হতদরিদ্র ভ্যানচালক থেকে কারখানার মালিক
তিনি এখন কারখানার মালিক - ছবি সংগৃহীত
শূন্য হাতে শুরু করে দৃঢ় মনোবল, নিষ্ঠা ও প্রত্যয়কে সম্বল করে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার আশুতিয়া গ্রামের হতদরিদ্র শহীদুল্লাহ আজ সফল। দরিদ্র ভ্যানচালক থেকে আজ তিনি একটি কারখানার মালিক। তার কারখানায় কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আরো অনেক মানুষ। তিনি বিশ্বাস করেন কোনো কাজের ব্যর্থতায় হতাশ হতে নেই। আবার কোনো কোনো ব্যর্থতা জীবনকে সফল ও সার্থক করে তোলে।
ছোটবেলাতেই শহীদুল্লাহর বাবা মারা যান। সংসারের অভাব-অনটনে কষ্টে কাটে দিন। বাধ্য হয়েই অপরের পিকআপ ভ্যানের সহকারী ড্রাইভার হিসেবে কাজে যোগ দেন ছোটকালেই। দরিদ্রতার কশাঘাতে নিষ্পেষিত ও জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিন বছর পরে পিকআপ ভ্যানের চাকরি ছেড়ে দেন। এক সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে তার এক প্রতিবেশীর পরামর্শে সুই, সুতা ও চুমকি পাথর দিয়ে শাড়ির ওপর কাজ করার শিক্ষা নেন।
প্রথমে স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে নিজ বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এ কাজ অধিক লাভজনক হওয়ায় ধীরে ধীরে পুঁজি জমাতে শুরু করেন। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিলেন গ্রামের অবহেলিত নারী ও শিশুদেরকে এ কাজে সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী করবেন তিনি। অবশেষে বেছে নিলেন হোসেনপুর উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামকে। ওই গ্রামের বেশির ভাগ নারী ও শিশুরা অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন কাটাত এক সময়। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া দূরের কথা দু’মুঠো ভাত মুখে তুলে দেয়াই ছিল কষ্টের ব্যাপার। এসব দরিদ্র ও অবহেলিত নারীদেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন শাড়ি নকশার কারখানা। সেখানে শাড়িতে সুই, সুতা ও পুঁতি বসিয়ে বিয়ের শাড়ি ও লেহেঙ্গায় হাতের কাজ করা হয়। তার কারখানায় বর্তমানে এক শ’ থেকে দেড় শ’ লোক কাজ করেন। এছাড়াও কারখানার পাশাপাশি ওই সব মহিলারা বাড়িতে পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়েও কাজ করে থাকেন। বর্তমানে তার অধীনে প্রায় তিন শ’ নারী ও শিশুশ্রমিক কাজ করছেন। তার কারখানায় উৎপাদিত শাড়ি, বিয়ের শাড়ি ও লেহেঙ্গা ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের নামীদামি মার্কেটে সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শাড়ির পাইকাররা ছুটে আসেন তার কারখানায়। সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহ করেন।
নিখুঁত কাজ ও কারুকার্যের জন্য তার শাড়ির ব্যাপক চাহিদা। এই কারখানায় কাজ করে মহিলাদের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ছেলেমেয়েদেরকে ভালো স্কুল কলেজে পড়াচ্ছেন। সংসারে বিনোদনের জন্য টিভি ও ফ্রিজ রয়েছে সবার সংসারে। আর্থিক দৈন্যতা দূর হয়ে প্রত্যেকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি।
কারখানা শ্রমিক রহিমা, খুর্শেদাসহ অনেকেই বলেন, শহীদুল্লাহর কারখানায় কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছি। ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুল-কলেজে পড়াচ্ছি।
সফল উদ্যোক্তা শহীদুল্লাহ জানান, কঠোর পরিশ্রম করে ভ্যানচালকের সহকারী থেকে আজ আমি কারখানার মালিক হতে পেরেছি। অবহেলিত নারী ও শিশুরা যাতে কর্ম করে জীবন-জীবিকা চালাতে পারে সে প্রচেষ্টায় আমি সফল হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে কারখানার পরিসর আরো বাড়াবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।