁন মিয়া গরুটির মালিক। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে শখ করে নিজ বাড়িতে গরুটি লালন-পালন করছেন তিনি। ক্রেতারা দাম হেঁকেছেন সাড়ে আট লাখ টাকা। এ গরুর বয়স চার বছর। গরুটি লম্বায় ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি, উচ্চতায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৩০ মণ। খুবই শান্ত ও রোগমুক্ত এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত সিন্ধি জাতের ষাঁড়টি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান চাঁন মিয়া।
শখ করে পালন করা ষাঁড়টি দেখার জন্য প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছেন আশপাশের এলাকাসহ দূর-দূরান্তের উৎসুক লোকজন। করোনাভাইরাস ঝুঁকির কারণে তিনি হাটে তুলতে চান না গরুটি। তবে তিনি ফেসবুকে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন। যোগাযোগের নম্বরও দিয়েছেন। সেখানে তিনি দামও উল্লেখ করেছেন।
চাঁন মিয়া বলেন, ‘ষাঁড়টি জন্মের পর থেকেই আমি লালন পালন করছি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করেছি। গরুটিকে মোটা তাজাকরণের ওষুধ ও ইনজেকশন এমন কোনো কিছুই প্রয়োগ করা হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ বিভাগ অনুমোদিত মেশিনে তৈরি খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এ ছাড়াও তার কাছে ছোট-বড় আরো তিনটি গাভী গরু রয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারাও গরুটির স্বাস্থ্যবিষয়ক খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন বাহাউদ্দিন সারোয়ার রেজভী বলেন, চাঁন মিয়া তার খামারে দেশীয় খাবার খাইয়ে গরুটিকে লালন-পালন করেছেন। ষাঁড়টিকে নিয়মিত দেখাশোনা করা হচ্ছে।
ছাগলনাইয়ায় বেকার যুবকদের প্রেরণা খামারি মাহবুব
আবুল হাসান ছাগলনাইয়া-পরশুরাম (ফেনী)
২০১৩ সালে মৃত্যুর সময় বাবার রেখে যাওয়া একটি গরুর বাছুর পালনের অসিয়ত মেনে গরু পালন শুরু করেছিলেন ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল হক মাহবুব। বাবার স্মৃতিবিজড়িত বাছুরটির সাথে আরো দু’টি গাভী কিনে পর্যাক্রমে তাদের বাছুর থেকে অর্ধশতাধিক গরুর মালিক হয়ে গড়ে তুলেছেন লুৎফুর নাহার চৌধুরী ডেইরি ফার্ম। নিজের একক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ দিন ধরে মায়ের নামে খামারটি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় তিনজন শ্রমিক রেখেছেন। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে তার খামার থেকে। এলাকার গোশতের চাহিদার বড় একটা অংশও তিনি পূরণ করছেন।
এলাকায় উন্নতজাতের গরুর সফল খামারি হিসেবে বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন তিনি। তার দেখাদেখি ছাগলনাইয়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ডেইরি খামার গড়ে উঠেছে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও অনেকে গড়ে তুলেছেন ডেইরি খামার। ছাগলনাইয়া উপজেলা ডেইরি খামার মালিক সমিতির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার খামারে বিদেশী জাতের বিজিআন, হলস্ট্রেইন পিজায়ান, শাহীওয়াল জাতের গরু রয়েছে। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে নিজের উৎপাদিত কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ভুট্টা খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার খামারের গরুগুলোর দেড় লাখ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা দাম রয়েছে।
উত্তর আধারমানিক গ্রামে গড়ে তোলা লুৎফুর নাহার চৌধুরী ডেইরি ফার্ম দেখতে গেলে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদককে খামারি রবিউল হক মাহবুব বলেন, করোনা দুর্যোগের মধ্যে দুধ বাজারজাতকরণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। প্রজনন খরচ বেড়ে প্রতিটি গরুর জন্য চার থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে খামারিদের। খাদ্য ও ওষুধের দাম বাড়লেও দুধের দাম না বাড়ায় অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতি কেজি দুধ ৫০ টাকা দরেই বিক্রি করতে হয়।
একজন খামারির জন্য সরকারিভাবে স্বল্প সুদে মাত্র দুই লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়- যা একেবারেই সামান্য বলে অভিযোগ করেন তিনি। দেশের বেকার যুবকরা চাকরির জন্য ঘুরে ঘুরে হতাশ না হয়ে গরুর খামার করে নিজের কর্মসংস্থান করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন বলে তার অভিমত।
আসন্ন কোরবানির ঈদে ভারত থেকে অবৈধপথে গরু আসা বন্ধ রাখতে পারলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হতে পারবেন বলে জানান তিনি। কোরবানির পশুকে ক্ষতিকর ইনজেকশন না দিয়ে ও ট্যাবলেট না খাইয়ে কাঁচা ঘাস, শুকনো খড়ের পাশাপাশি ভুসি, খৈল, ছোলা খাওয়ানোর মাধ্যমে মোটাতাজা করার অনুরোধ করেছেন সফল খামারি রবিউল হক মাহবুব চেয়ারম্যান।