তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বিজেপির ২৩ বিধায়ক!

অন্য এক দিগন্ত | Jun 14, 2021 08:31 pm
শুভেন্দু অধিকারী

শুভেন্দু অধিকারী - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে খাতায়-কলমে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ৭৫। মুকুল রায় ইস্তফা দিলে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়াবে ৭৪। কিন্তু সোমবার রাজভবনে হাজির থাকলেন গেরুয়া শিবিরের ৫১ জন বিধায়ক। তার জেরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাকি ২৩ জন বিধায়ক কোথায় গেলেন? তাহলে কি তারা তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে আছেন?

সোমবার বিকেল চারটা নাগাদ রাজভবনে আসেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিল বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল। রাজভবনের বারান্দায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সাথে বৈঠক হয়। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করেন বিজেপির প্রতিনিধিরা। সবমিলিয়ে রাজ্যপালের সাথে দেখা করেন ৫১ জন বিজেপি বিধায়ক। তার আগে বিধানসভায় বৈঠকেও ২৩ জন বিধায়ক (মুকুলকে বাদ দিয়ে) অনুপস্থিত ছিলেন। তার জেরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

সূত্রের খবর, বিশেষত বিজেপি ছেড়ে মুকুল তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ভাঙনের চোরাস্রোত বইছে। কয়েকজন বিধায়ক ইতিমধ্যে বেসুরো গাইতে শুরু করেছেন। কয়েকজন মুকুল-ঘনিষ্ঠও তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে আছেন। মুকুলও নাকি চুপচাপ বসে নেই। তিনি আবার নাকি তৃণমূলে গিয়েই ফোন ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছেন। ফোন যাচ্ছে বিজেপি বিধায়কদের কাছে। ওই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে ২৩ জন বিধায়ক অনুপস্থিত থাকায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি বিজেপির ঘরে আরো ভাঙন ধরতে চলেছে? মুকুলকে পাশে বসিয়ে মমতা ব্যানার্জি যে ‘বিজেপি থেকে আরো লোক আসবে’ বলেছিলেন, সেটার ফলই কি এখন মালুম হচ্ছে?

তবে একাংশের আবার বক্তব্য, জেনেবুঝেই কম বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেছে বিজেপি। তাতে স্পষ্ট হবে যে কতজন বিধায়ক আদতে তাদের সঙ্গে আছেন। সেই যুক্তির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, বিজেপি যদি ‘দোদুল্যমান’ বিধায়কদের চিহ্নিত করারই চেষ্টা করে, তাহলে সেটা তো ঘরোয়াভাবেই করতে পারত? খামোখা রাজ্যপালের সাথে দেখা করে পুরো বিষয়টি জনসমক্ষে আনতে যাবে কেন? তাই ২৩ জন বিধায়ক কোন কারণে উপস্থিত থাকলেন, সেই উত্তরের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।


‘‌পশ্চিমবঙ্গে এই আইন কার্যকর করা হবে’‌, বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পর কড়া ধনখড়

বিধানসভায় কিছুক্ষণের বৈঠক। তারপর রাজপথে নামলেন বিজেপি বিধায়করা। হেঁটে গেলেন রাজভবনে। রাস্তাজুড়ে বিধায়করা হেঁটে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে চা–চক্রের পর নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগে রাজ্য সরকারকে আবার কড়া ভাষায় দুষলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আরো একবার প্রশ্ন তুললেন তিনি।

এদিন তিনি মনে করিয়ে দেন, অন্যান্য রাজ্যের মতো এই রাজ্যেও দলত্যাগ বিরোধী আইন বলবৎ রয়েছে। একইসাথে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে ফের একবার রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে পদক্ষেপ করার আবেদন জানান তিনি। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করেন বিজেপি বিধায়করা। তাদের অভিযোগ, একুশের নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে। এখানে একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় সামনে এসেছে তা হলো— বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ মোট ৫১ জন বিধায়ক এদিন রাজভবনে যান।
বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করার পর শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে রাজ্যপাল সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে রাজ্য সরকারকে খোঁচা দেন তিনি। সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‌নির্বাচন পরবর্তী রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তি হয়েছে। সেই জায়গাগুললোতে কেন মুখ্যমন্ত্রী গেলেন না? পশ্চিমবঙ্গ গণতন্ত্র নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। পশ্চিমবঙ্গে হিংসার তাণ্ডবনৃত্য চলছে। আমি রাজ্য প্রশাসনকে আবার বলছি, নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন। যা হচ্ছে, তা পৃথিবীর কোনো কোণায় হয় না।’‌

এরপর তিনি আরো সোচ্চার হন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সম্পর্ক যে সুমধুর নয়, তা একের পর টুইট পালটা টুইটেই স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই মুকুল রায় বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাতে জোর ধাক্কা লেগেছে গেরুয়া শিবিরে। এবার দল যে ভাঙনের মুখে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এই নিয়ে আজ রাজ্যপালকে নালিশ ঠুকেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল বলেন, ‘‌আমি জানতে পারলাম গত ১০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগই করা হয়নি। আমি আশ্বস্ত করছি, পশ্চিমবঙ্গে এই আইন কার্যকর করা হবে। আমি নিশ্চিত করব যাতে কার্যকর হয়।’‌

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us