যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-চীন : ‘বারমুডা ট্র্যাঙ্গলে’ দিশাহারা ভারত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি - ছবি সংগৃহীত
এক ত্রিমুখী ধাঁধার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতি। যাকে কূটনৈতিক ত্রিভুজ বলেই অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর এই সঙ্কটের প্রাসঙ্গিকতা আরো বেশি করে টের পাচ্ছে ভারত।
আমেরিকা-রাশিয়া-চীন। এই তিন শক্তিধর রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কের ওঠাপড়ার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের স্বার্থ। কূটনৈতিক সূত্রে খবর- কৌশলগত, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা- সব ক্ষেত্রেই এই পারস্পরিক সম্পর্কের ছায়া পড়ছে।
প্রথমত আমেরিকা-রাশিয়া সম্পর্ক অথৈ পানিতে। সম্প্রতি জেনেভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকেও সে বরফ গলার সম্ভাবনা দেখা যায়নি। দুই, ইউরোপ যত রাশিয়াকে জঙ্গি সামরিক রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে চাইছে, মস্কো ততই কাছে ঘেঁষছে বেইজিংয়ের। তিন, ওয়াশিংটনের সাথে চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।
এই বিচিত্র পরিস্থিতির কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ভারত। সাম্প্রতিক জি-৭, আমেরিকা-ইইউ ও আমেরিকা-ন্যাটো বৈঠক থেকে একটি তথ্য সামনে আসছে। তা হলো, পশ্চিমের চীন-বিরোধী সমস্ত পরিকল্পনায় সঙ্গী হিসেবে ভারতকে রাখা হচ্ছে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া-জাপান-যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত কোয়াড যার একটা উদাহরণ। কিন্তু এটাও নয়াদিল্লিকে মাপতে হচ্ছে, আমেরিকার প্রবল চীন-বিরোধিতার জাহাজে চড়াটা কতটা বাস্তবোচিত হবে। পাঁচগুণ শক্তিধর প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে প্রবল সঙ্কট তৈরি হলে ওয়াশিংটনের উপর কতটা নির্ভর করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছে সাউথ ব্লক। বরং আমেরিকার যুদ্ধে নিজেরা শামিল না-হয়ে একটি চাঁছাছোলা চীন-নীতি যদি ভারত নিজে তৈরি করতে পারে, সেটা দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক স্তরে ভারতের জন্য ভালো।
আবার অস্ত্রসরঞ্জাম আমদানি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সমন্বয়ের প্রশ্নে রাশিয়া ভারতের প্রাচীনতম মিত্র। কিন্তু ভারত-আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখে সেই রাশিয়াও খুশি নয়। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন কোয়াড-এর প্রকাশ্য সমালোচনা করে মস্কো পৃথক ভাবে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশল রচনা করতে চায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক দিকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি বিশ্ব এবং অন্য দিকে চীন-রাশিয়া- আসন্ন বিশ্বনীতি যদি এই স্পষ্ট দু’ভাগ হয়ে যায়, ভারতের কূটনৈতিক দর কষাকষির সম্ভাবনাও সীমিত হয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে চাইবে চীন ও পাকিস্তান।
ভারতের কাছে সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে যদি আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে কিছুটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার চীন-নির্ভরতা কমবে। ওয়াশিংটনের পক্ষেও রাশিয়া-চিনের যৌথ শত্রুতা কাম্য নয়। বরং শুধু চীনের দিকেই নিজেদের নিশানা স্থির রাখলে তা বেশি কার্যকরী হবে। কারণ রাশিয়া এখনো একা আমেরিকাকে চাপে ফেলার মতো বড় শক্তি নয়। তবে কূটনৈতিক সূত্রের মতে, বিভিন্ন কারণে ভারত চাইলেই রাতারাতি আমেরিকা-রাশিয়ার করমর্দন ঘটছে না। ফলে এই চাপ আপাতত বহালই থাকছে মোদি সরকারের ওপর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা