দেশে ১৭ হাজার কোটি টাকার কফি ও কাজুবাদাম চাষের সম্ভাবনা

কাজুবাদাম - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বে কাজুবাদাম ও কফির আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ৩৯.৮১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই দু’টি ফসলের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দেশে দেড় হাজার টন কাজুবাদম চাষ হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে চার লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কাজুবাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২১-২৫ মেয়াদে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, পার্বত্য তিন জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর অনাবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম আবাদ করতে পারলে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি, পাহাড়ি জমিতে কফি আবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করাও সম্ভব হবে। তিনি জানান, এক লাখ হেক্টর জমিতে কফি চাষ করতে পারলে দুই লাখ টন কফি উৎপাদন সম্ভব যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। সবমিলিয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কাজুবাদাম ও কফি আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ২৮টি জেলায় ৮৮টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মাধ্যমে উচ্চফলনশীল ও উন্নত জাতের চারা উদ্ভাবন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য পাহাড়ি এলাকার ভূ-প্রকৃতির অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায় কফি ও কাজুবাদাম জাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রকল্পের বিশেষ অঞ্চলগুলোতে অল্প পরিসরে কাজুবাদাম ও কফি উৎপাদন হচ্ছে। তাই এই আবাদ ব্যাপকতর করা এবং উন্নত প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়ার সাথে সাথে যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষাবাদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে; কিন্তু চাষাবাদ হচ্ছে না পর্যায়ক্রমে সেসব এলাকায় চাষাবাদের আওতায় আনার লক্ষ্যে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বে কাজুবাদাম উৎপাদন হয় মোট ৩৫ লাখ মে.টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদন হয় দেড় হাজার টন। সবচেয়ে বেশি ১২ লাখ টন উৎপাদন হয় আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। এ ছাড়া ভারতে সাত লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতনামে চার লাখ টন উৎপাদন হয়। সূত্র বলছে, বিশ্বে কাজুবাদামের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৯.৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই মোট রফতানির ৬৩.১০ শতাংশ বা ৩.৩৪ বিলিয়ন ডলার কাজুবাদাম রফতানি করে থাকে। এ ছাড়া ভারত ৬৭৩.৫৩ মিলিয়ন ডলার বা ১৩.১০ শতাংশ, নেদারল্যান্ডস ৩০৪.২৪ মিলিয়ন ডলার বা ৫.৯০ শতাংশ, জার্মানি ১৭৯.৯১ মিলিয়ন ডলার বা ৩.৫০ শতাংশ। কাজুবাদাম রফতানিকারক অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ব্রাজিল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আইভরি কোস্ট, ইন্দোনেশিয়া, বেলজিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্র।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে কাজুবাদাম ও কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় অন্তত পাঁচ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এর মধ্যে দুই লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম আবাদ করলে বছরে ১০০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। পাশাপাশি পাহাড়ি জমিতে কফিও আবাদ করা যাবে। বর্তমানে দেশে দেড় হাজার টন কাজুবাদাম উৎপাদন হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার রফতানির জন্য চার লাখ ৪৪ হাজার টন কাজুবাদাম উৎপাদন করতে হবে। ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কাজুবাদাম চাষাবাদ বাড়ানোর উদোগ নেয়া হয়েছে।
দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতেই সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলোÑ কাজুবাদাম ও কফি ফসলের বৈশিষ্ট্যকরণ, মূল্যায়ন, সংরক্ষণ এবং উচ্চফলনশীল ও উন্নতজাত উদ্ভাবন করা হবে। প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং উৎপাদিত কাজুবাদাম ও কফি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকল্প মেয়াদে আবহাওয়া উপযোগী কাজুবাদামের দু’টি এবং কফির দু’টি করে মোট চারটি নতুন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করবে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যেই কাজুবাদাম ও কফির আধুনিক ও উন্নতজাতের মাতৃবাগান স্থাপন; নতুন বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
প্রকল্প মেয়াদে কাজুবাদামের বিদ্যমান জাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে চাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা; আধুনিক উৎপাদন কলাকৌশল, সংগ্রহ ও চাষিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান; নিজস্ব উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ হতে ‘র’ কাজুবাদাম আমদানির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করা হবে। গতকাল রোববার বান্দরবন জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের এক অবহিতকরণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে আমরা কাজ করছি। পাহাড়ি অঞ্চলসহ সারা দেশের যেসব অঞ্চলে কাজুবাদাম এবং কফির চাষাবাদের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে; তা চাষের আওতায় আনতে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।