আবার শিরোনামে আজহার, নির্বাসনেই গেল পুরো জীবন!
আজহারউদ্দিন -
বাইশ গজে ব্যাট হাতে যতটা সাবলীল তিনি, মাঠের বাইরেও মনে হয় একইভাবে বিতর্ক তৈরি করতে ততটাই ওস্তাদ। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম বর্ণময় চরিত্র তিনি, আবার কখনও দেশবাসীর কাছে ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে খলনায়ক। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিতর্ক। তিনি বিতর্ককে ছাড়তে চাইলেও, বিতর্ক কোনো দিন তার পিছু ছাড়েনি। বৃহস্পতিবারের ঘটনা যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম। নিয়ম ভাঙার দায়ে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হলো তাকে। আজহারউদ্দিনের গোটা জীবনটাই যেন নিয়মভাঙার খেলা।
শুরুটা হয়েছিল ’৯০-এর দশকে। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তখন তুঙ্গে। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু-মুসলিম বিদ্রোহে তোলপাড় গোটা ভারত। এই সময়কালে বারবার প্রশ্ন উঠেছে তার ভূমিকা নিয়ে। যখনই ভারত বনাম পাকিস্তানের খেলা হতো, তখনই আজহারউদ্দিনকে নিয়ে
তৈরি হতো বিতর্ক। প্রতিবার তিনি আউট হলেই মনে করা হতো, ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানকে সুবিধা করে দিতেই আউট হয়েছেন। বিতর্ক আরো বৃদ্ধি পায় যখন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ দল থেকে আজহারউদ্দিনকে বাদ দেন মনোজ প্রভাকর। সরাসরি তিনি আজহারের নাম তুলে বলেছিলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি।
এরপরেই আসে তার জীবনের সব থেকে কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সরাসরি ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। জড়িয়ে গিয়েছিলেন অজয় জাডেজা, অজয় শর্মা, মনোজ প্রভাকরও। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে সরাসরি তার নাম করেছিলেন। বলেছিলেন, আজহারই তাকে
জনৈকি জুয়াড়ি এম কে গুপ্তর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাকে আজীবন নির্বাসিত করে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় ক্রিকেটের ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচিয়েছিলেন এক বাঙালি, সৌরভ গাঙ্গুলি। ঠান্ডা মাথা এবং অসাধারণ কৌশলে ভারতীয় ক্রিকেটকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনেন।
মাঠের লড়াইয়ে যখন এই অবস্থা, তখন মাঠের বাইরে আজহারের ব্যক্তিগত জীবনও টালমাটাল। অল্প বয়সেই নুরিনকে বিয়ে করেছিলেন আজহার। কিন্তু ক্রিকেটজীবনের মধ্যগগনে থাকা অবস্থাতেই তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় সঙ্গীতা বিজলানির। সঙ্গীতার সঙ্গে সম্পর্কের কথা শোনা গিয়েছিল সালমান
খানেরও। ত্রিকোণ প্রেমের রসালো গল্প তখন প্রতিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পাচ্ছে। ক্রিকেট থেকে আজহারও ক্রমশ দূরে সরছিলেন। ২০০৬ সালে তার উপর থেকে নির্বাসন তুলে নেয় ভারতীয় বোর্ড। ২০১২-তে অন্ধ্রপ্রদেশের হাই কোর্ট আজহারের নির্বাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে।
ক্রিকেটকে সাময়িকভাবে দূরে সরিয়ে রেখে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন আজহার। কংগ্রেসের টিকিটে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। এমন সময় জীবনে আরো বড় ধাক্কা আসে। বাইক দুর্ঘটনায় হারান ছেলেকে। রাজনৈতিক জীবনও খুব সুখের যায়নি আজহারের কাছে। ক্রিকেটের প্রশাসনে ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালাতে থাকেন তিনি। অবশেষে বছর দুয়েক আগে ভোটে জিতে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদকালে বারবার তার ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কখনো ভুল সিদ্ধান্ত, কখনো খামখেয়ালি মেজাজ সংস্থার অন্দরেই তার একাধিক বিরোধী তৈরি করে দিয়েছিল।
তারই অন্তিম পরিণতি সংস্থার পদ থেকে নির্বাসন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা